থ্রি চিয়ার্স ফর 'স্বাধীনতা'

পূজা বসু দত্ত

সত্তরতম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হল। ধুম ধাম করে। সকাল থেকে দেশাত্মবোধক গান বিকেলের দিকে বদলে কখনও গণসঙ্গীত, রোমিও বা পাগলু তো, আবার শ্যামাসঙ্গীতও । হাসিখুশি মুখে সবাই নিল স্বাধীনতার মজা। রাস্তাও খালি খালি, ছুটির মুডে বেশ গেল শনি-রবির পর সোমবারের ছুটিটাও।

এদিন আবার ছিল শ্রাবণের শেষ সোমবার। শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালতে তাই হুড়োহুড়িটাই জমিয়ে রেখেছিল রাস্তাঘাট। বাঁশের ছোট ছোট গুমটি করে একটু জিড়িয়ে নিচ্ছিলেন শৈবরা। সঙ্গে একটু ভক্তিগীতি। ডেসিবেলের মাত্রার খেয়াল রাখার বিশেষ প্রয়োজন পড়েনি। কারণ, তারা তো 'স্বাধীন'। মানে বাধা দেওয়ার কেউ কী আছে?

স্বাধীনতা পালনের এই মজা নিতে রাস্তায় বেরিয়ে চাক্ষুশ করলাম নানান ঘটনা। টিভি সাংবাদিক হিসেবে নিজের কেরিয়ার আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ বিশেষ দিনে ছুটিটা খুইয়েছি অনেককাল হল। তবে, কাল ছিল ব্যতিক্রম। চারিদিকের একটা উত্সবের মেজাজে মন চাইল নিজেকেও সামিল করতে। বাড়ির কাছেই শিয়ালদহ স্টেশন। দেখলাম অন্যদিনের তুলনায় কোলে মার্কেটে ভিড় অনেক কম। তাই এই তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম।

অটোয় চড়ে একটু এগোতেই শুনলাম 'পাগলাবাবা'র কথা। কিন্তু পাগলা বাবা কে? কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী? যাঁকে নিয়ে নাকি এইদিনে খুব মাতামাতি হয়। একটু খোঁজ নিয়েই বুঝলাম এটাও শিবের ভক্তদের আখড়া। "বোম' "বোম' বলে এখানেও প্রচুর ভক্তের হিড়িক। তবে, কেউ কিন্তু ফিরবেন না খালি হাতে। জানালেন অটোর সহযাত্রী। কেমন হবে এই ব্যাপারটা। অটো থেকেই তাঁর একটা আইডিয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ওই সহযাত্রীই। রাস্তার ধারে একটা টেবিলে অসংখ্য সরবতের গ্লাস। সরবতের লোভে প্রচুর ভক্তের ভিড়। কেউ সরবত পান করছে, কেউ চেষ্টা করছে। চেষ্টা বললাম কারণ, তার আগেই আকন্ঠ পান করে তারা আর হুঁশে নেই। এমনই এক ব্যক্তি আবার আমার সহযাত্রী। তাকে নিয়ে তো চালকই চিন্তিত। কারণ, কখন অটো থেকে যাত্রী রাস্তায় লুটিয়ে পরে আর দোষ হয় চালকের। ধুর, কী বেরসিক রে বাবা আমার চালক। কারও খানা পিনার স্বাধীনতায় এভাবে চোখ পাকালে হয়!

তবে এই স্বাধীন ভাবনা চিন্তায় কিন্তু আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। অন্তত আমাদের রাস্তা ঘাটের চেহারা তার প্রমাণ। যে যেখানে যা পারছে করছে, ফেলছে। নিজের রাস্তা, নিজেই তো তার ব্যবহার করছি। কার বাপের কী। বাপও হয়ত এই ভেবেই প্রতিদিন রাস্তায় ইয়ে ফেলতে বা ইয়ে করতে দ্বিধা করেন না। ঠিক যেমন গতকাল রাস্তায় তো মঞ্চ বেঁধেই তারস্বরে মাইক বাজিয়ে গানা-নাচা সবই হল। সঙ্গে ছিল দাদাদের হম্বিতম্বি। সকালে তিরঙ্গা আকাশে তুলে নিজেদের স্বাধীন ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রতী হয়েছেন। তাই এইটুকু না করলে তো নয়ই। সবটাই হচ্ছে জনস্বার্থে।

এবার অটো থেকে নেমে গন্তব্যে পৌঁছোবার পালা। প্রথমে কানে ভেসে আসল, শ্যামা সঙ্গীত। সকলই তোমার কর্ম লাইনগুলো ঠিক ঠাক ভাবে শেষ হতে না হতেই তার সঙ্গে মিশে গেল এক হিন্দি গানের কলি। সঙ্গে রাস্তাতেই আনন্দ উদযাপন। একটু টলে যাওয়া পায়ে, হাতে তাল দিতে দিতে ছন্দ মিলিয়ে নাচার আপ্রাণ চেষ্টায় কয়েকজন স্বাধীন যুবক। তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে বেশ ভয় এবং দ্বিধাই বোধ করলাম। পশ্চিমী পোশাকে স্বাধীন আমার রাস্তায় সাবলীল ভাবে চলা ফেরার স্বাধীনতা মনে হল প্রশ্নের মুখে। বুঝলাম সত্তর বছর পেরিয়েছে কিন্তু আমার বা আমাদের স্বাধীনতা পূর্নতা পায়নি। যে দেশের থেকে আমরা ছিনিয়ে নিয়েছিলাম এই মূল্যবান স্বত্তা, তাদের দেশের নারীদের কিন্তু প্রতি পদে এই পরাধীনতার ভয় পেতে হয় না।

যাক মেয়েরা না হয় একটু আপোসই করল, যা যুগ যুগ ধরেই করে এসেছি। তবুও, দেশের এই স্বাধীনতা উত্সব উদযাপনে চিত্কার করে বলতে মন চাইল...থ্রি চিয়ার্স ফর.....হিপ হিপ হুররে.....

English Title: 
three cheers for independence
News Source: 
Home Title: 

থ্রি চিয়ার্স ফর 'স্বাধীনতা'

 থ্রি চিয়ার্স ফর 'স্বাধীনতা'
Yes
Is Blog?: 
No