Debangshu Bhattacharya: 'আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি'! দেবাংশুর পোস্টে সুনামি
TMC leader Debangshu Bhattacharya blasts about recruitment scam: তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যর পোস্ট ফেসবুকে ঝড় তুলে দিল। এবার সরাসরি বিরোধীদের না বিঁধে, তিনি তুলে ধরলেন তাঁর এবং পরিবারের কঠিন জীবন সংগ্রামের গল্প।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে (Debangshu Bhattacharya) এক ডাকে সকলে চেনেন। তাঁর 'সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্স' ও জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। রাজনৈতিক মতাদর্শে বিপক্ষকে বিঁধতে তিনি একেবারে ওস্তাদ। হাস্যরসকে হাতিয়ার করে সিপিএম-বিজেপি-কে বিদ্রুপ করতে তিনি এক পা এগিয়েই থাকেন। ফেসবুক মাতিয়ে দেওয়ার মন্ত্র দেবাংশুর খুব ভালো ভাবেই জানা আছে। তবে এবার দেবাংশু ব্যতিক্রমী পোস্ট করলেন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ঝড় উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই পরিস্থিতিতে দেবাংশু নিজের জীবনের কঠিন লড়াইয়ের কথা বললেন। বিগত চার ঘণ্টায় (প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত) যে পোস্টে লাইক ও লাভ রিয়াক্ট এসেছে ৪.৮ কে। শেয়ার হয়েছে ২১৫টি।
ফেসবুকে দেবাংশুকে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ফলো করেন। দেবাংশু লিখলেন, 'বাবা মোটামুটি রোজগার করতেন, আজ তা অনেকটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে। মা গৃহবধূ। বাড়ির ১ কাকা ৬০ এর দোরগোড়ায় এসেও ১৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিয়ে টুপি, মোজা বিক্রি করেন.. আরেক কাকা ৭০ পেরিয়েছেন, মাস ৬ আগে অবধিও বাজারে প্লাস্টিক বিছিয়ে বারমুডা, মাস্ক বিক্রি করতেন। শরীরের অবস্থার জন্য আজ আর পারেন না। ৭০ পেরোনো কাকার ৫৫ বছর বয়সী স্ত্রী, আমার কাকিমা ঘরে ভাই বোনেদের রেখে আয়ার কাজ করতে যান। রাত্রি, দিন দুই শিফটে। ৬০ পেরোনো কাকার ৫০ ছুঁই ছুঁই কাকিমা বিকেলে রুটি বিক্রি করেন। দুজনেরই ছেলে-মেয়েরা বছর খানেক হল ছোট খাটো কাজ করছে. কিন্তু স্বচ্ছল ভাবে কারোরই চলে না। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক কাঠার সামান্য বেশি জায়গায় একতলা, একদিক প্রায় ভেঙে পড়া একটা বাড়িতে আমরা ১৭ জন সদস্য একসাথে থাকতাম। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর বাবারা চার ভাই মিলে ঠিক করেন বাড়িটা এবার থাকার মত করে করতে হবে। আমার এই দুই কাকা বড় অংকের লোন নিয়ে বাড়ি তৈরীর কাজে নামেন..(যিনি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ৫ বছরের টাকা শোধের চুক্তিতে বাড়ি বানিয়ে দেন), ২০১৯ এ ওই এক কাঠা জায়গাতেই কোনরকমে একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই লোন (রাজমিস্ত্রির টাকা + খুচরো লোন) আজও সেভাবে শোধ হয়নি..বাবা গত ৪৮ বছর ধরে বাইরে কাজ করেন। আজ বাবার বয়স ৭৪ প্রায়। ২২০০ কিলোমিটার ট্রেনে করে যাতায়াত করেন মাস চারেক ছাড়া ছাড়া। যে কোম্পানিতে কাজ করেন তাদের অবস্থা এখন আগের মত নেই.. দিদি একটি বেসরকারি ফার্মে কাজ করে। আমার রোজগার বলতে ফেসবুকের আয়.. তার সঙ্গে কিছু ফ্রি ল্যানসিং লেখালিখি.. কিছু পোর্টালের সাথে কাজ.. আমি কখনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসিনি, প্রাইভেটেও যাইনি.. ব্যবসার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই ছিল..যতদিন না অন্তত একটা ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছি, বাবাকে আজও বলতে পারিনা, তুমি চলে এসো.. এখানে এসে থাকো। কারণ বাবা চলে এলে সংসার বসে যাবে.. মায়ের প্রায় গোটা জীবনটা কেটে গেল বাবাকে ছাড়াই! এসব কথা কখনো বলিনা... আজ বললাম, কারণ তথাকথিত "সর্বহারা"দের চতুর্দিকে যা অবস্থা দেখছি.. তাতে ভিতরে একটা অদ্ভুত বাজে অনুভূতি হয়..। ভালো লাগেনা.. যন্ত্রণা হয়.. রাজনীতি নিজের ভালোর জন্য, নাকি সমাজের ভালোর জন্য? আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি, কোন ভাই-বোনেদের চাকরির জন্য "চিরকুট" জমা দিইনি.. রাত্রিবেলা হয়তো তাই শান্তিতে ঘুমাতে পারি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যতদিন রাজনীতি করব, যেন সমস্ত কালি, সমস্ত দাগ এড়িয়ে চলতে পারি.. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন সত্যি সত্যিই অনুসরণ করে বাকি রাজনৈতিক জীবনটা কাটিয়ে ফেলতে পারি...। আর কখনো যদি গায়ে কালি লাগে, সেদিনই যেন নির্দ্বিধায় মৃত্যু ধেয়ে আসেন আমায় গ্রাস করতে...'
আরও পড়ুন: Satarup Ghosh: 'আমার বাবা কার নামে গাড়ি কিনবেন, কুণাল ঘোষের বাবা তা ঠিক করবেন না'
রাজ্যের বর্তমান শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও তৃণমূল ডিফেন্সিভ মোডে চলে যায়নি। একেবারে চালিয়ে খেলছে। রাজ্যের প্রাক্তন শাসকদল বামেদের বিরুদ্ধে তৃণমূল পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। ঘাস-ফুলের নেতাদের মুখে এখন ঘুরছে 'চিরকুট' প্রসঙ্গ। তৃণমূলের অভিযোগ যে বাম আমলে এই রাজ্যে চিরকুটে লিখে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ এই অভিযোগ তুলেছেন। ফলে 'চিরকুট' নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, তখন দেবাংশুর পোস্টে 'আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি, কোন ভাই-বোনেদের চাকরির জন্য "চিরকুট" জমা দিইনি.. রাত্রিবেলা হয়তো তাই শান্তিতে ঘুমাতে পারি' এই লাইনগুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)