সমুদ্রে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপেই রয়েছে বাস্তবের মৎসকন্যারা!
মৎসকন্যা— কথাটা শুনলেই রূপকথার নানা কাহিনি মনে পড়ে যায়। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মানুষ আর কোমরের নিচের অংশ একেবারে মাছের মতো!
নিজস্ব প্রতিবেদন: মৎসকন্যা— কথাটা শুনলেই রূপকথার নানা কাহিনি মনে পড়ে যায়। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মানুষ আর কোমরের নিচের অংশ একেবারে মাছের মতো! অনেকে আবার বাস্তবে মৎসকন্যা দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন। তবে সেই সব দাবির সমর্থনে তেমন কোনও জোরালো প্রমাণ দিতে না পারায় মৎসকন্যারা শুধুমাত্র কাহিনিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে মৎসকন্যার কাহিনির উপর ভিত্তি করে। আর ওই সব চলচ্চিত্রের দৌলতে মানুষের কল্পনার ক্যানভাসে যেন নতুন করে রং ধরেছে!
তবে বাস্তবেও মৎসকন্যারা রয়েছে। তবে তাঁদের শরীরের অর্ধেক অংশ মাছের মতো নয়। তবে দিনের অধিকাংশ সময় তাঁরা সমুদ্রের জলের তলায় কাটায়, ঝিনুক খোঁজার জন্য। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে বসবাস করে বাস্তবের এই মৎসকন্যারা। এরা এখানে হেনিয়ো বা সাগরকন্যা নামেই পরিচিত। হেনিয়োরা অগভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে ঝিনুক আর শঙ্খ সংগ্রহ করে। ঝিনুক আর শঙ্খ রপ্তানি করে যে অর্থ উপার্যিত হয়, মূলত তা দিয়েই চলে হেনিয়োদের সংসার। জেজু দ্বীপে পুরুষরাও বসবাস করেন। মহিলারা যে সব ঝিনুক আর শঙ্খ সংগ্রহ করেন, সেগুলিকে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পৌঁছে দেন এই দ্বীপের পুরুষরা। হেনিয়োরা আসলে ডুবুরি।
বর্তমানে এই দ্বীপে যাঁরা ঝিনুক আর শঙ্খ সংগ্রহ করেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এক বয়স হওয়া সত্ত্বেও এঁরা সমুদ্রের অন্তত ২০ মিটার (প্রায় ৬৬ ফুট) গভীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান রুজির টানে। তবে সঙ্গে থাকে না কোনও অক্সিজেন সিলিন্ডার। দীর্ঘদিনের অভ্যাসে এঁরা জলের গভীরে ২ মিনিটেরও বেশি সময় দম বন্ধ করে থাকতে পারেন। এ ভাবেই দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমুদ্রের প্রায় ৬৬ ফুট গভীরে ঝিনুক আর শঙ্খের খোঁজে কাটান হেনিয়োরা।
হেনিয়োরা শুধুমাত্র ঝিনুক বা শঙ্খর প্রজননের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরই এগুলিকে সংগ্রহ করেন। ফলে যুগ যুগ ধরে ঝিনুক আর শঙ্খের যোগান আর সমুদ্রের ইকো সিস্টেম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে হেনিয়োদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক হলেন আল সু রা। তিনি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে প্রবীণা ডুবুরি। তাঁর বয়স ৯৫ বছর। আল সু রা জানান, সমুদ্রের স্রোত এই অঞ্চলে অনেকটাই বেশ। তাছাড়া সমুদ্রের তলও পাথুরে, রুক্ষ। একই সঙ্গে পরিবেশও হঠাৎ হঠাৎ অনেকটাই বদলে যায়। তাই এই কাজে প্রাণের ঝুঁকিও রয়েছে যথেষ্ট! ২০১৭ সালেও একজন হেনিয়োর মৃত্যু হয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: কখন, কতটা বৃষ্টি হবে তা আগাম জানিয়ে দেয় এই মন্দির!
আল সু রা জানান, নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান না। অনেকেই বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। তাই বিগত ৫০-৬০ বছরে হেনিয়োদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সালে যেখানে হেনিয়োদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ হাজার বর্তমানে (২০১৮) তা কমে হয়েছে মাত্র ৪,৫০০। আল সু রার মতো অনেকেরই আশঙ্কা, যে গতিতে কমছে হেনিয়োদের সংখ্যা, আর বছর খানেক পর হয়তো শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতাতেই খোঁজ মিলবে এই মহিলা ডুবুরিদের।