ভারতীয় হিসাবে আপনি কত নম্বর নাগরিক?
ওয়েব ডেস্ক: আচ্ছা আপনার নাগরিক নম্বর কত? না, না, আধার বা ভোটার আইডির নম্বর জানতে চাইছি না, জানতে চাওয়া হচ্ছে কেবল আপনি ভারতের কত নম্বর নাগরিক সেটাই। ওহ্, এখনও পরিস্কার হল না! আচ্ছা, দেশের রাষ্ট্রপতি অর্থাৎ শ্রী রামনাথ কোবিন্দ যে এই মুহূর্তে ভারতের পয়লা নম্বর নাগরিক সেকথা তো আপনি নিশ্চই জানেন। ঠিক সেভাবেই জানতে চাইছি, যদি তিনি দেশের প্রথম নাগরিক হন, তাহলে নাগরিক হিসাবে আপনার ক্রমিক মান কত? আপনি হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমন বেআক্কেলে প্রশ্ন! তাহলে জেনে রাখুন, নাগরিক হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির মতোই আপনারও একটা ক্রমিক মান বা সংখ্যা আছে যা কখনই আধার বা ভোটার কার্ডে লেখা থাকে না, উল্লিখিত থাকে 'ভারতীয় পদমর্যাদা ক্রমে' (Order of Precedence of the Republic of India)। কিন্তু 'ভারতীয় পদমর্যাদা ক্রম' বিষয়টি ঠিক কী?
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পদমর্যাদা ক্রম হল একটি প্রোটোকল তালিকা বা গুরুত্বপূর্ণ পদের ক্রমবিন্যাস। এতে পদাধিকারি ও আধিকারিকদের তাঁদের পদ ও ভারত সরকারের কার্যালয় অনুসারে তালিকাভুক্ত করা থাকে। এই তালিকা ভারতের রাষ্ট্রপতিই নির্দিষ্ট করে দেন এবং এই তালিকাটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রোটোকল নির্দেশ করতেই ব্যবহৃত হয়। আইনি ক্ষেত্রে এই ক্রম তালিকার কোনও গুরুত্ব না থাকলেও এই তালিকা মোতাবেকই দেশের রাষ্ট্রপতি প্রথম নাগরিক হিসাবে পরিগণিত হন...আর আপনি ২৭ নম্বর। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ভাবছেন, কী করে হল? আপনার আর রাষ্ট্রপতির মাঝখানে বাকি ২৬ জন ব্যক্তিই বা আর কে কে? তাহলে, গোটা তালিকাটা দেখুন-
নাগরিক সংখ্যা ২- উপরাষ্ট্রপতি।
নাগরিক সংখ্যা ৩- প্রধানমন্ত্রী।
নাগরিক সংখ্যা ৪- ভারতের রাজ্যগুলির রাজ্যপাল (নিজ নিজ রাজ্যের মধ্যে)।
নাগরিক সংখ্যা ৫- প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।
নাগরিক সংখ্যা ৫ক- উপপ্রধানমন্ত্রী।
নাগরিক সংখ্যা ৬-ভারতের প্রধান বিচারপতি, লোকসভার অধ্যক্ষ।
নাগরিক সংখ্যা ৭- ভারত সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী (নিজ নিজ রাজ্যের মধ্যে), নীতি আয়োগের (সাবেক যোজনা কমিশন) ডেপুটি চেয়ারম্যান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী,রাজ্যসভা ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
নাগরিক সংখ্যা ৭ক- ভারতরত্ন প্রাপক।
নাগরিক সংখ্যা ৮- ভারতে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের হাই কমিশনারগণ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (নিজ রাজের বাইরে), রাজ্যপাল ও লেফট্যানেন্ট-গভর্নর (নিজ রাজ্যের বাইরে)।
নাগরিক সংখ্যা ৯- ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ।
নাগরিক সংখ্যা ৯ক- চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন,মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল।
নাগরিক সংখ্যা ১০- উপাধ্যক্ষ, রাজ্যসভা, রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীগণ, লোকসভার উপাধ্যক্ষ, নীতি আয়োগের (সাবেক যোজনা কমিশন) সদস্যগণ, ভারত সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রীগণ।
নাগরিক সংখ্যা ১১- লেফট্যানেন্ট-গভর্নরগণ (নিজ নিজ অঞ্চলের মধ্যে), ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, ক্যাবিনেট সচিব।
নাগরিক সংখ্যা ১২- পূর্ণ জেনারেল বা সমপদমর্যাদার চিফ অফ স্টাফগণ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ, ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার চিফ মার্শাল, ভারতীয় নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল।
নাগরিক সংখ্যা ১৩- ভারতে নিযুক্ত এনভয়েজ এক্সট্রাঅর্ডিনারি ও মিনিস্টার প্লেনিপোটেনশিয়ারি।
নাগরিক সংখ্যা ১৪- রাজ্যর মুখ্য বিচারপতি, রাজ্য বিধানসভার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ (নিজ নিজ রাজ্যের মধ্যে)।
নাগরিক সংখ্যা ১৫- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী (নিজ নিজ অঞ্চলে), রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী (নিজ নিজ রাজ্যে), দিল্লির চিফ একজিকিউটিভ কাউন্সিলর (নিজ অঞ্চলের মধ্যে), কেন্দ্রের উপমন্ত্রীগণ।
নাগরিক সংখ্যা ১৬- লেফট্যানেন্ট-জেনারেল সমপদমর্যাদার চিফ অফ স্টফ।
নাগরিক সংখ্যা ১৭- রাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতিগণ, চেয়ারম্যান-সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যাল, চেয়ারম্যান-সংখ্যালঘু কমিশন, চেয়ারম্যান-তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন।
নাগরিক সংখ্যা ১৮- রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী (নিজ রাজ্যের বাইরে), রাজ্য বিধানসভার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ (নিজ রাজ্যের বাইরে), চেয়ারম্যান-মনোপলিজ অ্যান্ড রেস্ট্রিকটিভ ট্রেড প্র্যাক্টিশেজ কমিশন, রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান ও উপাধ্যক্ষ (নিজ রাজ্যের মধ্যে), রাজ্যের রাষ্ট্রমন্ত্রী (নিজ রাজ্যের মধ্যে), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রী ও দিল্লির একজিকিউটিভ কাউন্সিলরগণ (নিজ অঞ্চলের মধ্যে), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার অধ্যক্ষ, দিল্লি মেট্রোপলিটান কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (নিজ অঞ্চলের মধ্যে)।
নাগরিক সংখ্যা ১৯- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের চিফ কমিশনার (যেখানে মন্ত্রিসভা নেই) (নিজ অঞ্চলের মধ্যে), রাজ্যের উপমন্ত্রী (নিজ রাজ্যের মধ্যে), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার উপাধ্যক্ষ, দিল্লি মেট্রোপলিটান কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান (নিজ অঞ্চলের মধ্যে)।
নাগরিক সংখ্যা ২০- রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান ও উপাধ্যক্ষ (নিজ রাজ্যের বাইরে), রাজ্যের রাষ্ট্রমন্ত্রী (নিজ রাজ্যের বাইরে)।
নাগরিক সংখ্যা ২১- সাংসদ।
নাগরিক সংখ্যা ২২- রাজ্যর উপমন্ত্রী (নিজ রাজ্যের বাইরে)।
নাগরিক সংখ্যা ২৩- আর্মি কম্যান্ডার/ভাইস চিফ অফ আর্মি স্টাফ বা সমমর্যাদার অন্যান্য পদাধিকারী, রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব (নিজ রাজ্যের মধ্যে), প্রিন্সিপ্যাল চিফ কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স (নিজ রাজ্যের মধ্যে), সিবিডিটি চেয়ারম্যান, ভাষাগত সংখ্যালঘু কমিশনার, তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনার, সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যগণ, তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের সদস্যগণ, জেনারেল বা সমপদমর্যাদার আধিকারিকগণ, ভারত সরকারের সচিবগণ (এক্স অফিসিও পদাধিকারীগণ সহ), সচিব, সংখ্যালঘু কমিশন, সচিব, তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন, রাষ্ট্রপতির সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিব, রাজ্যসভা ও লোকসভার সচিব, সলিসিটর জেনারেল, ভাইস-চেয়ারম্যান, সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল।
নাগরিক সংখ্যা ২৪- ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট-জেনারেল, ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল, ভারতীয় নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল।
নাগরিক সংখ্যা ২৫- রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল, ভারত সরকারের অতিরিক্ত সচিবগণ, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল, চিফ কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, চেয়ারম্যান- টারিফ কমিশন, চার্জ অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড অ্যাক্টিং হাইকমিশনার্স আ পিড অ্যান্ড আডিনটেরিম, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী (নিজ অঞ্চলের বাইরে), দিল্লির চিফ একজিকিউটিভ কাউন্সিলর (নিজ অঞ্চলের বাইরে), রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব (নিজ রাজ্যের বাইরে), ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভার উপাধ্যক্ষ, দিল্লি মেট্রোপলিটান কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (নিজ অঞ্চলের বাইরে), দিল্লি মেট্রোপলিটান কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান (নিজ অঞ্চলের বাইরে), নির্দেশক- সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, ডিরেক্টর জেনারেল- সীমা সুরক্ষা বাহিনী, ডিরেক্টর জেনারেল- সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ, নির্দেশক- ইনটলিজেন্স ব্যুরো, লেফট্যানেন্ট গভর্নরগণ (নিজ অঞ্চলের বাইরে), সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যালের সদস্যগণ, সদস্য- মনোপলিজ অ্যান্ড রেস্ট্রিক্টেড ট্রেড প্র্যাক্টিশেস কমিশন, সদস্য- ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রী ও দিল্লির একজিকিউটিভ কাউন্সিলরগণ (নিজ পদের বাইরে), প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার্স অফ দি আর্মড ফোর্সেস অফ দ্য রেঙ্ক অফ মেজর জেনারেল বা সমতুল্য পদ,
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার অধ্যক্ষগণ।
নাগরিক সংখ্যা ২৬- ভারত সরকারের যুগ্ম সচিব, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল, ভারতীয় নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল, ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল, ভারতীয় পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল, ইনকাম ট্যাক্স কমিশনার।
নাগরিক সংখ্যা ২৭-আপনি। অবশ্য যদি না আপনি উপরের এই ২৬টি পদভূক্ত না হয়ে থাকেন।
এখানেই হচ্ছে এই তালিকার আসল মজা, কোনও একদিন এক সামান্য চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদীও ছিলেন ২৭ নম্বর নাগরিক ক্রম সংখ্যায়, সেই তিনিই পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে উঠে আজ দেশের তৃতীয় নাগরিক। একই কথা বলা যায় ছেলেবেলায় খবরের কাগজ বিক্রি করা এক দরিদ্র বালকের ক্ষেত্রে। পরবর্তী কালে আগুনের ডানায় ভর করে তিনিই হলেন দেশের মিসাইল ম্যান তথা এপিজে আব্দুল কালাম এবং দেশের ভূতপূর্ব প্রথম নাগরিক। অর্থাত্, আপনার 'কর্ম'ই আপনাকে তুলে আনতে পারে নাগরিক মর্যাদার এই ক্রম তালিকায়। তবে এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আপনার 'কর্মে'র দ্বারা আপনার আরোহনের ইচ্ছা রয়েছে কি না। কিন্তু না থাকলেও কুছ পরোয়া নেই, একশো কুড়ি কোটির দেশে ২৭ নম্বরে থাকাটাও কি মুখের কথা নাকি হ্যাঁ...