Cow Smuggling: কালো টাকা সাদা করতে ভুয়ো লোন কারসাজি অনুব্রতর, ইডির চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য
Cow Smuggling: শুধুমাত্র মনোজ মণ্ডলই নয়, ব্যাঙ্কে কর্মরত নিজের এক বাল্য বন্ধু, এক ব্যসায়ীকে কোটি কোটি টাকা নগদে গিতেন। সেই টাকা তারা নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। পরে সেই টাকা অনুব্রত বা তার মেয়ের অ্যাকান্টে ট্রান্সফার করা হতো। সেই টাকাও অনুব্রত লোন হিসেবে দেখাতেন। এভাবেই কালোটাকা সাদা করতেন অনুব্রত
পিয়ালি মিত্র: গোরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। তাতেই উঠে আসছে বীরভূমের তৃণমূল নেতার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস। পাশাপাশি কালো টাকা কীভাবে অনুব্রত সাদা করেছেন তারও ফিরিস্তি দিয়েছে ইডি। লটারির টিকিট কিনে কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি সামনে এসেছে। এবার উঠে এল কীভাবে লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে কারসাজি করে কালো টাকা সাদা করেছেন অনুব্রত। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি, ভুয়ো লোন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা কালো থেকে সাদা করা হয়েছে। এর জন্য অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রির সাহায্য নিয়েছিলেন অনুব্রত। এমনটাই দাবি ইডির। সেই অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রির অপারেটার ছিলেন মনোজ মেহনত।
আরও পড়ুন-কবে গভীর নিম্নচাপ থেকে তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড় মোকা; অভিমুখ কোন দিকে, জানাল হাওয়া অফিস
অনুব্রতর বিরুদ্ধে ২০৪ পাতার চার্ডশিট দিয়েছে ইডি। সেখানে দাবি করা হচ্ছে গোরু পাচার থেকে বিপুল টাকা পেয়েছেন অনুব্রত। সেই টাকা থেকে ১০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন এই অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রির সাহায্যে। তদন্তকারী অফিসাররা বলছেন, যদি কোনও ব্যক্তির কাছে কালো টাকা থাকে তাহলে সেই টাকা যদি সাদা করতে চান তার অনেক পন্থার মধ্যে রয়েছে এই অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রি। অনেকে একে হাওয়ালাও বলে থাকেন। এক্ষেত্রে যেটা হয় তা হল যে ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করতে চাইছেন তিনি কাউকে নগদে টাকা দিয়ে দেন। সেই টাকা পেয়ে কোনও ব্যক্তি বা কোম্পানি তাদের অ্যাকাউন্টে তা ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে দেখিয়ে দেন। পরবর্তীতে সেই টাকাটাই ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়। অনুব্রতর ক্ষেত্রে সেই অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রি অপারেট হিসেবে কাজ করেছিলেন মনোজ মেহনত নামে এক ব্যক্তি। মনোজের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিয়েছে ইডি।
কে এই মনোজ মেহনত? জানা যাচ্ছে পেশায় সিএ মনোজের বাড়ি হাওড়ায়। তিনি আবার অনুব্রতর হিসেবরক্ষক মণীশ কোঠারির আত্মীয়। তদন্তকারী অফিসাররা যেটা জানতে পেরেছেন এই যে মনোজ অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করেছিলেন তার জন্য অনুব্রত মণ্ডল বিভিন্ন দফায় বাড়ির কাজের লোক, গাড়ির চালককে দিয়ে মনোজের কাছে টাকা পাঠিয়েছিলেন। মনোজ মেহনত তাঁর ৩টি কোম্পানির মাধ্যমে ২০১৯-২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫টিরও বেশি লেনদেনের মাধ্যমে অনুব্রত, সুকন্যা মণ্ডল, সাইগল হোসেনের কোম্পানিতে বিপুল টাকা পাঠান। ওই টাকার অঙ্ক ১০ কোটি টাকা। এর জন্য ২.৪ শতাংশ কমিশন নিতেন মনোজ মেহনত। ইডিকে দেওয়া বয়ানে মনোজ স্বীকার করেছেন, অনুব্রত মণ্ডল নগদে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। মণীশ কোঠারির কথা মতোই ওই অ্যাকোমোডেশন এন্ট্রি তিনি করেছেন।
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, শুধুমাত্র মনোজ মণ্ডলই নয়, ব্যাঙ্কে কর্মরত নিজের এক বাল্য বন্ধু, এক ব্যসায়ীকে কোটি কোটি টাকা নগদে গিতেন। সেই টাকা তারা নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। পরে সেই টাকা অনুব্রত বা তার মেয়ের অ্যাকান্টে ট্রান্সফার করা হতো। সেই টাকাও অনুব্রত লোন হিসেবে দেখাতেন। এভাবেই কালোটাকা সাদা করতেন অনুব্রত।
এদিকে, তিহাড় জেলে যাওয়ার পর গতকালই অনুব্রত প্রথমবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার সুয়োগ পেয়েছেন। গতকাল প্রায় পনেরো মিনিট তাদের সঙ্গে কথা হয়। তবে তা পুলিসের উপস্থিতিতে। সূত্রের খবর, বহুদিন পর শেষপর্যন্ত জেলে সাক্ষাত হওয়ার পর বাবা-মেয়ে দুজনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কথা হয় মিনিট পনের। অনুব্রত বারবার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি ইডির হাজিরা দিতে দিল্লি এলেন?
কয়েকদিন আগেই আদালতে যাওয়ার পথে আবেগপ্রবণ হয়ে অনুব্রত ইডি আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন, আমার মেয়েকেও গ্রেফতার করলেন। আপনাদের বিবেক বলে কি কিছু নেই? তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। গত মঙ্গলবার তিহাড় জেল থেকে অনুব্রতকে যখন আদালতে তোলা হয় তখন অনুব্রত সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'মেয়ের সঙ্গে দেখা হতে পারে।' যেদিন থেকে সুকন্যা গ্রেফতার হয়েছিলেন সেদিন থেকেই জোর ধাক্কা খেয়েছিলেন অনুব্রত। তখনই তিনি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁকে যেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আজ নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে বাবা-মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাত হয়।