মেরুকরণের রাজনীতি ছেড়ে উন্নয়নের কথাই বললেন মোদী

এক দশক আগের ভয়াবহ দাঙ্গার কলঙ্ক মোছার জন্য এবার তাঁর `সদ্ভাবনা মিশন` নিয়ে সেই সাম্প্রদায়িক হিংসার `এপিসেন্টার`-এ হাজির হলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী। শুক্রবার সকালে গোধরায় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর এক দিনের প্রতীকী অনশনস্থলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জড়ো করার সরকারি প্রয়াসে স্পষ্ট, ২০০২ দাঙ্গার স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের সমস্ত সম্প্রদায়ের নেতা হয়ে উঠতে মরিয়া `ছোটে সর্দার`।

Updated By: Jan 20, 2012, 01:57 PM IST

এক দশক আগের ভয়াবহ দাঙ্গার কলঙ্ক মোছার জন্য এবার তাঁর `সদ্ভাবনা মিশন` নিয়ে সেই সাম্প্রদায়িক হিংসার `এপিসেন্টার`-এ হাজির হলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী। শুক্রবার সকালে গোধরায় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর এক দিনের প্রতীকী অনশনস্থলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জড়ো করার সরকারি প্রয়াসে স্পষ্ট, ২০০২ দাঙ্গার স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের সমস্ত সম্প্রদায়ের নেতা হয়ে উঠতে মরিয়া `ছোটে সর্দার`। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য কংগ্রেসকে দুষলেও এদিন মোদির বক্তব্যে স্পষ্ট, বিজেপি`র `পিএম ইন ওয়েটিং` হিসেবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সার্থক উত্তরসূরী হয়ে ওঠাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
এদিন সকালে রাজধানী গান্ধীনগর থেকে গোধরা এসেই সোজা সদ্ভাবনা অনশনস্থলে চলে যান মোদী। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর শুরু করেন অনশন। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই এদিন অনশনে বসেন প্রায় ৮,০০০ মানুষ। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগ বিতর্ক নিয়ে গুজরাত হাইকোর্টের রায়ে জোরদার ধাক্কা খেয়েছেন মোদী। তাই হতোদ্যম বিজেপি সমর্থকদের চাঙ্গা করতে আশপাশের এলাকাগুলি থেকে গাড়ি করে সংগঠিতভাবে লোকজন আনার ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার পুলিস সুপার সচিন বাদশার দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর অনশন কমর্সূচির জন্য মোট ৫০,০০০ মানুষের সমাগম হয়েছে গোধরায়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই অঞ্চলে নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন। ত্রিস্তর `সিকিউরিটি রিং`-এ মোতায়েন করা হয় প্রায় ১৫,০০০ পুলিস। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা মোদীর অনশন কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করলে তাঁদের আটক করা হয়।
চলতি বছরের শেষেই গুজরাতে বিধানসভা ভোট। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে নরেন্দ্র মোদীর কার্যকলাপে স্পষ্ট, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকেই `পাখির চোখ` করেছেন তিনি। এখন `হিন্দুত্বের পোস্টারবয়` ইমেজ ঝেড়ে ফেলে, দেশ এবং গোটা বিশ্বজুড়ে গুজরাতের উন্নয়ন ও দক্ষ প্রশাসনকে মডেল হিসেবে তুলে ধরে নিজেকে দল ও এনডিএ জোটের অবিসংবাদী নেতা হিসেবে তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য। গত সেপ্টেম্বর মাসে আমদাবাদে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সদ্ভাবনা অনশনের সূচনা করে এই বার্তাই পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তার পর বিগত চার মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে প্রতীকী অনশন কমর্সূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেই হিসেবে গোধরা তাঁর ২৬তম অনশন-গন্তব্য।

কিন্তু রাজনৈতিক গুরুত্বের নিরিখে রাজ্যের অন্য জনপদ, শহরগুলির সঙ্গে গোধরার পার্থক্য অনেকটাই। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চমহল জেলার এই শহরেই সবরমতি এক্সপ্রেসের এস-৬ কামরায় আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার বলি হন ৫৯ জন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অযোধ্যা-ফেরত করসেবক। এর পরের ঘটনা ইতিহাস। কয়েক মাস ধরে চলা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে প্রায় ১৩০০ মানুষের মৃত্যুমিছিল আর তার জবাবে নরেন্দ্র মোদীর `নিউটনের তৃতীয় সূত্রের তত্ত্ব` ভারতীয় গণতন্ত্রের সাড়ে ছ`দশকের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
এদিন গোধরার অনশন মঞ্চ থেকে গুজরাতের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তথা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মোদী। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর উন্নয়নের কথা বলে তিনি যাতে গুজরাত দাঙ্গার কালো অধ্যায় রাজ্যবাসীর মন থেকে মুছে দিতে না পারেন, সে ব্যাপারে চেষ্টার কসুর করছে না প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। চার মাস আগে আমদাবাদের মতোই এদিনও মোদীর অনশনস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরে পাল্টা অনশনে বসেছেন, শঙ্করসিন বাঘেলা-সহ রাজ্যের প্রথম সারির কংগ্রেস নেতারা।

.