রুজির টানে মোটর মেকানিক, স্বপ্নের টানে প্রতিমাশিল্পী বেলঘরিয়ার অমর পাল

বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই তাঁর তৈরি দূর্গা প্রতিমার আবরণ সকলের দেখার জন্য সরিয়ে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গেই সেরে ফেলা হয় তাঁর দূর্গা প্রতিমার পুজোও।

Updated By: Sep 18, 2019, 12:59 PM IST
রুজির টানে মোটর মেকানিক, স্বপ্নের টানে প্রতিমাশিল্পী বেলঘরিয়ার অমর পাল
শিল্পী অমর পাল।

সুদীপ দে: এ যেন সত্যিই রূপকথা। সিনেমার গল্পের মতো! যে দু’হাত সারা বছর হাতে তেল-কালি মেখে বাইক সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকে, অগাস্ট মাস পড়তেই সেই দু’হাতই দূর্গা প্রতিমা বানানোর কাজে লেগে পড়ে জোর কদমে। কখনও ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কখনও মোবিলের ফাঁকা কন্টেনার বা ফাটা টায়ারের টুকরো দিয়েই তৈরি হয় প্রতিমা। আর প্রতিমার সঙ্গে মানানসই সাজে সেজে ওঠে পুজো মণ্ডপও। এই গোটা ব্যপারটা একার হাতেই সামলান পেশায় মোটর মেকানিক অমর পাল। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় বেলঘরিয়া আমতলার ছোট্ট গ্যারেজ থিমের প্রতিমা আর মণ্ডপ সজ্জায় একেবারে অন্য চেহারা নেয়। শিল্পী অবশ্য একে থিমের প্রতিমা বলতে নারাজ। তাঁর মতে, ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রকে কাজে লাগিয়ে প্রতিমার আদল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

Amar Paul, Belgharia, Amtala
ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি মডেল, গোপাল ভাঁড়ের গল্পে সেজে উঠছে পুজোর মন্ডপ।

মোটর মেকানিক অমর পালকে এলাকার প্রায় সকলেই এক ডাকে চেনেন। তবে বেলঘরিয়া আমতলার ছোট্ট গ্যারেজ পেরিয়ে এখন তাঁকে চেনেন বরানগর, কামারহাটি এলাকার অগনিত মানুষ। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে শিল্পী অমর পালের সম্পর্কে জানেন হাজার হাজার মানুষ। পুজোর সময়ে তাই বেলঘরিয়া আমতলার ছোট্ট গ্যারেজে নতুন ধরনের দুর্গা প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

Amar Paul, Belgharia, Amtala
এ বছরের প্রতিমার সামনে শিল্পী অমর পাল।

মোটর মেকানিক থেকে শিল্পী হয়ে ওঠার পথ চলা শুরু সেই ২০০৯ সালে। সে বছর কিছুটা ঝোঁকের বশেই গ্যারেজে পড়ে থাকা মোবিলের ফাঁকা কন্টেনার দিয়ে বানিয়ে ফেলেন বিশ্বকর্মার মূর্তি। সেই থেকেই নিজের আলাদা একটা পরিচিতি তৈরির চেষ্টায় পথ চলা শুরু করেন তিনি। রুজির টানে ছেলেবেলাতেই পড়াশুনোর পাঠ চুকিয়ে বাইক সারানোর কাজ শেখা শুরু করেছিলেন অমরবাবু। জীবনে খেয়ে-পরে টিকে থাকার চেষ্টায় গ্যারেজের তেল-কালির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল হাতের রেখায় থাকা শিল্পী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। শৈশব, কৈশোর, যৌবন— জীবনের তিন অধ্যায় পেরিয়ে আজ অমর পাল অনেকের কাছেই শিল্পী হিসাবে পরিচিত। আর এখানেই তাঁর স্বপ্নের স্বার্থকতা।

Amar Paul, Belgharia, Amtala
শিল্পীর তৈরি আগের কয়েকটি প্রতিমা।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ থেকে বিজ্ঞানচর্চা, জেনে নিন ঘুড়ির কয়েকটি অজানা ব্যবহারের ইতিহাস!

অমর পালের তৈরি প্রতিমাগুলির মতো তাঁর পুজোও আর পাঁচটা পুজোর চেয়ে একেবারে আলাদা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই তাঁর তৈরি দূর্গা প্রতিমার আবরণ সকলের দেখার জন্য সরিয়ে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গেই সেরে ফেলা হয় তাঁর দূর্গা প্রতিমার পুজোও। এর পর কালী পুজোর আগে পর্যন্ত প্রতিমা সাজানো থাকে সকলের জন্য। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে দূর্গাপুজো কেন? এ প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, “আমি একজন মেকানিক। তাই আমার পুজো বলতে তো ওই বিশ্বকর্মা পুজোই। সেই জন্য একই দিনে দূর্গা প্রতিমার পুজোটাও সেরে ফেলি।”

অমর পালের গ্যারেজের একপাশে পর পর সাজানো রয়েছে তাঁর তৈরি সবকটি প্রতিমা। ধুলো জমলেও সেগুলি এখনও কাউকে দিতে রাজি নন তিনি। অমর বাবুর কথায়, “আমি কারও ফরমাইশে মূর্তি বানাই না। আমার ভাল লাগে, তাই করি। তাই আমার তৈরি প্রতিমা কাউকে দেওয়ার বা বিক্রি করার কোনও প্রশ্নই নেই। টাকা বা খ্যাতি তো চাই না। মানুষ আমাকে শিল্পী হিসাবে জানুক, এ টুকুই শুধু চাই।”

ছবি: সুদীপ দে।

.