আগে থেকেই অসুস্থ ছিল, শ্রমিক মায়ের মৃত্যুতে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলল রেল!
লকডাউনে শ্রমিকেরই দুর্ভোগের শেষ নেই যেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন— এতটা দুর্ভোগ হয়তো এর আগে কখনও প্রবাসী শ্রমিকদের পোহাতে হয়নি। ক্ষিদে, সংসারে অভাব শ্রমিকের সংসারে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এমন দুর্ভোগ নয়। লকডাউনে শ্রমিকেরই দুর্ভোগের শেষ নেই যেন। কোথাও ট্রেন পিষে দিচ্ছে শ্রমিকের দলকে। কোথাও আবার হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে কিশোরী। এগুলোই যেন আসল ভারতের ছবি। বাকি যেটা দেখানো হয় সেটা উপরের চাকচিক্য। যাঁদের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা দেশ, তাঁদেরই জীবনের কোনও মূল্য নেই। সরকারের কাছে একেকটা শ্রমিক সংখ্যামাত্র। শ্রমিকের মৃত্যু সহানুভূতি ছাড়া আর কোনও কিছুরই উদ্রেক করে না যেন! তবে এই লকডাউনে কিছু ছবি হয়তো দেশবাসীর আগামী কয়েক বছর মনে থাকবে। এই যেমন স্টেশনে মৃত মায়ের উপর দেওয়া চাদর টানছে ছোট্ট সন্তান। মায়ের চোখ খুলছে না। ছোট্ট শিশু খেলছে। মাকে জাগানোর চেষ্টা করছে।
ছোট্ট সন্তান বোঝেনি তাঁর মা মৃত। মায়ের মৃত্যু হল কী করে তা হয়তো বড় হয়ে অন্যের মুখে শুনবে সে। তখন এই সিস্টেম ও নিজেদের অসহায়তার উপর প্রবল রাগ জন্মাবে। কিন্তু এখন তার কিছুই বোঝার ক্ষমতা নেই। বোঝার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু বুঝেও কিছু করার নেই। লকডাউনের প্রহরে শ্রমিকের ভাগ্যে এসবই লেখা ছিল। অদৃষ্ট এমনই অমানবিক ভোগান্তি লিখে দিয়েছে যেন! যাই হোক, সেই মায়ের মৃত্যুর দায় কাঁধ থেকে এক ঝটকায় ঝেড়ে ফেলল। মুজফফরপুর স্টেশনে ট্রেন ঢোকার কিছুক্ষণ আগেই ওই শ্রমিক মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরের ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। কিন্তু লাভ কিছুই হয় না। শ্রমিকের মৃত্যু। রেল তাতে সহানুভূতিটুকু জানায়নি। উল্টে বলেছে, ওই মহিলা আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। ট্রেনেই অসুস্থার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। এর পর পরিজনেরা তাঁর মৃতদেহ প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে রাখে।
আরও পড়ুন— স্যানিটাইজ করতে গিয়ে ট্রেনের টয়লেটে মিলল পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ
রেলের এমন বিবৃতি শুনে অবাক সেই মহিলার পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, শনিবার গুজরাট থেকে ট্রেনে চেপেছিলেন সেই মহিলা। তখন তাঁর কোনও অসুস্থতা ছিল না। দুদিন খাবার, জল জোটেনি। তার উপর প্রবল গরম। তাতেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। কিন্তু রেল সেসব যুক্তি শুনতে নারাজ। ওই মহিলার মৃত্যুর ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই ভারতীয় রেলকে ট্যাগ করে রিটুইট করছিলেন। রেল তাতেই বাধ্য হয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে, মুজফফরপুরে আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ ওই একই। এক কথায় বললে দুর্ভোগ। দু—চার কথায় বিবরণ দিলে অত্যধিক গরম, খাবার, জলের অভাব।