সাক্ষী
রবীন বসু
—হ্যালো!
—কি ব্যাপার, আজ বাষট্টি দিন হয়ে গেল ফোন করলে না তো?
—সেপারেশনে ফোন হয় নাকি?
—সেপারেশন তো ঘরের, ফোনের দোষ কি?
— আমি ভাবলাম যদি বিরক্ত হও বা রাগ করো?
—ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলে? না কি ভাবছিলে হ্যাংলার মত আমি আগে—
—ছি ছি, তা ভাবব কেন। আসলে এই এক বছর তো খুব সংযমের সঙ্গে থাকতে হবে। না হলে আবার…
—সংযম! তুমি নেবে সংযমের পাঠ? হাসালে, তা যদি হত তাহলে তো সেপারেশনের দরকারই ছিল না।
—সত্যি তো।
—কী সত্যি?
—খামোকা এই সেপারেশন…
—সেপারেশন হবেই, তোমার স্বভাব তো আর বদলাবে না—
—বিশ্বাস কর, আর কাউকে রাত্রে ফোন করি না, শনিবার ডিস্কে যাই না, অফিসের কাজ এই বাহানায় রবিবার মন্দারমনি বা শঙ্করপুর যাই না মহিলা কলিগের সঙ্গে, পেগের মাত্রাও হাফ করে দিয়েছি। আর চুপি চুপি আরও একটা সত্যি কথা বলি, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে আজকাল।
ফোনের অপরপ্রান্তে এবার বাজ পড়ল।
— থামো, যত্তসব ন্যাকামো! তা ক’বার দেখতে এলে এই দু’মাসে?
—কেন, প্রতিদিন গেছি।
—মানে?
—মানে আর কিচ্ছু না, তানি ম্যাম। আটটা রবিবার বাদ দিয়ে প্রতিদিন অফিসফেরতা তোমার বাপের বাড়ির ফ্ল্যাটে গেছি। কিন্তু সাহস করে উপরে উঠতে পারিনি । তাই তোমাদের ফ্ল্যাটের নিচে ডানদিকে যে কামিনী ফুলের গাছটা আছে, ওর একটা মোটা ডালে আমি রোজ দাগ দিয়ে আসতাম। সাক্ষী রেখে আসতাম আমার যাওয়ার। চাইলে তুমি প্রমাণ হিসেবে দেখে আসতে পার।
—এ্যাই, ছাড়বে না ফোন, আমি এক্ষুনি নিচ থেকে আসছি…
আরও পড়ুন- সিঁদুর