সিবিআই ডিরেকটরের পদ খোয়াতেই হাটে মোদীর হাঁড়ি ভাঙলেন অলোক বর্মা
কেন্দ্রের অপসারণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা অলোক বর্মার।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিবিআই ডিরেকটরের পদ থেকে অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটি। ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অলোক বর্মা। মামলার শুনানি আগামী ২৬ অক্টোবর। নিজের আবেদনে একেবারে মৌচাকে ঢিল মেরেছেন অলোক বর্মা। ইঙ্গিত দিয়েছেন, সিবিআইয়ের তদন্তে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
শীর্ষ আদালতে মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেকটর অলোক বর্মা। বুধবার তিনি জানান, রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পছন্দমত পথে তদন্ত না এগানোর জন্যই এমনটা করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, সেন্টার ভিজিল্যান্স কমিশন ও কেন্দ্রের পদক্ষেপ বেআইনি। দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্কার স্বাধিকার ও স্বাধীনতার উপরে আঘাত করা হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে অলোক বর্মা আবেদন করেছেন, কর্মিবর্গ দফতরের আওতা থেকে স্বাধীনতা দেওয়া হোক সিবিআই-কে। এর ফলে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষ তদন্ত গুরুতর বাধা সৃষ্টি করছে।
অলোক বর্মা আরও বলেন, সিবিআইয়ের কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের আশা করা হয়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্তে সরকারের ইচ্ছায় দিকনির্দেশ মেলে না। আবেদনে দ্রুত শুনানির কথাও বলেছেন অলোক বর্মা।
ইউপিএ জমানায় সিবিআই-কে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি বলে কটাক্ষ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপরেও একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। সে প্রসঙ্গ তুলে অলোক বর্মার দাবি, কর্মিবর্গ দফতরের আওতা থেকে সিবিআই-কে বের করতে হবে। মধ্যরাতের পদক্ষেপ (অপসারণ) সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের ইতিহাসে এই প্রথম মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন কর্মিবর্গ মন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হল সিবিআই ডিরেকটরকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি সিবিআইয়ের যুগ্ম-ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাও-কে অন্তবর্তী সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, বর্মা এবং আস্থানা দুজনেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তদন্তের স্বার্থে মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার তাঁদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত। রাত পৌনে একটা নাগাদ দিল্লির সিবিআই সদর দফতর পুলিস দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, রাত ১টায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিয়োগ সংক্রান্ত অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অজিত ডোভাল। রাত ২টো নাগাদ নতুন অন্তর্বর্তী ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাও সিবিআই অফিসে ঢোকেন। সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অলোক বর্মা-রাকেশ আস্থানা দুজনকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়।
ছুটিতে থাকার সময় বর্মা-আস্থানা কেউই অফিসে ঢুকতে পারবেন না। তাঁদের সরকারি গাড়িও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিবিআই সদর দফতরে বর্মা-আস্থানার ঘরে তল্লাসি চালানো হয়। তাঁদের ঘর সিল করে দেওয়া হয়েছে।
অন্তবর্তী সিবিআই ডিরেক্টরের দায়িত্ব নিয়েই পরপর অফিসার রদবদল শুরু করেছেন এম নাগেশ্বর রাও।
রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগের প্রধান তদন্তকারী অফিসার এ কে বাসসি-কে আন্দামানে বদলি করে দিয়েছেন তিনি। ছুটিতে পাঠানোর নাম করে আসলে সরকার অলোক বর্মাকে সিবিআই প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিল বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। আস্থানাকে বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ বলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তাঁরা।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর সোল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত নরেন্দ্র মোদী