১৬ দিন গৃহবন্দি, শহরে ফের নারী নির্যাতন
টানা ১৬ দিন ধরে ভিন রাজ্যের এক তরুণীকে ঘরে আটকে রেখে, তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠল। শেষ পর্যন্ত নিজের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে এবং প্রতিবেশীদের উদ্যোগে প্রাণে বেঁচেছেন ওই তরুণী। এই ঘটনায় গড়ফার শহিদনগর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। আজ তাকে আদালতে তোলা হবে।
টানা ১৬ দিন ধরে ভিন রাজ্যের এক তরুণীকে ঘরে আটকে রেখে, তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠল। শেষ পর্যন্ত নিজের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে এবং প্রতিবেশীদের উদ্যোগে প্রাণে বেঁচেছেন ওই তরুণী। এই ঘটনায় গড়ফার শহিদনগর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। আজ তাকে আদালতে তোলা হবে।
এই তরুণীর বাড়ি ভোপালের কলাকুঞ্জ্ কোলহার এলাকায়। বাবা পদস্থ সরকারি অফিসার। তরুণী নিজেও একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় আসেন তিনি। উঠেছিলেন গড়ফার শহিদনগরে স্বরূপ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। অভিযোগ, তারপর থেকেই স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে ঘরে তালাবন্দি করে রাখেন। তিনি বাড়ি ফিরতে চাইলে, স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে মারধর এবং গালিগালাজ করতেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন তরুণী।
পনেরোই ডিসেম্বর থেকে এভাবেই কাটছিল দিন। কিন্তু বছরের প্রথম দিন সন্ধেয় পালানোর সুযোগ পেয়ে যান তরুণী। দেখেন ঘরের দরজা খোলা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। অভিযোগ, পিছু ধাওয়া করেন স্বরূপ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী। তরুণীর চিত্কার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁদের তত্পরতায় রক্ষা পান তিনি।
দিল্লির বিজয়চকের লক্ষ্মীনগরে একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকার সময়, তরুণীর সঙ্গে স্বরূপ চৌধুরীর মেয়ে সংযমীর পরিচয় হয়েছিল। পরে তরুণীর ভোপালের বাড়িতে চলে যায় সংযমী। সতেরো বছরের সংযমী তরুণীকে জানায়, বাবা তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করায়, সে ঘর ছেড়ে চলে এসেছে। কয়েক দিনের মধ্যে স্বরূপ চৌধুরীও ভোপালে তরুণীর বাড়িতে হাজির হন। সংযমী জানায়, বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরতে রাজি নয় সে। স্বরূপ চৌধুরী তরুণীকে বলেন, মেয়ে তাঁর ওপর ভরসা করে। তাই তিনিই যেন সংযমীকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। সেই অনুরোধ রেখেই ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে এসেছিলেন এই তরুণী। কিন্তু তাঁকে যে এমন নির্মম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, তার বিন্দুমাত্র আঁচ আগে থাকতে তিনি পাননি।
ভোপালের অপরিচিত তরুণীকে কেনই বা গড়ফার বাড়িতে ডেকে আনা হল, আর কেনই বা স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে তালাবন্দি করে রাখতে গেলেন, তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে বাবার বিরুদ্ধে অপহরণের গল্প ফেঁদে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। পুলিসের অনুমান, সেই কাজে নিজের মেয়েকেই ব্যবহার করতেন স্বরূপ চৌধুরী।
গড়ফার শহিদনগরের একটি বাড়িতেই স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে থাকেন স্বরূপ চৌধুরী। মেয়ে সংযমী দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রী। স্বরূপ চৌধুরী গত বছর গড়ফা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, সংযমীকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলিস সংযমীর মোবাইল ফোনের টাওয়ার ট্র্যাক করে শ্যামপুকুর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় বিকাশ সিং এবং কৌস্তুভ নিয়োগী নামে দু`জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিস। মামলাটি আদালতে গড়ায়। বিকাশ এবং কৌস্তুভ দু`জনেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। আইনজীবী মহলের খবর, অপহরণের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য কৌস্তুভ ও বিকাশের পরিবারের থেকে মোটা টাকা নিয়েছিলেন স্বরূপ চৌধুরী। পরে জানা যায়, দুই যুবকের সঙ্গে ফেসবুক মারফত আলাপ হয়েছিল সংযমীর।
এই রকমই আরেকটি ঘটনা নিখিল নীরজ নামের দিল্লিবাসী এক যুবকের সঙ্গে। নিখিলের সঙ্গেও ফেসবুকে পরিচয় হয় সংযমীর। তারপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। গিয়ে ওঠে দিল্লির বিজয়চকের লক্ষ্মীনগর এলাকার একটি বাড়িতে। গড়ফা থানায় ফের অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন স্বরূপ চৌধুরী। এবারও পুলিস গিয়ে নীরজকে গ্রেফতার করে। পরে জামিনে ছাড়া পান নীরজ। পুলিস সূত্রে খবর, এক্ষেত্রেও নীরজের পরিবারের সঙ্গে স্বরূপ চৌধুরীর আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। দিল্লির বিজয়চকে যে বাড়িতে সংযমী পেয়িংগেস্ট হিসেবে উঠেছিল, সেই বাড়িতেই ভোপালের বাসিন্দা এই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে ওঠে সংযমী। পুলিসের অনুমান, টাকা আদায়ের জন্য মেয়েকে কাজে লাগিয়ে অপহরণের গল্প ফাঁদতেন স্বরূপ চৌধুরী। মোটা টাকা আদায়ের লোভেই ভোপালের তরুণীকে কায়দা করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এমনটাই সন্দেহ করছে পুলিস। ঘটনার পর থেকে সংযমী পলাতক। তার সন্ধানে তল্লাসি চলছে।