অসম থেকে ফিরছি পর্ব ১: নাম আছে? অসমজুড়ে একটাই প্রশ্ন
শহরের আলোচনার একটাই বিষয় নাগরিকপঞ্জি।
![অসম থেকে ফিরছি পর্ব ১: নাম আছে? অসমজুড়ে একটাই প্রশ্ন অসম থেকে ফিরছি পর্ব ১: নাম আছে? অসমজুড়ে একটাই প্রশ্ন](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/08/05/132642-nrc-centre-reuters.jpg)
কমলিকা সেনগুপ্ত
৩০ জুলাই কী হবে? কতজন বাদ পড়বেন? এই সব খবর প্রতিদিনই আসছিল। সোমবার ১০টায় যখন রিপোর্ট প্রকাশিত হল, চমকে উঠলাম, এক ধাক্কায় ৪০ লক্ষ লোকের নাম বাদ। রাতারাতি বিদেশি হয়ে গেলেন মানুষগুলো। কী হবে তাঁদের? সবাই কী অনুপ্রবেশকারী? জানতে পারলাম এটা খসড়া। নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন তালিকায় নাম না থাকা লোকগুলো।
এই সব খবর যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টিভি চ্যানেলে ঘোরাফেরা করছে, তখনই ফোন এল আমার ডেপুটি এডিটরের। ওপার থেকে বললেন, 'রওনা দিতে হবে অসমে'। চললাম ৪০ লক্ষ মানুষের খোঁজখবর নিতে। দীর্ঘ বছর ধরে সাংবাদিকতার পর যে প্রশ্নগুলি মাথায় আসছে, তার উত্তরের আশায় পাড়ি দিলাম সর্বানন্দ সোনোয়ালের রাজ্যে।
সকাল ৫.৫০ মিনিটের উড়ান ধরে গুয়াহাটি পৌঁছয়ই সাড়ে সাতটায়। নেমেই দেখলাম, শহরের আলোচনার একটাই বিষয় নাগরিকপঞ্জি। আমার গাড়ির চালক জানালেন, 'বাইচ্যা গেসি! আমার পরিবারের নাম আছে'। বুঝলাম, নাম থাকা বা না থাকা এখন এই লোকগুলোর কাছে জীবন-মরণ সমস্যা।
গুয়াহাটিতে নাগরিক অধিকার মঞ্চের সচিব শেখর দে-কে ফোন করে জানতে পারলাম, নাগরিকপঞ্জিতে তিনি বিদেশি অথচ তাঁর স্ত্রী ও কন্যার নাম রয়েছে। অবাক হলাম! গুয়াহাটি শহর ঘুরে বুঝলাম, কুশল বিনিময়ের আগে একটাই প্রশ্ন, 'নাম আছে তো'?
কালাপাহাড়ের কাছে শেখর দে-র বাড়ি ফি দিন সকালে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। গুয়াহাটি কালাপাহাড়ের ওই এলাকার ছবি দেখলে চট করে মনে হবে, বাংলার কোনও পাড়া।শেখরবাবুর মতো অকস্মাত্ বিদেশি এখানে অনেকেই আছেন- 'জন্মের পর ছেলেবেলাও কেটেছে এখানে, তা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশকারীর তকমা জুটছে'?
নাগরিক অধিকারের নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন শেখর। তবে আজ কার্যত মাথায় হাত তাঁর। শেখরের ভারতীয় নাগরিকেত্বর অপমৃত্যু ঘটেছে। নিজেকে নাগরিক প্রমাণে বৈধ নথি দেখিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, 'আমি কি আর ভারতীয় নই? তাহলে আমার মেয়ে কীভাবে ভারতীয় হয়'? সত্যিই এই প্রশ্নের উত্তর নেই জানা নেই আমার।
শেখর বাবুর পাড়া থেকে বেরিয়ে ভাতের হোটেলের সন্ধান পেলাম। সাবিত্রী মাসির দোকানে ভাত, ডাল সবই পাওয়া যায়। খেতে খেতে জানতে চাইলাম, মাসি নাম আছে তো? এক গাল হেসে মাসি বললেন, 'না ওঠে নাই গো। বাড়ির সবার উঠসে। তুইল্যা নিয়ে গেলে আর কি করুম'! মনে হল, অদৃষ্টের উপরেই সব ছেড়ে দিয়েছেন হঠাত্ নাগরিকত্ব খোয়ানো মানুষগুলো।
আরও পড়ুন- অসমে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ, বলছে জনগণনার পরিসংখ্যান