‘আমি পরে দলের, আগে দেশের’, মোদীকে একহাত নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতের ডাক শত্রুঘ্ন সিনহার
ব্রিগেডের জনসভায় শত্রুঘ্ন সিনহা কোনও রাখঢাক না করেই সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর ‘মোদী বিরোধিতা’র কথা । নাম না করেই বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রীকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিজেপি নেতা কর্মীরা এরপর নিশ্চয়ই বলবেন, ‘শত্রুঘ্ন সিনহা ঘর শত্রু বিভীষণ’! আর সেই সুযোগটা করে দিলেন পাটনার বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা নিজেই। যদিও এতে বিন্দুমাত্রও মাথা ঘামাতে নারাজ তিনি। উল্টে লোকসভা ভোটের আগে আরেকবার নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ব্রিগেডের জনসভায় একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করে লোকতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ডাক দিয়ে গেলেন তিনি।
ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার মঞ্চে আগুনে বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, এই কথা জানা সত্ত্বেও একেবারে ভয়ডরহীন বক্তব্য রাখলেন বিজেপি সাংসদ। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই আজ ঘটল। বিজেপি বিরোধী জোট মঞ্চে কি না বোমা ফাটালেন খোদ বিজেপি সাংসদই।
আরও পড়ুন- 'ইউনাইটেড ইন্ডিয়া'র প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? ব্রিগেড মঞ্চে ঘোষণা তৃণমূল নেত্রীর
ব্রিগেডের জনসভায় শত্রুঘ্ন সিনহা কোনও রাখঢাক না করেই সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর ‘মোদী বিরোধিতা’র কথা । নাম না করেই বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রীকে। মহাজোটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নোটবন্দি, জিএসটি নিয়ে যেমন নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিলেন একই সঙ্গে জনসমক্ষে তুলে আনলেন রাফায়েল বিতর্কও।
মোদী যেভাবে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে, তার বিরোধিতা করে শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, “ব্যক্তির থেকে দল বড়। দলের থেকে বড় দেশ। আমি দেশের জন্য কাজ করছি। অর্থাত্ আমি দলের হয়েই কাজ করছি। দলকে আয়না দেখাচ্ছি। লোকতন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রীর নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “তুঘলকি কায়দায় কেন রাতারাতি নোট বন্দি করা হল? এতে কিষাণ, মজদুরের উপর কী প্রভাব পড়বে, আপনি জানতেন? এটা দলের সিদ্ধান্ত ছিল না। যদি দলের সিদ্ধান্ত হত, তা হলে মার্গদর্শক লালকৃষ্ণ আডবাণী জানতেন। মুরলী মনোহর যোশী জানতেন। এটিএম লাইনে লোক মরেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। বাড়ির মা বোনেরা, যারা সারা জীবন ধরে টাকা জমিয়েছেন, সেই টাকা হাওয়া হয়ে গেল। নোটবন্দি নিয়ে জানতেন না অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলিও। এটা প্রধানমন্ত্রীর একার সিদ্ধান্ত ছিল।”
আরও জানুন- চোরদের তাড়ানোর ডাক হার্দিকের, 'ঐক্যবদ্ধ ভারত' গড়ার ডাক জিগনেশের
এখানেই শেষ নয়। তড়িঘড়ি জিএসটি কার্যকর করার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন এই বিজেপি সাংসদ। তিনি বলেন, “দেশ তৈরিই ছিল না। জিএসটি কার্যকর করে দেওয়া হল। ব্যবসায়ীদের কী হাল হয়েছে, জানেন?” এখানেও নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিয়ে শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, “তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জিএসটি-র বিরোধিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাল্টে গেলেন। এতে কারা উপকৃত হলেন?” নোটবন্দি ছিল ‘নিম’ তার ওপর ‘করলা’ হয়ে এল জিএসটি, ব্রিগেডের জনসভা থেকে এমনই কটাক্ষ বিহারী বাবুর। কেন্দ্রের এই সরকার কিষানের কথা শোনেনি, তাদের দাবি মানেনি, বেকারের কথা ভাবেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এরপর রাফায়েল নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন পাটনা থেকে জয়ী এই বিজেপি সাংসদ। প্রধানমন্ত্রীকে সব তথ্য জনসমক্ষে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলছি না আপনি দোষী। এটাও বলছি না আপনি দোষী নন। কেন তথ্য লুকিয়ে রাখছেন? কী দরকার? সব তথ্য জানিয়ে দিন। তা না হলে আপনাকে শুনতেই হবে, চৌকিদার চোর হ্যায়।”
একই সঙ্গে ফ্রান্সের সঙ্গে রাফায়েল চুক্তি নিয়ে তিনটি প্রশ্নও তোলেন শত্রুঘ্ন সিনহা।
প্রশ্ন এক- রাফায়েল চুক্তিতে দেশের ৪১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। কথা হয়েছিল, ১২৬টি হাওয়াই জাহাজের প্রয়োজন। পরে কেন ১৩৬টি হাওয়াই জাহাজে নেওয়া হল?
প্রশ্ন দুই- প্রথমে জানতাম এক একটি যুদ্ধ জাহাজের দাম ৫০০ কোটি বা তার থেকে কিছুটা বেশি। সেখান থেকে তা তিন গুণ বেড়ে ১৬০০ কোটি টাকা কীভাবে হয়ে গেল?
তৃতীয় প্রশ্ন- দেশীয় কোম্পানি থাকতে কেন বিদেশি কোম্পানিকে যুদ্ধ জাহাজ তৈরির বরাদ দেওয়া হল?
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, “নির্বাচন আসছে। আরও অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তবে প্রতিশ্রুতি আর পারফরম্যান্সে আকাশ-পাতাল তফাত্। যেখানে নদী নেই, সেখানেও ব্রিজ বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এভাবে চলতে পারে না। আমি দেশের সন্তান, দেশের হয়ে কাজ করছি। এই সময় একজোট হওয়ার সময়। মতভেদ থাকুক। মনভেদ যেন না হয়।”