সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করবে সিবিআই, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করবে সিবিআই। শুক্রবার এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছিল রাজ্য। গত এক বছরে সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে বারবার নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের। রাজ্য পুলিসের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইডি সক্রিয় হওয়ার পর পুলিসি তদন্তের ফাঁকফোকর আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসেছে। দেখে নেওয়া যাক কিছু বিশেষ মোড়-
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করবে সিবিআই। শুক্রবার এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছিল রাজ্য। গত এক বছরে সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে বারবার নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের। রাজ্য পুলিসের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইডি সক্রিয় হওয়ার পর পুলিসি তদন্তের ফাঁকফোকর আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসেছে। দেখে নেওয়া যাক কিছু বিশেষ মোড়-
২৩ এপ্রিল, ২০১৩
জম্মু-কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে গ্রেফতার হন সুদীপ্ত সেন।
২৪ এপ্রিল, ২০১৩
প্রকাশ্যে এল সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি। ছয়ই এপ্রিল দেওয়া চিঠিতে তিনি সিবিআই হস্তক্ষেপের আর্জি জানান। এই চিঠিতেই ফাঁস হয় তৃণমূলের দুই সাংসদ কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসুর নাম।
২৬ এপ্রিল, ২০১৩
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করে রাজ্য সরকার।
এরপর, শাসক-সারদা যোগাযোগের নানা তথ্য সামনে আসতে থাকে। মিডিয়ায় ফাঁস হয় শতাব্দী রায়, মদন মিত্রদের সারদা ঘনিষ্ঠতার কথা।
চাপ কাটাতে গত বছরের তেসরা মে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন,
কুনাল চোর ? মদন চোর ? টুম্পাই চোর ? আমি চোর ? মুকুল চোর ? আর তোমরা সব সাধু ?
সারদা-কাণ্ডে নাম জড়ানো দলের নেতাদের খোদ মুখ্যমন্ত্রী ক্লিনচিট দেওয়ায় পুলিসি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।
১৪ মে, ২০১৩
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সামিল হওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
১৯ জুন, ২০১৩
সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ করে আদালতের নজরদারিতে সিটের তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
১৮ জুলাই, ২০১৩
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার, সেবি, ইডি সহ সব পক্ষকে নোটিশ পাঠায় শীর্ষ আদালত।
৩ মে সারদা-কাণ্ডে কুণাল ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী ক্লিনচিট দিয়েছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বর মধ্য কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে সেই কুণাল ঘোষই প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিলেন সারদার জাল ছড়িয়েছে শাসকদলের গভীরে।
সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানান তিনি।
২৩ নভেম্বর, ২০১৩
মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্লিনচিট পাওয়া কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করল বিধাননগর কমিশারেট।
গ্রেফতারের পর কুণাল ঘোষ ফেসবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারী, কেডি সিং-সহ ১২ জনের নাম লিখে বলেছিলেন, এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সারদা কারবারের এ টু জেড জানা যেতে পারে। গ্রেফতারির আশঙ্কায় আগেই একটি বিস্ফোরক ভিডিও রেকর্ডিং করেছিলেন কুণাল ঘোষ। সেই ভিডিওয়ে কুণাল ঘোষের জবানিতে উঠে আসে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম। কুনাল ঘোষ ছাড়া শাসকদলের কোনও নেতাকেই জেরা করেনি পুলিস। সিট গঠনের এক বছর পরও রয়ে যায় নানা প্রশ্ন।
সারদা কেলেঙ্কারির নেপথ্যে কারা। সিট কেন এখনও তা জানাতে পারল না?
কুণাল ঘোষকে গোপন জবানবন্দি দিতে বাধা দেওয়া হল কেন?
এক বছর হয়ে গেলেও কুণাল ঘোষকে কেন এখনও ডেকে পাঠাল না শ্যামল সেন কমিশন?
সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে নাম থাকা সকলকে কেন জেরা করল না পুলিস?
তদন্তে ইডি-র সঙ্গে অসহযোগিতা করা হল কেন? নথি পেতে কেন ইডি-কে যেতে হল আদালতে?
ইডি গ্রেফতার করলেও এক বছর ধরে কেন সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালী সেন ও ছেলে শুভজিত সেনকে ধরার চেষ্টা করল না সিট?
আমজনতার মনে উঁকি দেওয়া এইসব প্রশ্ন যে মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণেও তার প্রমাণ মিলেছে। সিবিআই তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে একাধিকবার সিটের তদন্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে,
সারদা-কাণ্ডের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকে নজর না দিয়ে ছোটখাটো বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এতবড় বিষয়ে তদন্তে ইচ্ছাকৃত গড়িমসি করা হচ্ছে।
আমানতকারীদের থেকে তোলা সারদার টাকা কোথায় গেল?
সারদা কেলেঙ্কারিতে কারা লাভবান হয়েছেন তা জানতে আদৌ কি কোনও তদন্ত হয়েছে?
সিবিআই তদন্ত আটকাতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। বিচারপতিরা সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছেন, সিবিআই তদন্তে কেন সরকারের এত আপত্তি? সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী ও ছেলেকে ইডি-র জেরায় উঠে এসেছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী, ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নাম। ইডি মাঠে নামার পর পুলিসি তদন্তের ফাঁকফোকর আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসেছে।
ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তে আপত্তি নেই বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে ওড়িশা, ত্রিপুরা ও অসম । ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা রাজি হলেও সারদা মামলায় সিবিআই তদন্তে সায় নেই এ রাজ্যের। তাঁর আর্জি, পশ্চিমবঙ্গে সারদা মামলায় তদন্তভার থাকুক সিটের হাতেই। সারদা মামলা সিবিআইয়ের হাতে যায় কিনা আজই তার উত্তর মিলবে। এই মামলায় রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট।