এবার ক্যাগ রিপোর্টে কয়লা কেলেঙ্কারি, দোসর বিমানবন্দর, বিদ্যুত্‍

প্রত্যাশিতভাবেই কয়লার ব্লক বণ্টন সম্পর্কিত ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে উত্বপ্ত হয়ে উঠল সংসদ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপে অনুঘটক হল, ক্যাগ রিপোর্টে উল্লিখিদত দিল্লি বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ এবং সাসনের বিদ্যুত্‍ প্রকল্পের বরাত সংক্রান্ত অনিয়মও। এদিনই রাজ্যসভায় পেশ হয় বহুচর্চিত এই ক্যাগ রিপোর্ট। ২০০৪ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সংস্থাকে ১৯৪টি কয়লার ব্লক বণ্টন করে কেন্দ্রীয় সরকার।

Updated By: Aug 17, 2012, 05:53 PM IST

প্রত্যাশিতভাবেই কয়লার ব্লক বণ্টন সম্পর্কিত ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে উত্বপ্ত হয়ে উঠল সংসদ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপে অনুঘটক হল, ক্যাগ রিপোর্টে উল্লিখিদত দিল্লি বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ এবং সাসনের বিদ্যুত্‍ প্রকল্পের বরাত সংক্রান্ত অনিয়মও। এদিনই রাজ্যসভায় পেশ হয় বহুচর্চিত এই ক্যাগ রিপোর্ট। ২০০৪ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সংস্থাকে ১৯৪টি কয়লার ব্লক বণ্টন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে নিলাম না করায় সরকারের ১ লক্ষ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে।  অর্থমূল্যের বিচারে যা টুজি কেলেঙ্কারিকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।
শুধু আর্থিক ক্ষতির অঙ্কই নয়, রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ২০০৪ সালের জুলাই থেকে বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে দেওয়া ১৪২ ব্লকের কয়লা উত্তোলনের বরাতে পদ্ধতিগত অস্বচ্ছতা রয়েছে। নিলাম না ডেকে বরাত বণ্টনের ফলে লাভাবান হওয়া কোম্পানিগুলির মধ্যে টাটা গ্রুপ, জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, অনিল আগরওয়াল গ্রুপ, এসার গ্রুপ, আদানি গ্রুপ এবং আর্সেলর মিত্তাল অ্যান্ড ল্যাঙ্কোর নাম রয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে ৪৪০০ কোটি টন কয়লা নামমাত্র দামে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯৪টি কয়লা ব্লক দেওয়া হয়েছে কেবল সুপারিশের ভিত্তিতে। কয়লা ব্লক বন্টন নিয়ে ক্যাগ রিপোর্টের নিশানায় পড়ে স্পষ্টতই অস্বস্তিতে কেন্দ্র।
১৫০টি কয়লা ব্লক বণ্টনের সময় বেশ কিছু দিন(২০০৬-০৯) কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ফলে, এই ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরার সুযোগ ছাড়তে নারাজ বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই বিজেপির তরফে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তাফা দাবি করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে কয়লা ব্লকের বরাত সংক্রান্ত অনিয়মে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১০ লক্ষ কোটি টাকা বলে ইঙ্গিত মিললেও ক্যাগ রিপোর্টে উল্লিখিত ক্ষতির অঙ্ক অনেকটাই কম হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। চলতি বছরের ১১ মার্চ ক্যাগ-এর তরফে কয়লা ব্লকের বরাত সংক্রান্ত রিপোর্ট সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত তা কেন সংসদে পেশ করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
দিল্লি বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ ও সাসনের বৃহত্‍ বিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে ক্যাগের রিপোর্টও আজ সংসদে পেশ করা হয়। এই দু`টি ক্ষেত্রেও সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আজ পেশ হওয়া ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেসরকারীকরণ ও সাসন বিদ্যুত্‍ ক্ষেত্রের বরাতে অনিয়মের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে যথাক্রমে ২৪,০০০ কোটি ও ২৯,০০০ কোটি টাকা।
রিপোর্ট অনুসারে পিপিপি মডেলে গড়ে ওঠা দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৩৯ একর জমির জন্য জিএমআর গ্রুপ বছরে সরকারকে বছরে মাত্র ১০০ টাকা দেয়। যেখানে ওই জমির বাজারদর ২৪,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু জলের দরে জমি পাওয়া সত্ত্বেও দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীদের কাছ থেকে উন্নয়ন কর নেয়। এভাবে প্রায় ৩,৭৫০ কোটি টাকা আয় করেছে দিল্লি বিমানবন্দর। অথচ উন্নয়ন কর নেওয়ার শর্ত চুক্তিতে ছিলই না।
 
বিদ্যুতের ওপর ক্যাগ রিপোর্ট অনুসারে বিভিন্ন সংস্থার ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। অনিল আম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার এবং টাটাদের বিশেষ সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সাসান আলট্রা মেগা পাওয়ার প্রজেক্টের জন্য ওই দুই সংস্থা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি পেয়েছে। ওই প্রকল্পের জন্য ৩টি কয়লা ব্লকও বরাদ্দ করা হয়েছে। দুর্নীতির পরিমাণ ২৯,০৩৩ কোটি টাকা।
 
রাজনৈতিক মহল মনে করছে আড়াই হাজার কোটি টাকার ৩ কেলেঙ্কারি চলতি অধিবেশনে জর্জরিত করবে মনমোহন সিং সরকারকে। বিরোধীদের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র- এবার অভিযোগ খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। নিশ্চিতবাবেই প্রশ্ন উঠবে নিজের হাতে কয়লা দফতর থাকার পরেও কেন মনমোহন সিং ব্লক বন্টনে নিলাম বাধ্যতামূলক করলেন না। বিরোধীদের আক্রমণ আন্দাজ করতে পেরে ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষে ক্যাগের ওপর চাপ সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

.