নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যে মৃত্যু ৩ বিক্ষোভকারীর
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল দেশের একাংশ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় ধুন্ধুমার দেশের একাধিক জায়গা। পুলিসকে পাথর। গাড়িতে আগুন। পাল্টা পুলিসের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস। যোগী রাজ্যে ধুন্ধুমার। মারা গিয়েছেন এক বিক্ষোভকারী।ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিসের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
বৃহস্পতিবার লখনউয়ে অবস্থা কার্যত প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। থানায় আগুন, পুলিসের গাড়ি ভাঙচুর এমনকি সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যানে আগুন লাগানোও বাদ গেল না। পাল্টা লাঠি চালায় পুলিস, ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল।
পুরনো লখনউয়ের ডালিয়াগঞ্জ,হুসেনাবাদ, ছোটা ইমামবড়া এলাকায় পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। শহরের পরিবর্তন চকে ২০টি মোটরবাইক, ১০টি গাড়ি, ৩টি বাসে আগুন লাগানো হয়।রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। টিভি চ্যানেলের ৪টি ওবি ভ্যান পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। হাসানগঞ্জ এবং ঠাকুরগঞ্জে থানায় আগুন লাগানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিসের গাড়ি।জলকামানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিস।হজরতগঞ্জে ডিএমের অফিসে বিক্ষোভ দেখান আইনজীবীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয়কুমার লাল্লুকে আটক করে পুলিস।
হিংসা ছড়িয়ে পড়ে লখনউয়ের বাইরেও। আক্রমণের মুখে পড়ে বারাণসীতে লাঠি চালায় পুলিস। সম্ভলে সরকারি-বেসরকারি বাসে লাগানো হয় আগুন।
দেশের সর্বত্রই এদিন ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আঁচ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্যাঙ্গালুরুতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিস। জারি হয়েছে কার্ফু। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পটনা, লখনউ, চণ্ডীগড়, আমেদাবাদে মিছিলে, বিক্ষোভে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সাধারণ মানুষ। আমেদাবাদে লাঠি চালায় পুলিস। হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বনধে বিহারের পটনা, দ্বারভাঙায় আটকে দেওয়া হয় ট্রেন।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দিল্লিও। ১৪৪ ধারা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেল পুলিস। আটক করা হলো বাম-কংগ্রেস নেতাদের। আটক কয়েকশো পড়ুয়া। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ। জামিয়া মিলিয়া, আলিগড়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিসের লাঠির নিন্দা। এদিন বেলা বারোটায় দিল্লিতে মিছিলের ডাক দেয় বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন। সামিল হয় অন্যরাও। কিন্তু কুয়াশা কাটার আগেই সকাল ন-টা থেকে লাল কেল্লা ও মাণ্ডি হাউসের সামনে শুরু হয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের জমায়েত। মিছিল আরম্ভ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় পুলিসের ধরপাকড়ও। নামানো হয় র্যাফ।
মাণ্ডি হাউস থেকে কনট প্লেস হয়ে যন্তরমন্তর যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় পুলিস। কিন্তু আন্দোলনকারীদের তুলনায়, পুলিসের বাস কম থাকায় সবাইকে আটক করা যায়নি। রাস্তার দু'পাশ দিয়ে এগোতে শুরু করেন অনেকে। কনট প্লেসের বদলে বারাখাম্বা রোড ধরে যন্তর মন্তরের দিকে এগোয় মিছিল। যন্তর মন্তরের কাছে ব্যারিকেড থাকায় সেখানেই বসে পড়েন পড়ুয়ারা। লাল কেল্লা থেকে যন্তর মন্তর যাওয়ার চেষ্টা করে আরেকটি মিছিল। সেইখানেও শুরুতেই ধরপাকড় শুরু করে দেয় পুলিস।
লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই প্রতিবাদে সামিল হন পড়ুয়ারা। সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, ডি রাজা, সন্দীপ দীক্ষিত, যোগেন্দ্র যাদবকে আটক করে পুলিস। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কমাতে দিল্লির ১৩টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিক্ষোভের জেরে, দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমানায়, প্রবল ট্র্যাফিক জ্যামে কর্মীরা আটকে পড়ায় বাতিল হয় একাধিক উড়ান। মাণ্ডি হাউস, সিলমপুর, জাফরাবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শারিনবাগ, বাওয়ানা-সহ বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয় পুলিস। দিল্লিতে ফ্রি ওয়াইফাই চালুর দিনই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেজরিওয়ালের নিশানায় মোদী সরকার।
আরও পড়ুুন- ঘণ্টা বাজালাম ঢং, ঢং, কত মানে হয় বুঝে নাও! মোদীকে নিশানা মমতার