এই ১৭ জানুয়ারিতেই ঘটেছিল পারফর্মিং আর্টের জগতে আর এক নক্ষত্রপতন!

একটি দিন, দুটি মৃত্যু। একটি তারিখ, দুটি ক্ষতি।

| Jan 17, 2022, 14:34 PM IST

চলে গেলেন বিরজু মহারাজ। শূন্য হয়ে গেল ভারতীয় নৃত্যসঙ্গীতের বিশ্ব। এর আগেও এভাবেই এই দিনেই আরও একবার বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় নন্দনের আবহ।

1/9

প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি কত্থকশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। ৮৩ বছর বয়সে জীবনাবসান হল এই কিংবদন্তী শিল্পীর। গুগলে তাঁর মৃত্যুদিন হিসেবে লেখা থাকল-- ১৭ জানুয়ারি। খুবই স্বাভাবিক, কেননা,  রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১২টা ১৫ মিনিটে দিল্লির বাড়িতে  হৃদরোগে আক্রান্ত হন বিরজু মহারাজ। সে তো ১৭ জানুয়ারিই। ফলত, এই ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় ধ্রুপদী পারফর্মিং আর্টের জগতে এক বেদনাবহ দিনের সাক্ষী হয়েই থাকল।

2/9

ভারতের সঙ্গীতের জগতে প্রথম মহিলা সুপারস্টার

ইতিহাস বলছে, ঠিক এই ১৭ জানুয়ারিতেই ভারতীয় ধ্রুপদী পারফর্মিং আর্টের জগতে আর এক নক্ষত্রপতনের ঘটনা ঘটেছল। এ দিনই চলে গিয়েছিলেন গওহর জান। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের এই ১৭ জানুয়ারি মাত্র ৫৭ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।

3/9

শাস্ত্রীয় সংগীতের নক্ষত্র

গওহর জান ছিলেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের এক নক্ষত্র। গজল, দাদরা ও ঠুমরি গোত্রের গানের এক বিরল শিল্পী। বলতে গেলে ভারতের সঙ্গীতের জগতে প্রথম মহিলা সুপারস্টার তিনিই। তিনিই প্রথম ভারতীয় শিল্পী যাঁর গান গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ড করে।

4/9

সত্যজিতের সঙ্গে

বিরজু মহারাজ কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। কয়েকদিন আগেই তাঁর ডায়ালিসিস হয় ৷ রবিবার রাতে হঠাৎই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আর তার পরই মৃত্য আসে। ১৯৩৮ সালে লখনউতে জন্ম পণ্ডিত বিরজু মহারাজের। প্রকৃত নাম পণ্ডিত বৃজমোহন মিশ্র। ১৯৮৩ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করে ভারত সরকার। নাচ, তবলা এবং কণ্ঠসঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন বিরজু মহারাজ। ছবিও আঁকতে পারতেন। একাধিক ছবিতে কোরিওগ্রাফি করেছেন। উল্লেখযোগ্য, সত্যজিৎ রায়ের 'শতরঞ্জ কি খিলাড়ি'-র কোরিওগ্রাফি। 

5/9

অপূরণীয় ক্ষতি

শোনা যায়, রবিশঙ্কর তাঁর নাচে মুগ্ধ ছিলেন। শুধু রবিশঙ্কর কেন, অনেকেই বিরজু মহারাজের শিল্পে মুগ্ধ ছিলেন। এই সময়ের অনেক শিল্পীও পণ্ডিতজির বিহনে নিজেদের অনাথ মনে করছেন। ভোজপুরী লোকসঙ্গীত শিল্পী মালিনী অবস্থী একটি ট্যুইটে লিখেছেন, ''আজ ভারতীয় সঙ্গীতের লয় থেমে গেল। সুর মৌন হয়ে গেল। ভাব শূন্য হয়ে গেল। বিরজু মহারাজ আর নেই। ... ...এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।''   

6/9

বারাণসী থেকে কলকাতা

এই অপূরণীয় ক্ষতিই ঘটেছিল ১৯৩০ সালে। গওহর জানের জন্ম ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন। গওহর জানের জন্মের সময়ে নাম ছিল অ্যান্জেলিনা ইওয়ার্ড। জন্মসূত্রে গওহর জান খ্রিস্টান,পরে তিনি ও তাঁর মা বারাণসীতে অবস্থান কালে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মায়ের নাম ভিক্টোরিয়া ইওয়ার্ড হয় মালকা জান। মা মালকা জানও ছোটবেলা থেকেই হিন্দুস্থানী গান, কত্থক, ভারতীয় ধ্রুপদী শিল্পকলায় শিক্ষিত ছিলেন। তিনি কিছুদিন বারাণসী অবস্থানের পরে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে চলে আসেন কলকাতায়। তখন মেটিয়াবুরুজে বাস করতেন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ। তাঁরই সভাশিল্পী হিসাবে ৩ বছর কাটান। 

7/9

তালিম শুরু

পরে নিজে কলকাতা চিৎপুর অঞ্চলে নাখোদা মসজিদের পাশে একটি বাড়ি কেনেন। আর এখানেই ছোট গওহরের সংগীত, নৃত্য ও ভাষাশিক্ষার শুরু। মায়ের শিক্ষার গুণ তো ছিলই। সঙ্গে বহু বিখ্যাত ওস্তাদের (যেমন পাতিয়ালা ঘরানার কালু খান, আলি বক্স জার্নেল, কিংবদন্তি কত্থকশিল্পী বৃন্দদিন মহারাজ, ধ্রুপদ শ্রীজনবাঈ, কীর্তনীয়া চরণদাসের) কাছে তালিম পান তিনি। এবং অচিরেই নৃত্য ও সঙ্গীত পটিয়সী হয়ে ওঠেন ও খ্যাতি অর্জন করেন। 

8/9

পঞ্চম জর্জের সম্মানে

কিশোরী গওহর জানের প্রথম অনুষ্ঠান ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বিহারের দ্বারভাঙা মহারাজের আমন্ত্রণে। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি হয়ে গেলেন রাজার সভাশিল্পী। পরে চলে আসেন কলকাতায়। নিজেই স্বাধীন ভাবে অনুষ্ঠান করতে থাকেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার অনুষ্ঠানে "ফার্স্ট ড্যানসিং গার্ল" হিসাবে পরিচিতি পান। এরপর দেশের বিভিন্ন শহরে মেহফিল করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরাজ পঞ্চম জর্জের সম্মানে দিল্লির দরবারে এলাহাবাদের জানকী বাঈয়ের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। রাজা পঞ্চম জর্জ খুশি হয়ে এক হাজার গিনি উপহার দিয়েছিলেন দুজনকেই।

9/9

কলের গান মানেই গওহর জান

কলের গান মানেই গওহর জান কথাটি সেসময় বহুল প্রচলিত ছিল। কেননা মার্কিন সঙ্গীতজ্ঞ ও রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ফ্রেড গেইসবার্গ ( ১৮৭৩-১৯৫১) এর তত্ত্বাবধানে গ্রামোফোন কোম্পানি গওহরের গাওয়া খেয়াল (রাগ - যোগিয়া, উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত ঘরানার ভৈরব ঠাটের অন্তর্গত ) রেকর্ড করলেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই নভেম্বর প্রথম কোন ভারতীয় শিল্পীর গান ৭৮ আরপিএম রেকর্ড হিসাবে বের হয়।