জেলাশাসক অপহরণকাণ্ড: কেন্দুপাতার অর্থনীতি ঘিরে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ
সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের বিনিময়ে সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদীদের ছাড়তে নারাজ ছত্তিসগড় সরকার। একই সঙ্গে পণবন্দি জেলাশাসকের মুক্তি নিয়ে ছত্তিসগড় সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কেন্দুপাতার অর্থনীতি নিয়ে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ।
সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের বিনিময়ে সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদীদের ছাড়তে নারাজ ছত্তিসগড় সরকার। একই সঙ্গে পণবন্দি জেলাশাসকের মুক্তি নিয়ে ছত্তিসগড় সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কেন্দুপাতার অর্থনীতি নিয়ে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ। সূত্রে খবর, কেন্দুপাতার মরসুম শেষ হওয়ার আগে জেলাশাসকের সমস্যা না মিটলে আর্থিক দিক দিয়ে বহু কোটি টাকার ক্ষতি হবে মাওবাদীদের। তাই অপহরণ কাণ্ডে এখন মাওবাদীরাই চাপে পড়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বস্তুত, ছত্তিশগড়ে জঙ্গলের পারিপার্শিক গ্রামগুলির জীবনযাত্রা অনেকটাই কেন্দুপাতার উপর নির্ভরশীল। কেন্দুপাতার মরসুম প্রায় শেষের মুখে। আর এই মরসুমে কেন্দুপাতাকে কেন্দ্র করে বহু কোটি টাকার লেনদেন হয় ছত্তিসগড়ে। এবং সেই লেনদেনে গ্রামবাসী ও ঠিকাদার, উভয়ের কাছ থেকেই কমিশন নিয়ে বহু কোটি টাকা আয় হয় মাওবাদীদের। কিন্তু, জেলাশাসক অপহরণের পর থেকেই ছত্তিসগড়ের জঙ্গলে বন্ধ কেন্দুপাতা তোলার কাজ। কেন্দুপাতা শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে আর কোনও কাজও হবে না। এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকের সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে মাওবাদীদের চাপ দিচ্ছে ঠিকাদাররা। চাপ রয়েছে আদিবাসীদের পক্ষ থেকেও।
মাওবাদীরা চায়, জেলাশাসকের বিনিময়ে নিজেদের সাজাপ্রাপ্ত নেতানেত্রীদের কয়েকজনকে ছাড়িয়ে আনতে। মাওবাদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ১৭ জনের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই মাওবাদীদের শহুরে নেটওয়ার্ক দেখাশোনা করতেন। ফলে শহুরে নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতেই মাওবাদীরা ওই নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। যদিও, জেলা শাসকের বিনিময়ে কোনও সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদীকে ছাড়তে রাজি নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ছত্তিসগড় সরকার। এমনকী অন্ধ্রপ্রদেশের কোনও মাওবাদী নেতাকে না ছাড়ার বিষয়েও সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড়। তবে জেলাশাসকের সুস্থতার বিষয়টিও মাথায় রাখছে সরকার। অপহরণের পর থেকেই বস্তারের জঙ্গলে বন্ধ রয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। যদিও মাওবাদীদের গতিবিধিতে কড়া নজর রেখে চলেছে প্রশাসন।
পণবন্দি জেলাশাসককে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া স্নায়ুযুদ্ধে সরকার ও মাওবাদীদের কে কতটা জমি দখল করতে পারে, তা জানতে অপেক্ষা আরও কয়েক ঘণ্টার। বিশেষ সূত্রে খবর, চাপ বাড়ানোর প্রক্রিয়া জারি রয়েছে মাওবাদীদের তরফেও। মাওবাদীদের সঙ্গে কথা বলতে শনিবার টারমেটলার জঙ্গলে রওনা হয়েছেন মধ্যস্থতাকারী বিডি শর্মা ও হরগোপাল। এদিন সকালে রায়পুর থেকে হেলিকপ্টারে চিন্তলনাড় যান মধ্যস্থতাকারী হরগোপাল ও বিডি শর্মা। সেখান জঙ্গল-পথে থেকে টারমেটলা রওনা হয়েছেন তাঁরা। অপহরণের পর ৮ দিন হয়ে গেলেও সুকমা জেলাশাসক অপহরণ কাণ্ডের জট না খোলায় যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে ছত্তিশগড় সরকার। এই পরিস্থিতিতে গতকাল একটি ই-মেল বার্তায় ছত্তিসগড় সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে মাওবাদীরা। ওই বার্তায় মাওবাদীরা জানিয়েছে, তাদের দাবির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী অবস্থান নিচ্ছে তা স্পষ্ট করুক রমন সিং সরকার। রাজ্য সরকারকে দেওয়া সময়সীমা বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও বার্তায় জানিয়েছে মাওবাদীরা। তাঁদের দাবির প্রেক্ষিতে অবস্থান স্পষ্ট করুক ছত্তিসগড় সরকার।
সরকারের তরফে মধ্যস্থতাকারী নির্মলা বুচ অবশ্য আশাপ্রকাশ করেছেন শীঘ্রই জট খুলবে। মাওবাদীদের তরফে মধ্যস্থতাকারী জি হরগোপালও একই আশাপ্রকাশ করেছেন।