জ্ঞানের ভারি ঝোলা বয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে দেশের শিশুরা

দিল্লির রাহুল থেকে কলকাতার দীপ। চেন্নাইয়ের অশ্বিন থেকে কন্যাকুমারীর দীপিকা। ওদের কারও বয়স আট, কারও দশ, কারও আবার বড়জোড় বারো। ওরা সবাই পিঠের ব্যথায় রাত ঠিকমত ঘুম হচ্ছে না, কেউ কেউ আবার মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডাক্তাররা যখন বুঝলেন ওদের মূল সমস্যাটা আসলে একটাই তখন সবার মাথায় হাত। বিদ্যার ঝুলিটার ভারে ওরা ঝুঁকে পড়ছে। ব্যাগ ভর্তি জ্ঞানের ওজনে ওরা নুয়ে পড়ছে।

Updated By: Oct 21, 2013, 11:03 AM IST

দিল্লির রাহুল থেকে কলকাতার দীপ। চেন্নাইয়ের অশ্বিন থেকে কন্যাকুমারীর দীপিকা। ওদের কারও বয়স আট, কারও দশ, কারও আবার বড়জোড় বারো। ওরা সবাই পিঠের ব্যথায় রাত ঠিকমত ঘুম হচ্ছে না, কেউ কেউ আবার মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডাক্তাররা যখন বুঝলেন ওদের মূল সমস্যাটা আসলে একটাই তখন সবার মাথায় হাত। বিদ্যার ঝুলিটার ভারে ওরা ঝুঁকে পড়ছে। ব্যাগ ভর্তি জ্ঞানের ওজনে ওরা নুয়ে পড়ছে।
শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি ভারি স্কুল ব্যাগ বয়ে দেশের ৩০ শতাংশ শিশু পিঠের ব্যথা সহ নানা সমস্যা ভুগছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। ক মাসে আগেই দিল্লির এক নামকরা বেসরকারি স্কুলের বাইরে মাথাঘুরে পড়ে যায় ক্লাস সিক্সের এক শিশু। পরে ডাক্তাররা জানান, ওই শিশুর কাঁধে ছিল তার ওজনের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভারি ব্যাগ। সেই ব্যাগের ওজনের ভার সহ্য করতে না পেরেই মাথাঘুরে পড়ে যায় সে। ঘটনার পরেই শোরগোল পড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর ওজনের চেয়ে তার স্কুল ব্যাগ ১৫ শতাংশ বেশি হলে শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে শিরদাঁড়া থেকে কাঁধ, ঘাড়ের ওপর এমনভাবে চাপ পড়ে তাতে শারীরিক সক্ষমতা তো দারুণভাবে কমে, পরবর্তীকালে দেহ অবশ এমনকি পঙ্গু হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। ফুসফুসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ভারি ব্যাগ বহন করার জন্য শিশুর বৃদ্ধিতেও দারুণভাবে বাধা পায়।
পরিসংখ্যান বলছে মেট্রো শহরের বেশির ভাগ শিশুই তাদের দেহের ওজনের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভারি স্কুল ব্যাগ বহন করে। এই সমস্যাকে সামনে রেখে দেশের প্রায় ৭০০ জন নাগরিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও শিক্ষামন্ত্রকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে স্কুল ব্যাগের ওজন বেঁধে দেওয়া হোক।
১৯৯৩ সালে অবশ্য আদালত সিলেবাস কমিয়ে স্কুল ব্যাগের বোঝা কমাতে বলেছিল। স্কুল ব্যাগের ওজন যাতে কিছুতেই দেহের ওজেনর চেয়ে ১০ শতাংশ না হয় তা দেখতে নজর দিতে বলা হয়েছিল। ২০০৪ সালে সিবিএসই (CBSE) স্কুল ব্যাগের বোঝা কমানোর জন্য নির্দেশিকা জারি করে।
সেই নির্দেশিকায় বলা হয় ক্লাস ওয়ান আর টু-এর শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন কিছুতেই ২ কেজির বেশি হবে না। ক্লাস থ্রি, ফোর-এর শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাগের ওজন ৩ কেজির বেশি হবে না। ক্লাস ফাইভ থেকে এইট-এর ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাগের ওজন কিছুতেই ৪ কেজির বেশি হবে না। ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ-এর ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাগ ৬ কেজির বেশি হবে না।
কিন্তু সেই নির্দেশিকায় খাতায় কলমেই থেকে গিয়েছে। এমনকি গত বছর আদালতে জানিয়েছিল, ক্লাস টু-এর আগে বাড়িতে হোমওয়ার্ক বাধ্যতামূলক করা চলবে না। কিন্তু ইঁদুর দৌড় বড় বালায়। লাইফ এক রেস হ্যায়-তাই ব্যাটন নিয়ে ওদের ছোটানো হচ্ছে, সঙ্গে কাঁধে ওদের ভারি `লোহার শিকল`।

.