প্রাপ্তবয়স্কের বিয়েতে পুলিসের খবরদারি
কুঁদঘাটের পূর্ব পুঁটিয়ারির এই ঘটনা স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে প্রায় আট বছর আগের রিজওয়ানুর মামলাকে। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫-এর এপ্রিল। মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। কিন্তু ক্ষমতার কাছে ভালবাসার হেরে যাওয়ার ছবিটা বোধহয় বদলাল না! পুলিস কর্তার প্রতাপ কি তাহলে এবারও দাবিয়ে দিল হৃদয়কে?
কুঁদঘাটের পূর্ব পুঁটিয়ারির বাসিন্দা বিপ্লব সরকার। নেতাজি নগর কলেজের কমার্স গ্র্যাজুয়েট। সাত মাস আগে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে কলকাতার লোটাস পার্ক এলাকার একটি মেয়ের। প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেয়েটির সঙ্গে বাড়তে থাকে হৃদ্যতা। ঘুরতে যাওয়া, ভ্যালেন্টাইনস ডেতে কার্ড পাঠানো, একসঙ্গে ছবি তোলা, সবই ছিল। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল বিষয়টি বাড়িতে জানাজানি হতেই। বিপ্লবের বাবা পেশায় সরকারি পরিবহণ কর্মী। সাধারণপরিবার। অন্যদিকে, মেয়ের বাবা কলকাতা পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা STF এর ইন্সপেক্টর। সম্পর্ক ঘিরে শুরু হয় টানাপোড়েন।
সাদামাঠা ঘরের এক বেকার যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুতেই মানতে পারেনি মেয়েটির পরিবার। তবু আটকানো যায়নি দুজনকে। গত ৪ এপ্রিল বিকেলে কালীঘাটে গিয়ে তাঁরা একে অপরকে বিয়ে করেন। মেয়ের পরিবারের কেউ বিয়েতে ছিলেন না। ছেলের তরফে উপস্থিত ছিলেন তাঁর পাঁচ বন্ধু। এরপরই দুই পরিবারের টানাপোড়েন সংঘাতের চেহারা নেয়।
মেয়ের খোঁজ না পেয়ে খবর নিতে শুরু করেন পুলিস অফিসার বাবা। অভিযোগ, নবদম্পতির সন্ধান মিলতেই গত ৫ এপ্রিল ভোর চারটে নাগাদ ছেলের পরিবারের ওপর চড়াও হন ওই অফিসার। বিপ্লবকে বেধড়ক পেটানোর পর রিজেন্ট পার্ক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মা ও দিদিকেও রেয়াত করা হয়নি বলে অভিযোগ।
রিজেন্ট পার্ক থানায় বিপ্লব, তাঁর আত্মীয় ও বন্ধু মিলিয়ে মোট ১২জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অপহরণ ও শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করা হয়। নিজে হাতে এফআইআর লেখেন পুলিস অফিসারের মেয়ে। সেখানে বিপ্লবের বিরুদ্ধে জোর খাটিয়ে বিয়ে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছেলের পরিবারের অভিযোগ,জোর করে মেয়েটিকে দিয়ে FIR এর বয়ান লিখিয়ে নিয়েছেন তাঁর বাবা।
এবার আরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার জন্য রিজেন্ট পার্ক থানায় গিয়েছিল বিপ্লবের পরিবার। স্পেশাল টাস্ক ফোর্স- এর ওই পুলিস ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানাতে চান তাঁরা। কিন্তু ডাকসাইটে পুলিস অফিসারের বিরুদ্ধে কে নেবে অভিযোগ? থানার কোন অফিসারের এত দম আছে!
পাঁচদিন পুলিস হেফাজতে থাকার পর এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন বিপ্লব। আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বাবার। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মা ও দিদি। আর যে মেয়ের বিয়ে ঘিরে এত কাণ্ড, তিনি এখন পুরো চুপ।
রিজেন্ট পার্ক থানা থেকে এই মামলা নেতাজি নগর থানায় ট্রান্সফার করা হয়েছে। পুলিস ইন্সপেক্টরের দাবি, ওষুধ মেশানো নরম পানীয় খাইয়ে তাঁর মেয়েকে বিয়ে করেছে বিপ্লব।
পুলিস অফিসার এই অভিযোগ করছেন বটে। কিন্তু তাঁর মেয়ের লেখা তিন পাতার FIR রিপোর্টের কোথাও নরম পানীয় খাওয়ানোর অভিযোগ নেই।
দুজনের বিয়ের যে ছবি মিলেছে, তাতেও মেয়েটির চেহারায় কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি।