রামলালার পুজোর ফুল, সাধুদের খড়ম আসে মুসলিম বাড়ি থেকেই, অযোধ্যার অলি-গলিতে লুকিয়ে অন্য গল্প

মির বাঁকির হাতে মসজিদ তৈরির ইতিহাসের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর রামচরিতমানস লেখেন কবি তুলসীদাস। আওয়াধি হিন্দিতে লেখা রামচরিতমানসের সূত্র ধরে, আরও বেশি করে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রামকথা

Updated By: Nov 10, 2019, 07:24 AM IST
রামলালার পুজোর ফুল, সাধুদের খড়ম আসে মুসলিম বাড়ি থেকেই, অযোধ্যার অলি-গলিতে লুকিয়ে অন্য গল্প
ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: হিন্দুদের বিশ্বাস, এই অযোধ্যাতেই জন্ম হয়েছিল রামের। মুঘল আমলে, যেখানে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়, সেটাই রাম জন্মভূমি। ইতিহাসবিদদের একটা অংশ, আবার মনে করেন, রামের মন্দির ভেঙেই মসজিদ তৈরি হয়, এই দাবি, সময়ের সঙ্গে ক্রমশ জোরালো হয়। এর পিছনে ছিল ব্রিটিশের ভারত শাসনের কৌশল।

বাবরি মসজিদের দেওয়ালে লেখা থেকে জানা যায়, ১৫২৮ সালে, মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে, তাঁর সেনাপতি মির বাঁকি এই মসজিদ তৈরি করেন। যদিও অযোধ্যায় আরেকটা প্রচলিত বিশ্বাস ঔরঙ্গজেব মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করেন।

মির বাঁকির হাতে মসজিদ তৈরির ইতিহাসের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর রামচরিতমানস লেখেন কবি তুলসীদাস। আওয়াধি হিন্দিতে লেখা রামচরিতমানসের সূত্র ধরে, আরও বেশি করে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রামকথা। অযোধ্যা নগরী ভরে যায় রামের মন্দিরে। বহু মন্দিরই দাবি করে ‘ভগবানের’ জন্ম এখানেই। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীর নানা নথি বলছে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ থাকলেও, বাবরি মসজিদে নমাজ এবং পুজো শান্তিতেই হয়ে এসেছে। তাল কাটে কোম্পানির শাসনের শেষ লগ্নে।

অযোধ্যার বিতর্কিত এলাকায় প্রথম নথিবদ্ধ হিংসার ঘটনা ১৮৫৩ সালে। ১৮৫৯ সালে, ব্রিটিশ সরকার বেড়া দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের উপাসনার জায়গা আলাদা করে দেয়। হিন্দুরা মসজিদের বাইরে রাম চবুতরায় পুজো করেন আর মসজিদের ভিতরের অংশে মুসলিমরা পড়েন নমাজ।  স্বাধীনতার ঠিক পরেই ফের ছন্দপতন। ১৯৪৯-এর ডিসেম্বরে গোরক্ষনাথ মঠের মোহন্ত দ্বিগ্বিজয় নাথের উদ্যোগে, অযোধ্যায় শুরু হয় ন'দিনের অখণ্ড রামচরিতমানস পাঠ। পাঠ শেষে, ২২শে ডিসেম্বর রাতে বাবরি মসজিদের ভিতর রেখে আসা হয় রামলালার মূর্তি।

হিংসার আশঙ্কায় তত্‍কালীন জেলাশাসক, কে.কে. নায়ার, মসজিদ থেকে রামলালার মূর্তি সরাতে রাজি হননি। সরকারি নির্দেশে মসজিদে তালা পড়ে। বাইরের কারও, ঢোকার পথ না থাকলেও আদালতের নির্দেশে পুরোহিত পুজো শুরু করেন। পরে জনসঙ্ঘের টিকিটে সংসদে যান কে. কে. নায়ার। একের পর এক মামলায় রামের ভাগ্য চলে যায় আইনের হাতে। ২০০৩ সালে আদালতের নির্দেশে, বিতর্কিত জমিতে ফের খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়।

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়, অযোধ্যার বিতর্কিত জমির নীচে উত্তর ভারতীয় মন্দিরের নিদর্শন মিলেছে। মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে শেষ মুহূর্তে রদবদল করা হয় বলে পাল্টা অভিযোগও ওঠে। বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার আগে অবশ্য এএসআইয়ের এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ।

মন্দির-মসজিদ বিবাদের আঁচ গোটা দেশে পড়লেও অযোধ্যা-ফৈজাবাদের অলি-গলিতে লুকিয়ে আছে অন্য আরেক গল্প। যে খানে, রামলালার পুজোর ফুল, সাধুদের খড়ম আসে মুসলিম-বাড়ি থেকে। হোলির রঙে একই সঙ্গে মেতে ওঠে, দুই সম্প্রদায়। তিন দশক ধরে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দমবন্ধ হয়েও মন্দিরনগরীতে অন্তঃসলিলা হয়ে বয়ে যায় সনাতন ভারত।  

.