হারিয়ে দিল মিটন, বরফরাজ্যের ঠান্ডা; কিন্তু আবার ফিরব আমা ডাবলামের কাছে

সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

Updated By: Dec 1, 2020, 08:15 PM IST
হারিয়ে দিল মিটন, বরফরাজ্যের ঠান্ডা; কিন্তু আবার ফিরব আমা ডাবলামের কাছে

সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

অভিযানের মাঝপথে অভিযাত্রীর অসুস্থ হয়ে পড়ার চেয়ে খারাপ কিছু হয় না। আমা ডাবলাম শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে আমাকেও সেই পরিস্থিতির শিকার হতে হল। 

২৮ নভেম্বর যখন চূড়ান্ত অভিযানে বেরব তার আগে বিপত্তি। আমার ডাংরির (পর্বতারোহীর পোশাক) জিপার ভেঙে গেল। দু'টি জিপার। অন্যটি ঠান্ডায় লক হয়ে গেল। টানতে গিয়ে ভেঙে গেল। সামিটে যাওয়ার মাত্র 5 ঘণ্টা আগে। তবে কোনও আতঙ্ক ছিল না। শেরপা নিম দর্জির সাহায্যে বুকপকেট জিপটা কেটে মাথায় ব্যবহার করলাম। নিম দর্জি তাঁর ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতায় সুইস টুলকিট দিয়ে জিপের বেস 'লক' করে দিলেন। 

যাই হোক, শুরু হল চলা। কিন্তু আবার বিপত্তি। আমার জুমার যে দড়ি দিয়ে কোমরে বাঁধা ছিল সেটার অবস্থা খুবই সঙ্গিন। ভাবলাম, অভিযান শেষ। নিশ্চয়ই আগের দিন কুখ্যাত হলুদ রক টাওয়ারে ওঠার সময়ে এটা ঘটেছে! তবে ২০-৩০ মিনিট পরে পুরনো বাতিল দড়ি থেকে কিছু মোটা লাইন কেটে স্লিং হিসেবে ব্যবহার করা গেল। যাতে অন্তত আরোহণ চালিয়ে যেতে পারি। উপরে কোথাও এটা ঘটলে সর্বনাশ হতে পারত। 

এ বার আমার যন্ত্রণা শুরু হল গ্লাভস নিয়ে। আমার টেকনিক্য়াল গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত ছিল। অথচ তা আমি নিয়ে যাইনি। ততক্ষণে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকতে শুরু করেছে। আমার আঙুল অসাড় হয়ে গিয়েছে। বড় গ্লাভস (মিটনস) আমার ব্যাগে ছিল। আমি দ্বিতীয় জোড়াও ব্যাক-আপ হিসেবে বহন করছিলাম। তবে সব মিলিয়ে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছিল। আমি উপরের হাম্প পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু পথ ও আবহাওয়া দুই-ই কঠিন। বোল্ডারের ওপর বরফ পড়ছে। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। এই বাতাস থেকে নিজেকে রক্ষা করছি। কিন্তু পারা যাচ্ছে না। ক্রমশ অসাড় হচ্ছে হাত। আঙুল ম্যাসাজ করা শুরু করেছি। কেমিক্যাল হ্যান্ড ওয়ার্মার ব্যবহার করলাম। কাজ হল না। এখনও অনেক দূর যেতে হবে। বড় বড় মিটগুলি পরে নিলাম। কিন্তু তাও আমি উঠতে পারছি না। দ্রুত হিসাব করে দেখলাম ৬ ঘণ্টা লাগবে। উপরের পৌঁছে আঙুলের অবস্থা খারাপ হলে নীচে নামা কঠিন হয়ে পড়বে। ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। অঙ্গহানি হতে পারে। তাই আমি আমার অভিযান শেষ করতে চাইলাম। কেননা, আমার আঙুল আমার কাছে বেশি প্রিয়। অভিযানের জন্য আমি পরেও সময় পাব। নিরাপত্তা প্রথমে। শুরু হল ফিরে চলা। কিন্তু নামতে গিয়ে ভয় লাগল। কঠিন খাঁড়াই পথ। 

তবু আমি  নামতে শুরু করি। প্রচণ্ড মনোযোগ দিয়ে নামতে হচ্ছে। এই ভাবে চার ঘণ্টা নামলাম। ক্যাম্প-২-এর কাছাকাছি। এখানে একটা জায়গায় ডায়াগোনালি নামতে হয়। এর আগে কখনও এভাবে নামিনি। তবু নামতে হল। এবং একটা পয়েন্টে আমি স্লিপ করলাম। নামতে গিয়ে সুইং করল দেহ। ধাক্কা খেলাম পাথরের দেওয়ালে। তবে বেঁচে গেলাম। কিন্তু আর এ ভাবে সম্ভব নয়। আমি হেলিকপ্টার নিতে বাধ্য হলাম। 

হেলিকপ্টার তো ওখানে নামতে পারবে না। হেলিকপ্টার এসে ওপর থেকে দড়ি ফেলে দিল। আমি হেলিকপ্টার থেকে ঝুলন্ত লম্বা দড়িতে উড়ছি। যেন জেমস বন্ড! কিন্তু আমি তো কখনওই এরকম উদ্ধার চাইনি। উদ্ধার হওয়া একজন মাউন্টেনিয়ারের পক্ষে লজ্জাজনক। কিন্তু বলতেই হবে এটা রোমাঞ্চকর ছিল!

এখন ডাক্তার বলেছেন, আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছি। অধিকাংশ আঙুলে অনুভূতি ফিরে এসেছে। আমা ডাবলাম এখনও আমার জন্য একটি দূরবর্তী স্বপ্ন হয়ে রয়ে গেল। কিন্তু একজন পর্বতারোহী হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি এবং এই অভিযান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি!

আরও পড়ুন: মাত্র ১০০ মিটার দূর থেকে ফিরে আসতে হল

.