মোদীর বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ আদালত বান্ধব রামচন্দ্রনের

গুজরাট সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সিট-এর তরফে আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই গোধরা পরবর্তী দাঙ্গাপর্বের গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যাকাণ্ডের সিট-রিপোর্ট জাকিয়া জাফরির হাতে তুলে দিল আমদাবাদ মেট্রোপলিটন আদালত। মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ মোট ৫৮ জন অভিযুক্তকেই ক্লিনচিট দেওয়া এই রিপোর্ট নিয়ে আগামী ১০ মে শুনানি হবে আদালতে।

Updated By: May 7, 2012, 01:47 PM IST

গুজরাট সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সিট-এর তরফে আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই গোধরা পরবর্তী দাঙ্গাপর্বের গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যাকাণ্ডের সিট-রিপোর্ট জাকিয়া জাফরির হাতে তুলে দিল আমদাবাদ মেট্রোপলিটন আদালত। আর সেই সঙ্গেই শুরু হল নতুন বিতর্ক।
মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ মোট ৫৮ জন অভিযুক্তকেই ক্লিনচিট দেওয়া এই রিপোর্ট নিয়ে আগামী ১০ মে শুনানি হবে আদালতে। কিন্তু তার আগেই সিট-রিপোর্ট সংযুক্ত সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত 'আদালত বান্ধব' রাজু রামচন্দ্রনের নোট নতুন করে গুলবার্গ কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। রাজু রামচন্দ্রনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ২০০২-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি দাঙ্গায় মদত দানের অভিযোগে ১৫৩এ(১), ১৫৩বি(১), ১৬৬, ৫০৫(২)-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় ফৌজদারি মামলা রুজু করা যেতে পারে।
২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় আমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যায় নিহত হন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি-সহ ৬৯ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে গুজরাত-দাঙ্গার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। কিন্তু তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে `সিট`-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও রায় দেয়নি শীর্ষ আদালত। `আদালত বান্ধব` রাজু রামচন্দ্রনকে দিয়ে সিট-এর রিপোর্ট পর্যালোচনা করানোর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডি কে জৈনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমদাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপর ছেড়ে দেয়।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত `সিট`-এর তরফে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এস ভাটের কাছে সিল-বন্ধ খামে গুলবার্গ গণহত্যা মামলার `ক্লোজার রিপোর্ট` জমা দেওয়া হয়। ৯ এপ্রিল শুনানির সময় গুলবার্গ গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট এবং আনুষঙ্গিক নথিপত্র কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আপত্তি জানিয়েছিল সিট। ১০ এপ্রিল সিল-বন্দি রিপোর্ট খুলে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম বি ভাট জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচণা দেওয়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ উল্লিখিত হয়নি সিট-রিপোর্টে। অভিযুক্ত অন্য ৫৭ জন রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধেও প্রমাণ সংগ্রহে আপারগতার কথা স্বীকার করেছে সিট।

ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদমাধ্যমে সিট-রিপপোর্টে গুলবার্গ গণহত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নরেন্দ্র মোদীকে রেহাই দেওয়ার কথা ফাঁস হওয়ার পরই সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ এবং মুকুল সিনহা মেট্রোপলিটন আদালতে দু`টি পৃথক আবেদনপত্র পেশ করে সিট-রিপোর্টের কপি চেয়েছিলেন। সেই আবেদন খারিজ করে দিলেও নিহত কংগ্রেস নেতার স্ত্রী`র সিট-রিপোর্টের প্রতিলিপি পাওয়ার দাবি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করে আদালত। আজ জাকিয়া জাফরির সেই দাবি মেনে তাঁর আইনজীবীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ২৫,০০০ পাতার রিপোর্টের প্রতিলিপি ও আনুষঙ্গিক নথিপত্র। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সিট-রিপোর্ট সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনতে হবে আমদাবাদ আদালতকে। তারপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত সিট-এর এই রিপোর্ট গ্রহণ করে মামলাটি গুটিয়ে ফেলবে কি না, সে নিয়ে রায় দেবে। রায় বিপক্ষে গেল উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে জাকিয়ার। আর সেক্ষেত্রে তাঁর হাতিয়ার হতে পারে রিপোর্টের সঙ্গে উল্লিখিত আদালত-বান্ধব রাজু রামচন্দ্রনের মন্তব্য। সিট-ক্লিনচিট দিলেও রাজু জানিয়েছেন, গুলবার্গ কাণ্ডে মোদীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

.