King Charles III: কলকাতায় এসে বৃক্ষরোপণ করে গিয়েছেন প্রিন্স চার্লস, কোথায় জানেন?

King Charles III: সেই অনুষঙ্গে সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করছেন ডানলপের সেই সময়ের শ্রমিক ও এলাকাবাসীরা। তাঁরা দেখেছিলেন প্রিন্স চার্লস হুডখোলা গাড়িতে ডানলপ এস্টেটে এলেন। নিজের হাতে গাছ লাগালেন। প্রিন্সকে দেখতে সেদিন কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ডানলপ কারখানায়।

Sep 11, 2022, 18:34 PM IST

বিধান সরকার: পূর্বসূরিরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পরের বছর তার জন্ম তাই ব্রিটিশ শাসিত ভারত দেখেননি প্রিন্স চার্লস। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার তিনি ভারতে এসেছেন। কখনো তাঁর মা ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে, কখনো তাঁর প্রথম স্ত্রী ডায়ানার সঙ্গে। কলকাতায় এসে হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানাতেও গিয়েছিলেন যুবরাজ চার্লস। মায়ের মৃত্যুর পরে যুবরাজ চার্লস ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন। সেই অনুষঙ্গে সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করছেন ডানলপের সেই সময়ের শ্রমিক ও এলাকাবাসীরা। তাঁরা দেখেছিলেন প্রিন্স চার্লস হুডখোলা গাড়িতে ডানলপ এস্টেটে এলেন। নিজের হাতে গাছ লাগালেন। প্রিন্সকে দেখতে সেদিন কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ডানলপ কারখানায়। তিল ধারনের জায়গা ছিল না রাস্তার দু'ধারে। জিটি রোড থেকে ডানলপের পশ্চিম দিক দিয়ে ডানলপ এস্টেটের ভিতরে ঢোকার রাস্তা সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল ডানলপ কারখানা চত্বর। মনে আছে, সেদিন শুধু প্রিন্স চার্লসকে দেখতে জনতার সে কী উন্মাদনা!

1/6

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে বসেছেন প্রিন্স চার্লস। তাই সেদিনের কথা বেশি করে মনে পড়ছে সেই সময়ে তরুণযুবা এখন বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া ডানলপের বাসিন্দাদের। 

2/6

সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা

এক সময়ে ডানলপে এরো টায়ার তৈরি হত। ১৯৩৬ সালে সাহাগঞ্জের ডানলপের পথচলা শুরু হয়। ১৯৩৯ এ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটিশশাসিত ভারতে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার উপর যুদ্ধ বিমানের টায়ার তৈরি করার দায়িত্ব পড়েছিল। ডানলপের শ্রমিকরা সেই কাজ খুব যত্ন করে করেছিলেন। বিমানের টায়ার তৈরিতে ডানলপের জুড়ি ছিল না। ১৯৭৮-৭৯ সাল প্রিন্স চার্লস তখন যুবক, তখনও ডানলপের স্বর্ণযুগ চলছে। ডানলপকে কেন্দ্র করে এলাকার অর্থনীতি তখন চাঙ্গা।

3/6

দেবদারু

ডানলপ কারখানার মেকানিকাল ফিটার ছিলেন নুরুল আমিন। তিনি এখন বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধ। চার্লস যেদিন ডানলপে এসেছিলেন সেদিনের কথা তাঁর স্পস্ট মনে আছে। কী উন্মাদনা সেদিন দেখেছিলেন তা এখনও ভুলতে পারেননি। নুরুল আমিন জানান, প্রিন্স চার্লস সেদিন একটি দেবদারু গাছ বসিয়েছিলেন নিজের হাতে। কারখানার মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনে। গাছ লাগানোর পরে লোহার তার দিয়ে সেটি ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। প্রিন্সের নামও লেখা ছিল তাতে। কিন্তু সেই গাছ পঞ্চাশ বছর পরে আর আছে কিনা, তা তাঁর জানা নেই। ২০১১ সালে ডানলপের ঝাঁপ বন্ধ হতেই অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে ভারতের প্রথম টায়ার তৈরির কারখানার ভবিষ্যৎ। কারখানা-চত্বর ঘন আগাছার জঙ্গলে ভরে গিয়েছে এখন। এক সময় যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এখন দিনের বেলাতেই সেখানে শিয়াল ঘুরে বেড়ায়। হাসপাতাল, শ্রমিক কোয়ার্টার ভেঙে গিয়েছে, বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বহু বড় বড় গাছ কেটে সাফ হয়ে গিয়েছে। কঙ্কালসার কারখানার শেড আর কিছু যন্ত্রাংশ যা ছিল, নিলামে উঠেছে তা-ও।

4/6

স্মৃতি রোমন্থন

ডানলপের প্রাক্তন আধিকারিক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। তিনি স্মৃতি হাতড়ে বলেছেন, 'প্রিন্স চার্লস সেদিন আমার ইউনিটেও এসেছিলেন। সেখানে এক শ্রমিককে দেখিয়ে তিনি বলেন, ইনি কতদিন এখানে কাজ করছেন? আমি ওই নির্দিষ্ট শ্রমিককে জিগ্যেস করে জানলাম, তিনি ৩৫ বছর কাজ করছেন। তখন প্রিন্স হেসে বললেন, তা হলে তো ওঁকে সোনার ঘড়ি দিতে হয়! প্রিন্সের তখন ৩১ বছর বয়স। অবিবাহিত ছিলেন। তাঁকে খুবই সিম্পল লেগেছিল। সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে তিনি নিজের মতো করে ঘুরছিলেন। তবে আজকে সেই গাছটির কী অবস্থা, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

5/6

বন্ধদ্বার কারখানা

স্থানীয় ব্যবসায়ী মহম্মদ একলাখ বলেন, তখন আমার বয়স দশ-বারো হবে। মনে আছে সেই দিনটি। রমরমা বাজার ছিল ডানলপের। নাগেশ্বর সাউ নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রিন্স চার্লস এসে গাছ পুঁতেছিলেন। তারপর তিনি কারখানার কম্পাউন্ড ঘুরে দেখেন। সাহেবকে দেখতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন খুবই ভালো অবস্থা ছিল ডানলপের। এখন তো কারখানা বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

6/6

পরিত্যক্ত

সাকির আলি নামে ডানলপের প্রাক্তন এক শ্রমিক বলেন, চার্লসকে দেখতে সেদিন সাহাগঞ্জের সবাই গিয়েছিলাম। পরদিন কোম্পানি থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারখানা তখনও ডানলপের নিজেদের ছিল। পরে গোয়েঙ্কা, ছাবারিয়া হয়ে রুইয়াদের হাতবদল হয়। আর এখন তো কারখানাটাই উঠে গিয়েছে।