বামেদের পঞ্চায়েত পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্লেষণে রাজ্য নেতারা
পঞ্চায়েতে বামেদের পারফরম্যান্স কেমন? কোন জেলায় ফ্রন্টের কী ফল হল, তার কাটাছেঁড়ায় বসেছে সিপিআইএম। আগামিকাল দলের রাজ্য কমিটির বৈঠক। দলের সব জেলা সম্পাদকদের পঞ্চায়েতে প্রাপ্ত ভোটের হিসেবনিকেশ নিয়ে বৈঠকে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েতে বামেদের পারফরম্যান্স কেমন? কোন জেলায় ফ্রন্টের কী ফল হল, তার কাটাছেঁড়ায় বসেছে সিপিআইএম। আগামিকাল দলের রাজ্য কমিটির বৈঠক। দলের সব জেলা সম্পাদকদের পঞ্চায়েতে প্রাপ্ত ভোটের হিসেবনিকেশ নিয়ে বৈঠকে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকদের প্রত্যেকেই একই কাজে ব্যস্ত। জোর হিসাবনিকাশ চলছে জেলা দফতরগুলিতে। কী বেরিয়ে আসছে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকদের রিপোর্টে? জেলওয়ারি ছবিটা এরকম-
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী
সিপিআইএমের রিপোর্টঅনুযায়ী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বামেরা ভোট পেয়েছে ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। বিধানসভায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বামেরা ভোট পেয়েছিল ৪২ শতাংশ। পঞ্চায়েতে তা কিছুটা কমেছে। ২ শতাংশের কিছু কম। তবে, বামেদের দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বিধানসভার চেয়ে পঞ্চায়েতে ভাল ফল করেছে তারা। কেন এই দাবি? সুজন চক্রবর্তীদের ব্যাখ্যা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮১টি জেলা পরিষদ আসন রয়েছে। সিপিআইএমের অভিযোগ, এরমধ্যে ২৭টি আসনে শাসকদল সন্ত্রাস করেছে। ৫৪টি আসনে অবাধ নির্বাচন হয়েছে। এই ৫৪টি আসনে বামেরা ভোট পেয়েছে ৪৩ শতাংশ। তৃণমূল পেয়েছে ৪২ শতাংশ।
উত্তর ২৪ পরগনা
জেলা সম্পাদক গৌতম দেব
বিধানসভা নির্বাচনের থেকে প্রায় ১ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছেন গৌতম দেবরা। পঞ্চায়েতে উত্তর ২৪ পরগনায় বামেরা ভোট পেয়েছে ৩৯.৭০ শতাংশ। বিধানসভা নির্বাচনে যা ছিল ৩৯ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনার সিপিআইএম নেতাদের দাবি, জেলায় বামেদের ফলাফল আরও ভাল। কেন এই দাবি? গৌতম দেবরা বলছেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৫৭টি জেলা পরিষদ আসন। বামেরা বলছেন, তার মধ্যে ৪১টি আসনে অবাধ নির্বাচন হয়েছে। এই ৩১টি আসনে বামেরা ভোট পেয়েছে ৪৩.১৫ শতাংশ ভোট। আর তৃণমূল পেয়েছে ৪০.৮৩ শতাংশ ভোট।
হাওড়া
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেরা পেয়েছে ৩৮ শতাংশ ভোট। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বামেরা পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ ভোট। তবে, সিপিআইএম নেতাদের দাবি, অবাধ নির্বাচন হলে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট বাড়ত তাদের।
নদিয়া
বিধানসভা ভোটের পর এই জেলায় নতুন করে জমি হারায়নি বামেরা। পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা পেয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট। বিধানসভা ভোটে বামেরা পেয়েছিল ৩৯.০৪ ভোট। নদিয়ার সিপিআইএম নেতাদের বক্তব্য, সন্ত্রাস না হলে পঞ্চায়েত ভোটে ৪৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পেতেন বামেরা।
দক্ষিণবঙ্গে বামেদের ফলাফল বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমাঞ্চলে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে বিধানসভা ভোটের তুলনায় প্রায় দশ শতাংশ ভোট কমেছে বামেদের।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ২০১১ বিধানসভা ভোটে বামেরা পেয়েছিল ৪৪ শতাংশ ভোট। পঞ্চায়েত ভোটে সেটাই একধাক্কায় কমে হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
প্রায় একই অবস্থা বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়াতেও। পশ্চিমাঞ্চলে শুধু খারাপ ফলাফলই না, আরও বেশি চিন্তার কারণ রয়েছে সিপিআইএমের রাজ্য নেতাদের।
ফলাফল এতটা খারাপ হতে পারে, তা টেরই পায়নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বরং, দলের রাজ্য দফতরে কিছুটা উল্টো রিপোর্টই ছিল। যে রিপোর্টের ভিত্তিতে আলিমুদ্দিনের মূল্যায়ন ছিল, রাজ্যে যদি একটি জেলা পরিষদ পায় বামেরা, তাহলে সেটি হবে পুরুলিয়া। কিন্তু, সেই জেলাতেও ব্যাপক ভোট কমেছে বামেদের।
তবে, বামেরা তুলনামূলকভাবে ভাল ফল করেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। যে জেলাগুলি থেকে শাসকদলের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে এই জেলা অন্যতম। তারপরেও পূর্ব মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতে বামেরা ভোট পেয়েছে ৪১ শতাংশ। বিধানসভা নির্বাচনে যা ছিল ৪৩ শতাংশ। পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিআইএম নেতাদের মূল্যায়ন, অবাধ ভোট হলে ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেতেন তারা।
মুর্শিদাবাদ জেলায় বিধানসভার তুলনায় বামেদের ভোট কিছুটা কমেছে। পঞ্চায়েতে বামেরা ভোট পেয়েছে ৩৮ শতাংশ। বিধানসভায় যা ছিল ৪১ শতাংশ। তবে, উত্তরবঙ্গে বামেদের ফলাফল দক্ষিণের তুলনায় কিছুটা ভাল। যে জেলাগুলিতে বামেরা ভাল ফল করেছে তার মধ্যে অন্যতম উত্তর দিনাজপুর। এই জেলায় বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে ভাল ফল করেছে বামেরা। বিধানসভায় বামেরা ভোট পেয়েছিল ৩৯ শতাংশ। পঞ্চায়েতে তা বেড়ে হয়েছে ৪১ শতাংশ।
উল্লেখযোগ্য ছবি, জলপাইগুড়ি জেলায়। সিপিআইএমের হিসাব অনুযায়ী এই জেলায় বামেরা ভোট পেয়েছে ৩৯ শতাংশ। আর ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েই জেলা পরিষদ নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে বামেরা। কংগ্রেস ভোট কাটায় ফয়দা তুলেছে বামেরা।
তবে, কোচবিহারে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বামেরা। বিধানসভার তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ ভোট কমেছে বামেদের। এই জেলায় পঞ্চায়েতে বামেদের ভোট ৩২ শতাংশ।
তবে, এখনও পঞ্চায়েতে প্রাপ্ত ভোটের রিপোর্ট তৈরি করতে পারেনি বর্ধমান, কোচবিহার এবং বীরভূম জেলার সিপিআইএম নেতৃত্ব।