তারকা প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ তুঙ্গে--ক্ষোভের স্লোগান, `সারা বছর খাটব আমরা, আর ভোটে লড়ার সময় ওরা!`

লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ তুঙ্গে তৃণমূলেরই অন্দরে। টিকিট পাননি কোনও জেলা সভাপতি। এ নিয়ে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন অনেকেই। আবার দলের একাংশ থেকেই উঠে আসছে ভিন্ন তথ্য। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতেই নাকি তৃণমূল নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত।

Updated By: Mar 6, 2014, 05:03 PM IST

লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ তুঙ্গে তৃণমূলেরই অন্দরে। টিকিট পাননি কোনও জেলা সভাপতি। এ নিয়ে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন অনেকেই। আবার দলের একাংশ থেকেই উঠে আসছে ভিন্ন তথ্য। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতেই নাকি তৃণমূল নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত।

প্রার্থীতালিকায় সেলিব্রিটির ছড়াছড়ি। রয়েছেন ফিল্মস্টার থেকে ফুটবলার, শিক্ষাবিদ সকলেই। তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, নাগরিক সমাজকে বার্তা দিতেই নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত। অন্য অংশ তুলছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর,

বীরভূমে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রশংসা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। কিন্তু, অনুব্রতর সুপারিশ অগ্রাহ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রার্থী করলেন তীব্র তৃণমূল বিরোধী শতাব্দী রায়কে। ভারসাম্যের রাজনীতি। বলছেন দলের একাংশ।

মালদহ উত্তরে প্রার্থী স্থির করা নিয়ে সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর তীব্র টানাপোড়েন। তাই, কাউকেই খুশি করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। প্রার্থী হয়েছেন ভূমির গায়ক সৌমিত্র রায়।

ঘাটাল ও মেদিনীপুর কেন্দ্র প্রার্থী বাছাই নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল মুকুল এবং শুভেন্দুর অনুগামীদের মধ্যে। ওই দুই আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছেন সুপারস্টার দেব ও বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে।

আবার বহরমপুর ও বাঁকুড়া আসনটিতে রয়েছে অন্য হিসেব। তৃণমূল সূত্রে খবর বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর শক্তঘাঁটিতে প্রার্থী করে কোনও দলীয় নেতাকে ক্ষুণ্ণ করতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেখানে প্রার্থী গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। একই হিসেবে বাঁকুড়ায় বাসুদেব আচারিয়ার মোকাবিলা করবেন, অভিনেত্রী মুনমুন সেন।

লোকসভা ভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তালিকা দেখে চোখ কপালে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীরও। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় তৃণমূলের লোক কোথায়?
ঘাটালে দীপক অধিকারী। সবাই চেনেন দেব নামে।

ফুটবল মাঠের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিনেমার তাপস পাল, শতাব্দী রায়রা ছিলেন। এবারও আছেন। তার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন দার্জিলিংয়ে ফুটবলার বাইচুং ভূটিয়া, বালুরঘাটে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ, বহরমপুরে সংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, মালদহ উত্তরে সঙ্গীতশিল্পী সৌমিত্র রায়।

প্রার্থী তালিকায় দেখা নেই মাটি কামড়ে রাজনীতি করা কোনও তৃণমূল নেতা বা কর্মীর। বিয়াল্লিশ জনের মধ্যে দশ জন সেলিব্রিটি।
শুধু কি সেলিব্রিটি? অন্য দল ছেড়ে সদ্য আসারাও প্রার্থী তালিকায় দেদার ঠাঁই পেয়েছেন।

যেমন রায়গঞ্জে কংগ্রেস ছেড়ে আসা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি। কংগ্রেস ছেড়ে আসা বিধায়ক সৌমিত্র খান প্রার্থী বিষ্ণুপুরে। রাজ্যসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করা দুই বাম বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল আর আরএসপি-র দশরথ তিরকেও প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম জন বর্ধমান পূর্ব, অন্যজন আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র থেকে।

কংগ্রেস ছেড়ে আসা অজয় দে শান্তিপুর এবং আরএসপি ছেড়ে আসা অনন্তদেব অধিকারী ময়নাগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন।

অর্থাত্ সেলিব্রিটি আর অন্য দল ছেড়ে আসারা মিলেই ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৪ জন। এঁরা ছাড়াও তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আছে এমন অনেক নাম তৃণমূলের প্রত্যক্ষ রাজনীতিক সঙ্গে যাঁদের কোনও যোগ নেই। যেমন,যাদবপুরে হার্ভার্ড ফেরত শিক্ষাবিদ সুগত বসু, জয়নগরে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ গোবিন্দ নস্করের মেয়ে প্রতিমা নস্কর, ঝাড়গ্রামে চিকিত্সক উমা সোরেন, পুরুলিয়ায় চিকিত্সক মৃগাঙ্ক মাহাতো, বর্ধমান-দুর্গাপুরে মন্ত্রী নূরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী মুমতাজ সঙ্ঘমিতা। বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী মতুয়াদের বড়মা বীণাপানি দেবীর বড়ছেলে কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর। আর জেলায় জেলায় দলের সংগঠন সামলানো নেতারা? তৃণমূলের কোনও জেলা সভাপতির কপালেই টিকিটের শিকে ছেঁড়েনি।

.