নতুন স্বাস্থ্যবিল নিয়ে চিকিত্সক মহলে অসন্তোষ
সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন যাবেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তাঁকে তুষ্ট করতে না পারলে, এবার থেকে চিকিত্সকদের জরিমানা গুণতে হবে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত! চিকিত্সকের বেতন থেকে কাটা হবে জরিমানার টাকা।
সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন যাবেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তাঁকে তুষ্ট করতে না পারলে, এবার থেকে চিকিত্সকদের জরিমানা গুণতে হবে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত! চিকিত্সকের বেতন থেকে কাটা হবে জরিমানার টাকা। শুনে তুঘলকি খেয়াল মনে হলেও, নতুন স্বাস্থবিলে এমনই নিয়ম কার্যকর করতে চলেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যবিলের এই ধারা নিয়ে চিকিত্সকমহলে অসন্তোষ দানা বাঁধার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিতর্কিত স্বাস্থ্য বিলের প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একবার ফিরে দেখা যাক, বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজির সেই বিতর্কিত ও বহু চর্চিত ঘটনা। ২৬ মে , ২০১১। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতালের অধিকর্তা শ্যামাপদ গড়াইয়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন মিডিয়ার বড় সংখ্যক প্রতিনিধি। অধিকর্তা শ্যামাপদ গড়াই তাঁকে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা ভিড় হাসপাতালের ভিতরে গেলে রোগীদের অসুবিধা হবে। শ্যামাপদ গড়াইয়ের এই মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। তিনি অধিকর্তাকে পরের দিন মহাকরণে দেখা করতে বলেন। কিন্তু শ্যামাপদ গড়াই জানান, পরের দিন তাঁর বেশ কয়েকটি অপারেশনরয়েছে। তাই তিনি যেতে পারবেন না। পরিবর্তে অন্য কোনও দিন যেতে পারবেন। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজির ওই অধিকর্তাকে সাসপেন্ড করেন।
রাজ্য সরকারের নতুন স্বাস্থ্য বিলের নাম স্বাস্থ্য পরিষেবা দুহাজার এগারো। বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই রাজ্য সরকার নতুন স্বাস্থ্যবিল পেশ করতে চলেছে। তবে বিল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চিকিত্সক মহল!
নতুন স্বাস্থ্য বিলের সাত নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রোগীদের স্বার্থে কোনও জনপ্রতিনিধি সরকারি হাসপাতাল বা সরকারি চিকিত্সাকেন্দ্র পরিদর্শনে যেতেই পারেন। পরিদর্শনের সময় যদি কোনও চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মী জনপ্রতিনিধির প্রতি যথাযথ সম্মান না দেখান, তাহলে সেই চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে ওই জনপ্রতিনিধি মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন তিনি। যদি সেই চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মী দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার সর্বোচ্চ পরিমাণ দশ হাজার টাকা। ওই টাকা দোষী ব্যক্তির বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। বিলের এই ধারাকে ঘিরে চিকিত্সকমহলে অসন্তোষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আশঙ্কা, এই নিয়ম কার্যকর হলে রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা তাঁদের কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। বাড়বে রাজনৈতিক দলের আধিপত্য। তাতে আদতে চিকিত্সা পরিষেবারই ক্ষতি হবে।