কাজের সঙ্গে এবার মায়ের নামের সঙ্গেও জুড়ে গেল কলকাতা
পুজা বসু দত্ত
মেরে পাস মা হ্যায়। চলতি জীবনে, মাকে নিয়ে এর থেকে জনপ্রিয় লাইন আর আছে বলে মনে হয় না। সত্যি, মায়ের থেকে আর কী গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বাড়ি, গাড়ি টাকা, সম্পত্তি কোনও কিছু দিয়েই তার তুলনা হয় না। সন্তানের জন্য তিনি যেমন পৃথিবী তেমনই তিনি তাঁর শেষটুকু সন্তানের জন্য ছেড়ে দিতে পারেন। আত্মত্যাগের কথা মায়ের মুখ থেকেই তো শুনেছি আমরা। মায়ের ভালবাসা কোনদিনও ফুরোয় না। পরিবর্তনশীল জীবনে এই একটি আবেগের পরিবর্তন সম্ভবত হওয়ার নয়।
সেই মা এবার বিশ্বের দরবারে। যাঁর ছোঁয়ায় কলকাতায় সুস্থ হয়েছিল হাজার হাজার কুষ্ঠরোগী। ঘর পেয়েছিল ঘরহারারা। অনাথ পেয়েছিল অভিভাবক। তাঁর মিরাকেল সেই কবে থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলাম আমরা, কলকাতাসাবীরা। জীবে প্রেম। তাই করে দেখিয়েছিলেন কলকাতার মাদার, সেন্ট টেরেসা। তবে জীবে প্রেমের কথা বহু আগেই বলেছিলেন এই শহরেরই এক সাধারণ মানুষ। যাঁকে আমরা ঠাকুরের আসনে বসিয়েছি। তাঁর শিষ্যও বিশ্বজয় করেছেন। তাঁদেরই পথে হেঁটে, সেবায় নিজের জীবন উত্সর্গ করে, বিশ্বের আঙিনায় মাদার।
জন্মে নয়, কর্মেই কলকাতাকে আপন করেছিলেন মাদার। সেবা যত্নে কাটিয়ে দিয়েছিলেন বছরের পর বছর। কাছে টেনে নিয়েছিলেন দুস্থ, অসহায়, দরিদ্র, রোগগ্রস্থদের। তাঁদের জন্যই তাঁর মিশনারিজ ওব চ্যারিটি, নির্মল হৃদয়। এই শহর হয়ে উঠেছিল মাদারের নিজের। শহরও তাঁকে গ্রহণ করেছিল ''মা" হিসেবে। মা তো জাত, ধর্মের উর্দ্ধে। তাই খ্রীষ্টিয় নারীকে মা বলে স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি গোড়া হিন্দু বা কট্টর মুসলমানেরাও। তার প্রমাণ মিলল আজ, চৌঠা সেপ্টেম্বর, মাদারের সেন্ট উত্তীর্ণের দিনে। লাখো মানুষ ভিড়ে, আবেগ উচ্ছ্বাসে ভাসল ভ্যাটিকান সিটি থেকে কলকাতা।
তাঁর বিপুল কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে কলকাতার নাম ইতিহাসের পাতায় তুলেছেন মাদার। এই শহর তাঁর প্রিয়, বারবার বলেছেন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণও করেছেন। আজ, ক্যানোনাইজেশনের মধ্যে দিয়ে, শহরটাকে তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে যেন তাঁর আত্মার শান্তিই কামনা করল ভ্যাটিকান। তিনি এবার থেকে পরিচিত হবেন সেন্ট টেরেসা ওব ক্যালকাটা। এরমধ্যে দিয়েই যেন শুরু হল বাঙালির উত্সব উদযাপন। আর কিছুদিনেই তো আমাদের সেরা পার্বণ। তারই সূচনা হল আজ ভ্যাটিকন থেকে। মা তো সবারই।
কলকাতায় প্রথম হলেও এর আগে এই দেশ পেয়েছে এমন কিছু সন্ত। সেন্ট গোনসালো গ্রেসিয়া ( সেন্টহুড ১৮৬২), সেন্ট জোসেফ ভজ ( সেন্টহুড ২০১৫), সেন্ট অ্যালফানসো ( সেন্টহুড ১৯৮৬), সেন্ট কুরিয়াকোস এসিয়াস খাভারা (সেন্টহুড ২০১৪), সেন্ট ইউফ্রেসিয়া এলুভাথিংলা (সেন্টহুড ২০১৪)।
শুরুতেই বলেছি, মায়ের আসন সবার ওপরে। মায়ের মর্যাদাও তাই চিরকালীন সম্মানে মাথা নোয়ানোর। মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তার থেকেই জন্ম সন্তানের। শিশুর কাছে মায়ের থেকে বড় কি আর কেউ হতে পারে। মা-ই তো সন্তানের ঈশ্বর। তাঁকে তো আলাদা করে সেই আসনে বসাবার প্রয়োজন নেই। যাকে মা বলে ডাকি, সে তো জন্মদাত্রী বা জীবনদায়িনী। সেই তো ঈশ্বরবোধ, ঈশ্বর চেতনা জোগায় আমাদের। তার থেকে জন্ম নিয়েই তো ভাবতে, বুঝতে শিখি আমরা। যাকে একবার "মা" বলে ডেকেছি, মা বলে সম্মান করেছি, আজ তিনিই যখন সন্ত হলেন, সত্যিই কি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা দ্বিগুণ হল? উত্তরে হ্যাঁ হোক বা না,(আজ সব বিতর্ককে থামিয়ে) মা থাকবেন মায়ের স্থানেই। সবার উপরে। সন্তানের জন্য তাঁর থেকে বড় সত্যি আর কিছুই নেই।
আরও পড়ুন বিশ্বের সবথেকে বড় ১০ ব্রিজ