মতামত: মোদীর 'শিশুপাল' বধ

ক্ষমতায় আসার পর মোদী নিয়মের বাইরে গিয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন। যথেষ্ট কথা তখন বিরোধীরাই শুনিয়েছিলেন। কী হয়েছিল? পুরোনো ঘটনা মনে করুন একবার!

Updated By: Mar 4, 2019, 11:56 AM IST
মতামত: মোদীর 'শিশুপাল' বধ

সব্যসাচী চক্রবর্তী

“তখন ভগবান মধুসূদন চক্র দ্বারা শিশুপালের দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করলেন, বজ্রাহত পর্বতের ন্যায় মহাবাহু শিশুপাল ভূপতিত হলেন।...বিনা মেঘে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হল, বসুন্ধরা কেঁপে উঠলেন, রাজারা কৃষ্ণকে দেখতে লাগলেন কিন্তু তাঁদের বাকস্ফূর্তি হল না। কেউ ক্রোধে হস্তপেষণ ও ওষ্ঠ দংশন করলেন, কেউ নির্জন স্থানে গিয়ে কৃষ্ণের প্রশংসা করলেন, কেউ মধ্যস্থ হয়ে রইলেন...”

মহাভারত, সভাপর্ব- রাজশেখর বসু

‘আপনার পুত্রের একশত অপরাধ ক্ষমা করিব’, কৃষ্ণ শিশুপালের মা’কে কথা দিয়েছিলেন। অপরাধের একশো এক হওয়া মাত্রই কেটেছিলেন শিশুপালের গলা।

ঠিক এই ভাবেই, ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাঁচ বছরই বলা চলে, পাকিস্তানের অসংখ্য উত্‍পাত সহ্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তবুও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান চেয়ে এসেছিলেন, যুদ্ধ-বৈরিতার চেয়েও জোর দিয়েছিলেন দুই দেশের শিক্ষা, উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণে।

২০১৪-র রিপোর্ট খতিয়ে দেখুন, ইসলামাবাদও চাইছে, মোদীই প্রধানমন্ত্রী হন, কারণ তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে পারবেন। “Pakistan 'backs Narendra Modi' as India's next prime minister”. ক্ষমতায় আসার পর মোদী নিয়মের বাইরে গিয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন। যথেষ্ট কথা তখন বিরোধীরাই শুনিয়েছিলেন। কী হয়েছিল? পুরোনো ঘটনা মনে করুন একবার!

মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সাংবাদিক বরখা দৎ তাঁর বই, This Unquiet Land — Stories from India’s Fault Lines-এ প্রায় অভিযোগের সুরেই বলেছিলেন, ২০১৪ সার্ক সামিটে নাকি মোদী, শরিফের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক গোপন বৈঠক করেন। দু’জনের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আর এঁদের মধ্যে “covert bridge” হিসেবে কাজ করেন শিল্পপতি সজ্জন জিন্দল। বন্ধুত্বের নমুনাও দেখেছি আমরা। প্রোটোকল ভেঙে আফগানিস্তান যাওয়ার পথে লাহোরে নেমেছিলেন মোদী। স্রেফ শরিফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে।তার আগে পাকিস্তানে প্রথম মোদী যান, শরিফের নাতনির বিয়েতে। অথচ ২০১৪-র জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে দিয়েছিল পড়শি দেশ।  অক্টোবরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পাকিস্তানকে অনুরোধ করতে বাধ্য হন, ভাই সিজফায়ার বলে একটা বিষয় আছে। থামো..! থামেনি পাকিস্তান। তারপরেও বন্ধুত্বের হাত সরাননি মোদী। ফল?

‘Congress slams PM Narendra Modi, wonders if he will fight next election in Pakistan’- 2016, 25 Sep

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করছেন মোদী। অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেসই। কারণ? তার আগে কোঝিকোড়ে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, দারিদ্র আর বেকারত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান, ভারতের বিরুদ্ধে নয়।

কেন পাকিস্তানকে উন্নয়নের পাঠ পড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী? তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেসের মণীষ তিওয়ারি। তুমুল সমালোচনা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চেয়েছিলেন দুই দেশের যুদ্ধ হোক। হ্যা। যুদ্ধ চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন যুদ্ধ হোক, বেকারত্ব, দারিদ্র, অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে। অশিক্ষার বিরুদ্ধে। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন, কোন দেশ এই যুদ্ধে জেতে, তা নিয়ে। এই চ্যালেঞ্জের ফল? বিরোধীদের বিদ্রুপ, সমালোচনা আর পাকিস্তানের লাগাতার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন। সঙ্গে কাশ্মীরের বেড়ে চলা উত্তেজনা। প্যালেট গান বিতর্ক। ২০১৭ সালেই সরকার হিসেব দিচ্ছে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পরিমাণ ২৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে পাকিস্তান।

শিশুপালের একশো অপরাধের মতো চুপ ছিল সরকার। একশো এক অপরাধ, পুলওয়ামা হামলা। প্রত্যাঘাত প্রত্যাশিত। ক্ষমারও সীমা থাকে।

“যুদ্ধ না করে কেউ অমর হয়েছে, এমন আমরা শুনিনি”। 

- মহাভারত, সভাপর্ব, রাজশেখর বসু

জরাসন্ধ পর্বে এমনতর কথা অর্জুনকে বলেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভারতের বন্ধুতাকে যখন পাকিস্তান আবারও দুর্বলতাই ভেবে নিচ্ছিল, তখন তো এই যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়াই শ্রেয়! কার্গিল যুদ্ধ মনে রেখেছে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে না হয় মনে থেকে যান নরেন্দ্র মোদী!

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিরোধীরা এই দাবি গত পাঁচ বছর ধরে করে আসছে। আজ যখন ব্যবস্থা নেওয়ার পথে ভারত, তখন কেন নির্বাচনের বেড়াল দেখিয়ে হইচই? কেন পড়শি দেশের হাতে নিজেদের ভাঙনদশা তুলে দিচ্ছে বিরোধীরা? কেন রাহুল গান্ধীর টুইট রিটুইট করতে পারছে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের টুইটার হ্যান্ডেল? তাহলে কি দেশের আগে রাজনীতি? মুখে বলছেন পাশে আছি, কিন্তু পেছনে রাজনৈতিক খামচি!

কিন্তু সত্যি এটাই, মোদীর আমলের ভারত অন্যরকম। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় গুডবয় সেজে থাকা ভারত যে প্রয়োজনে ভেরি ব্যাড হতেও পারে, সে ক্ষমতা তার আছে, তা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার।

“পাকিস্তান যো ভাষা সমঝতা হ্যায়, উসি ভাষা মে পাকিস্তানকো সমঝানে কা সময় আ গয়া হ্যায়”

- উরি

কারণ এটা নয়া ভারত। বাড়াবাড়ি করলে ঘরে ঢুকে পিটিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে এই দেশ।

বিশ্বের বড় দাদারা, তা আমেরিকা, ব্রিটেন হোক, চিন, রাশিয়া বা ফ্রান্স। প্রত্যেকেই অন্যান্য দেশের ওপর দাদাগিরি ফলিয়ে এসেছে। পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে এসেছে ভারতের সঙ্গে। আর ভারত, শান্তির মালা জপে চলেছে সাতচল্লিশ সাল থেকে। ভাই ভাই বলতে গিয়ে বাষট্টি সালে থাপ্পড় খেয়েছে চিনের কাছ থেকে। এখন যখন দেশ পাল্টা দেওয়ার রাস্তা হাঁটছে, তখন তা হয়ে গেল নির্বাচনী গিমিক? মারলে, মেরেছি কি না, তারও প্রমাণ দিতে হবে আজকাল?

উত্তরটা বরং আপনারাই খুঁজুন। ‘How’s the Josh’? বুক চাপড়ে নিজের কাছে উত্তর চান। পাকিস্তানরূপী শিশুপাল বধ অন্যায় কি না, নিজেই ভাবুন না!

জয় হিন্দ!

 

প্রতিবেদনটি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। Zee গোষ্ঠী তাদের মঞ্চে সমস্ত মতের প্রতিফলনের পক্ষে। তবে লেখকের মতামতের দায় প্রকাশকের নয়।    

 

.