কেন্দ্রের সমন্বয়ের বার্তায় ভরসা নেই জয়ললিতা-মোদীর

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে মনিপুর এবং অরুণাচলপ্রদেশের মত কিছু রাজ্যে সংগঠন বাড়াচ্ছে মাওবাদীরা। আজ নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে একথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

Updated By: Apr 16, 2012, 01:58 PM IST

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে মনিপুর এবং অরুণাচলপ্রদেশের মত কিছু রাজ্যে সংগঠন বাড়াচ্ছে মাওবাদীরা। আজ নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে একথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর দাবি,অসমেও একই কাজ করছে নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-এর কর্মীরা।
আজ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন সাম্প্রতিককালে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, মাওবাদী সন্ত্রাস এখনও কেন্দ্রের সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত বৈঠকে তাঁর দাবি, জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। তবে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে যা সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। পি চিদম্বরম মনে করেন, সন্ত্রাসবাদীরা রাজ্যের সীমানা বোঝে না। তারা যত্রতত্র হামলা চালায় যার ফলে প্রাণ হারাতে হয় সাধারণ মানুষ ও পুলিসকর্মীদের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিমত, মাওবাদী সন্ত্রাসদমনে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নর্থ ব্লকের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সমন্বয়ের অভাবকে সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রধান অন্তরায় বলেও চিহ্নিত করেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতা। এভাবেই তিনি আরও একবার বিএসএফ-এর ক্ষমতাবৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করলেন বলে অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্ষমতাবৃদ্ধির কেন্দ্রীয় প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আপত্তি তোলা হয়েছে তৃণমূলের তরফেও।

বৈঠকে মাওবাদী অধ্যুষিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও, ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরিবর্তে বৈঠকে অংশ নেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সূত্রে খবর, আগামী ৫ মে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার (এনসিটিসি) ইস্যুতে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনসিটিসি নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ১৬ এপ্রিল। কিন্তু এই বিতর্কিত ইস্যুটি নিয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারিত দিন ১৬ এপ্রিল থেকে পিছিয়ে ৫ মে করার দাবি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়েক সহ বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী। এনসিটিসি-র পাশাপাশি আইবির পারফরম্যান্স নিয়েও সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। কারণ সাম্প্রতিককালে আইবি রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে রাজ্যগুলির তরফে বারবারই অভিযোগ উঠেছে।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদকে আজও `সরকারের সামনে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ` বলে স্বীকার করে নেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আজ নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক তিনি দাবি করেন যে ২০১০-এর তুলনায় ২০১১ সালে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার উন্নতি হয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যাও কমেছে। তবু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন সিংয়ের অভিমত, বামপন্থী উগ্রপন্থা বা মাওবাদ দমনে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুর ২ টোয় মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনায় বসেন চিদম্বরম। দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী।

এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে এনসিটিসি নিয়ে রাজ্যগুলিকে আশ্বস্ত করা হলেও এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বক্তব্যের সঙ্গে একেবারেই সহমত নন বিভিন্ন অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা। এদিন প্রথম দফার বৈঠকের পর প্রকাশ্যেই জয়ললিতা জানান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আঁটোসাটো করার নামে রাজ্যগুলির অধিকারে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারে পদক্ষেপে সাংবিধান-বর্ণিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত আসতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এআইএডিএমকে সুপ্রিমো। তাঁর সরকারকে অন্ধকারে রেখে তামিলনাড়ুর উপকূলে ভারত-মার্কিন নৌ-মহড়া নিয়েও এদিন বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আম্মা। এক ধাপ এগিয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে নানা ইস্যুতে টানাপোড়েনের কথা তুলে ধরে বলেন জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ইউপিএ জোট।

.