ভাইফোঁটার উপহার, শোভনের নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিলেন 'দিদি'
ভাইফোঁটার দিন দুপুর ২ টোয় কালীঘাটে পৌঁছন শোভন-বৈশাখী।
কমলিকা সেনগুপ্ত: ভাইফোঁটায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে শোভন-বৈশাখীর আগমনে মিলেছিল একটা ইঙ্গিত। শুক্রবার ভাইফোঁটার উপহার পেলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। আর তাতে আরও স্পষ্ট হল, শোভনবাবুর তৃণমূলে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা।
শুক্রবার শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ওয়াই ক্যাটগরির নিরাপত্তা দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গতবছর তাঁর নিরাপত্তা জেড থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর শোভনবাবু ছেড়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের নিরাপত্তা। সেই নিরাপত্তাই আবার ফিরে পেলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেওয়ায় একটা বিষয় স্পষ্ট, শোভন-মমতা দূরত্ব ঘুচে গিয়েছে।
ভাইফোঁটার দিন দুপুর ২ টোয় কালীঘাটে পৌঁছন শোভন-বৈশাখী। গতবছর নভেম্বরে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর মমতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন প্রাক্তন মেয়র। দু'জনের মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তা হয়নি বলে সূত্রের খবর। মমতার বাড়িতে প্রথমে একটু আড়ষ্টতা ছিল শোভনের। কিন্তু পরে একেবারে পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছেন। সেদিনই একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পুরনো সম্পর্ক জোড়া লেগে গিয়েছে। শোভনের তৃণমূলে ফেরা নিশ্চিত।
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বড় মুখে দলে টেনে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেটা প্রথম থেকে ব্যুমেরাং হয়েছে। শোভন-বৈশাখীকে সামলাতে গিয়ে নাজেহাল দশা হয়েছে বিজেপির। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শোভন তৃণমূলে ফিরলে বিড়ম্বনা বাড়বে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে আর নারদ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে আর আক্রমণ শানাতে পারবে না তারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায় কিন্তু এটা নেহাতই সৌজন্য হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, পরবর্তী কৌশল নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভন তৃণমূলে ফিরলে মুখ পুড়বে মুকুল-দিলীপের। তাঁরাই উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে বরণ করেছিলেন বিজেপিতে। ভেবেছিলেন, তৃণমূলকে মস্ত ধাক্কা দেওয়া যাবে। কিন্তু সেটাই পর্যবসিত হতে চলেছে রাজনৈতিক হারাকিরিতে। বরং শোভন বিজেপিতে ২ মাস থাকায় লাভবান হতে চলেছে তৃণমূল। বিজেপির নারদ হাতিয়ার কার্যত ভোঁতা হয়ে গেল। নারদ নিয়ে বিজেপি সরব হলেই পাল্টা তৃণমূল বলার সুযোগ পেয়ে গেল, নারদ-অভিযুক্তকে তো নিয়েছিল বিজেপিই। বিজেপি থাকলে নারদ অভিযুক্ত কি সাধু হয়ে যাবেন? যেটা সারদাকাণ্ডে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে গেলে একের পর এক পুরসভা দখতে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। এবার শোভনকেও ধরে রাখতে পারল না। ২০২১ সালের আগে জনমানসে তার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়বে। একটা প্রশ্ন তো উঠছেই, লোকসভা ভোটে ১৮টি আসনপ্রাপ্তির পরও বিজেপির সংগঠন পোক্ত হল না? দল ভাঙানোর খেলায় নেমে বিজেপিকে কি হাস্যস্পদ করে তুললেন নেতারা?
আরও পড়ুন- উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে এবার প্রোমোটারির অনুমোদন দিল রাজ্য সরকার