বফর্স কাণ্ডে উত্তপ্ত সংসদ
প্রত্যাশামতোই আড়াই দশকের পুরনো বফর্স কাণ্ড নিয়ে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল ভারতীয় গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘরে। প্রাক্তন সুইডিশ পুলিসকর্তা স্টেম লিন্ডস্টর্মের বিস্ফোরক সাক্ষাত্কার ঘিরে নুতন করে রাজীব গান্ধী জমনার কামান কেনার ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবিতে এদিন সংসদে সরব হল বিরোধীরা। বিজেপির তরফে বফর্স কাণ্ডের তদন্তের জন্য নতুন করে বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়ারও দাবি তোলা হল।
প্রত্যাশামতোই আড়াই দশকের পুরনো বফর্স কাণ্ড নিয়ে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল ভারতীয় গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘরে। প্রাক্তন সুইডিশ পুলিসকর্তা স্টেম লিন্ডস্টর্মের বিস্ফোরক সাক্ষাত্কার ঘিরে নুতন করে রাজীব গান্ধী জমনার কামান কেনার ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবিতে এদিন সংসদে সরব হল বিরোধীরা। বিজেপির তরফে বফর্স কাণ্ডের তদন্তের জন্য নতুন করে বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়ারও দাবি তোলা হল। সরকার এবং বিরোধী শিবিরের তুমুল বাকবিতণ্ডার জেরে এদিন দু`বার মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয় লোকসভাতেও।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সুইডেনের প্রাক্তন পুলিস প্রধান স্টেন লিন্ডস্টর্ম বলেন, বফর্স কেলেঙ্কারির দায় থেকে সোনিয়া গান্ধীর পরিচিত ইতালীয় ব্যবসায়ী অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চিকে আড়াল করার জন্য সক্রিয় ছিল একটি প্রভাবশালী মহল। আর এই চেষ্টায় পরোক্ষ সায় ছিল ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর। রাজীব গান্ধী বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য বফর্স কামান কেনার কাটমানি না নিলেও নিজের ঘনিষ্ঠ অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনও ইন্দিরা-তনয় তেমন কোনও তত্পরতা দেখাননি বলেও সাফ জানিয়ে দেন বফর্স তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইডিশ পুলিসের এই প্রাক্তন প্রধান। আর সেই সঙ্গেই বফর্স কেলেঙ্কারির দায় থেকে বলিউডি মেগাস্টার তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ বচ্চনকে ক্লিনচিট দিয়েছেন তিনি। লিন্ডস্টর্ম বলেন, ভারতীয় তদন্তকারী দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বফর্স কাণ্ডে বিগ বি`র নাম সামনে নিয়ে এসেছিল।
আশির দশকে সুইডেনের অস্ত্রনির্মাতা সংস্থা বফর্স-এর থেকে ১৫৫ মিলিমিটার হবিটস এফএইচ৭৭/বি হাউইত্জার কামান কেনার চুক্তি করে রাজীব গান্ধী সরকার। সে সময় একটি ইংরেজি দৈনিকের জেনিভা-স্থিত সাংবাদিক চিত্রা সুব্রহ্মমণ্যম এই কামান কেনার ডিল-এ ৬৪ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন-এর অভিযোগ তুলেছিলেন। `ডিপ থ্রোট` নামে সুইডিশ পুলিসের এর গোপন সোর্স-এর দেওয়া নথিপত্র ফাঁস করে তিনি জানান, রাজীব গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরতলার বেশ কিছু ব্যক্তি এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। বস্তুত, এর পরই স্বাধীনোত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে বড় নির্বাচনী ইস্যু হয়ে ওঠে বফর্স। ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে বফর্সের অভিঘাতে ক্ষমতাচ্যূত হন রাজীব গান্ধী। পরবর্তীকালে জানা যায়, চিত্রা সুব্রহ্মমণ্যমের খবরের সূত্র `ডিপ থ্রোট` আদতে ছিলেন, সুইডিশ পুলিসের তত্কালীন প্রধান স্টেন লিন্ডস্টর্ম।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনর্স আয়ার্সে গ্রেফতার হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চি। অভিযোগ, সে সময় বফর্স কেলেঙ্কারিতে চার্জশিটপ্রাপ্ত এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় তত্পরতা দেখায়নি প্রথম ইউপিএ সরকার। পরবর্তীকালে সিবিআই-এর পরোক্ষ মদতেই কোয়াত্রোচ্চির নামে জারি করা আন্তর্জাতিক পুলিস সংস্থা ইন্টারপোল-এর `রেড কর্নার নোটিশ` প্রত্যাহৃত হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ আড়াই দশক পর সেই চিত্রা সুব্রহ্মণ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে লিন্ডস্টর্মের আক্ষেপ, রাজীব জমানার ভারতের বেশ কিছু রাজনীতিক দেশে ক্ষমতা বদলের পর বফর্স কাণ্ডের দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। তাত্পর্যপূর্ণভাবে বাজপেয়ী সরকারের আমলেও মালয়েশিয়াতে আটক কোয়াত্রোচ্চিকে ফেরত আনার তত্পরতা দেখায়নি সিবিআই।
যদিও এদিন লোকসভায় বফর্স বিতর্কের উত্থাপন করে এনডিএ জমানায় কামান কাণ্ডের তদন্তে কোনওরকম গাফিলতির কথা স্বীকার করেননি প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্ত সিং। যশবন্তের বক্তব্যের সূত্র ধরে এদিন লোকসভার জিরো আওয়ারে সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত স্টেম লিন্ডস্টর্মের সাক্ষাত্কার এবং বফর্স কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান। এর পরই প্রবল গোলমাল শুরু হয় সভায়। অন্যদিকে রাজ্যসভাতেও বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিরোধী সদস্যদের বাদানুবাদ হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে না পেরে দু`দফায় সভা মুলতুবি করতে বাধ্য হন চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি।