'কাসভ মশা, বন্দুক থাকলে আদালতেই গুলি করে মারতাম'
"আসামীর কাঠগড়ায় কাসভকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে-আতঙ্কে কাঁপতাম। মনে হত, হাতে একটা বন্দুক থাকলে তখনই গুলি করে জঙ্গিকে মেরে ফেলব। তবে কাসভ 'মশা'মাত্র।"
নিজস্ব প্রতিবেদন : এখনও চোখ বুজলে তাড়া করে আতঙ্ক। চোখের সামনে দেখতে পান একে-৪৭-এর গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। চারদিক ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ২৬/১১, এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মুম্বইনগরী। আজ ৯ বছর পরেও স্মৃতিতে একইরকম টাটকা সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলা।
২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী রেল টার্মিনাস, ওবেরয় ট্রিডেন্ট, তাজ প্যালেস, লিওপোল্ড ক্যাফে, নরিম্যান হাউস সহ ৮টি জায়গায় হামলা চালায় ১০ লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি। ভয়ঙ্কর সেই জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৬৪ জন। জখম হন তিনশোরও বেশি মানুষ। ছত্রপতি শিবাজী রেলস্টেশন থেকে ধরা পড়ে একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসভ। দীর্ঘ ৪ বছরের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০১২-র ২১ নভেম্বর ফাঁসি হয় কাসভের।
ছত্রপতি শিবাজী রেলস্টেশনেই চায়ের দোকান মহম্মদ তৌফিকের। সেদিন তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছিল হত্যালীলা। সেকথা মনে পড়লেই এখনও ভয়ে শিউরে ওঠেন তৌফিক। জঙ্গির গুলিতে নিহত-জখম মানুষের রক্তে যখন স্টেশন ভেসে যাচ্ছে, তখন তৌফিক নিজে হাতে বহু মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই হাড়হিম করা স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারেন না। শুধু কাসভের ফাঁসিতে তাই 'সন্তুষ্ট' হতেও পারেন না। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তৌফিক বলেন, "কাসভের ফাঁসিতে আমরা খুশি। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে বসে থাকা মুম্বই হামলার মূলচক্রী ধরা না পড়া পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট হতে পারব না।"
সেদিন ছত্রপতি শিবাজী রেলস্টেশনে কাসভের গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিল ৯ বছরের বালিকা দেবিকা। ডান পায়ে গুলি লেগেছিল তার। তারপর দীর্ঘদিন তাকে ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়। সেদিনের ৯ বছরের নাবাবালিকা দেবিকা এখন ১৭ বছরের কিশোরী। কাসভের বিচার চলাকালীন আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন ছোট্ট দেবিকা। এখনও তার মনে পড়ে, আসামীর কাঠগড়ায় কাসভকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে-আতঙ্কে কাঁপত সে। তাঁর মনে হত, হাতে একটা বন্দুক থাকলে তখনই গুলি করে জঙ্গিকে মেরে ফেলতে পারে সে। তবে দেবিকার মতে, কাসভ 'মশা'মাত্র। এই জঙ্গি হামলার পিছনে বড় মাথারা একদিন গ্রেফতার হবে বলেই আশা কিশোরী দেবিকার।
When I saw Kasab in the courtroom I was livid. I wished I had a gun in my hand, would have shot him there. Anyway Kasab was a mosquito, hope someday the big terrorists are brought to book: Devika,26/11 survivor and eyewitness pic.twitter.com/iuSfeR6tEu
— ANI (@ANI) November 26, 2017
সেদিনের হামলায় একসঙ্গে ৬ জন আত্মীয়কে হারিয়েছে রহিম আনসারি। দেবিকা-তৌফিকের মত আনসারিও চান অবিলম্বে ভারতের হাতে হাফিজ সইদকে তুলে দিক পাকিস্তান। এদিকে, তাত্পর্যপূর্ণভাবে দুদিন আগেই হাফিজ সইদকে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি দিয়ে পাক আদালত। মুক্তির পরই ফের নতুন করে ভারতের উদ্দেশে হামলারও হুমকি দিয়েছে এই জঙ্গিনেতা। চোখের জলে ভেজা ২৬/১১-এর স্মৃতি বিজড়িত দিনে এই ঘটনা যেন শোকগ্রস্থদের কাছে আরেকটা কষাঘাত।
আরও পড়ুন, "আল্লার পর সুষমা স্বরাজ" মত পাক নাগরিকের