অশান্ত অসম, রেল পরিষেবা স্বাভাবিকের পথে
উত্তরবঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে ছাড়তে শুরু করেছে অসমমুখী ট্রেনগুলি। বুধবার দুপুরে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৫ টি দূরপাল্লার ট্রেন অসম রওনা হয়। দুপুর তিনটেয় নিউ কোচবিহার থেকে ছাড়ে সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস।
উত্তরবঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে ছাড়তে শুরু করেছে অসমমুখী ট্রেনগুলি। বুধবার দুপুরে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৫ টি দূরপাল্লার ট্রেন অসম রওনা হয়। দুপুর তিনটেয় নিউ কোচবিহার থেকে ছাড়ে সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস। আলিপুরদুয়ার থেকে ছাড়ে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। নিউআলিপুর স্টেশন থেকে ছেড়েছে অওধ-অসম এক্সপ্রেস। হাসিমারা স্টেশন থেকে ছেড়েছে বিবেক এক্সপ্রেস। তবে এখনও নিউ কোচবিহার স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজধানী ও সরাইঘাট এক্সপ্রেস। ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে রয়েছে আলিপুর স্টেশনে। অসমের অশান্ত পরিস্থিতির জেরে গতকাল থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে দূরপাল্লার বহু ট্রেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে রেল পরিষেবা। এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। আটকে পড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে সাহায্য চান রেলমন্ত্রী। এরপরই রেললাইনের দখল নেয় সেনাবাহিনী।
অসমে সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অশান্ত এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফ্ল্যাগমার্চ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। নামানো হয়েছে ১৩ হাজার জওয়ানকে। টানা কয়েকদিনের সংঘর্ষের জেরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া। ৪২ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ধুবরি, চিরাং, বঙ্গাইগাঁও, উদলপুরি জেলাতে। বুধবার কিছুক্ষণের জন্য ধুবরিতে কার্ফু তোলা হলেও ৪ টি দেহ উদ্ধারের পর নতুন করে কার্ফু জারি করা হয়েছে। এদিকে অসমে লাগাতার হিংসার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বামফ্রন্ট। বুধবার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ অসমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে বিবৃতিতে বিমান বসু বলেছেন, অসম-বাংলা সীমানার এ রাজ্যের জেলাগুলিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিস ও আধা সেনা মোতায়েন করুক সরকার।
শুক্রবার থেকে বিক্ষিপ্ত হিংসায় অশান্ত অসম। সোমবার দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে ফকিরগঞ্জ, দোতোমা, সেরফানগুরি, নরবাড়ি, গোসাইগাঁও, মোকরাজান এবং তুলসিবাড়িতে বহু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ফলে ভয়ে এবং আতঙ্কে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া। কোকরাঝাড়ে আতঙ্কিত মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি ত্রাণ শিবিরে। চিরাং জেলায় বিভিন্ন স্কুলভবন এবং স্থানীয় ক্লাব ঘরই ঘরছাড়া মানুষদের ঠিকানা। মঙ্গলবার সকাল থেকে কোকরাঝাড় এবং চিরাং জেলায় নতুন করে হিংসা ছড়ায়। সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বঙ্গাইগাঁও জেলাতেও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোকরাঝাড়ে অনির্দিষ্টকালের কার্ফু জারি হয়েছে। সেইসঙ্গে দেখা মাত্র গুলি চালানোরও নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। চিরাং এবং ধুবরি জেলায় রাত্রিকালীন কার্ফু অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে জরুরী বৈঠকে বসেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তারপরই রাজ্যের দুই মন্ত্রী নীলমনি সেন এবং পৃথীবি মাঝিকে কোকরাঝাড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। অসমে হিংসা বেড়ে চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব আরকে সিংও জানিয়েছেন, অসমের উপর নজর রাখছে কেন্দ্র। পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী।
মঙ্গলবারও কোকরাঝাড়ের গোসাইগাঁওতে গুয়াহাটিগামী রাজধানী এক্সপ্রেসে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের ইঁটবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চারটি বগি। যার ফলে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে দুরপাল্লার ট্রেন। সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। মঙ্গলবার রাজ্যের হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান অসমের ডিজি জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী। প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে রাজ্য বিজেপিও।