আগামী সপ্তাহ থেকে কলকাতা ও শহরতলিতে কমছে বাস-ট্যাক্সি! বাড়তে পারে সংকট
একেকটি দিন নষ্ট হওয়ার অর্থ অফিসিয়ালি দৈনিক গড়ে ৭৫০টি ইচ্ছুক গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে অপারগ।
অয়ন ঘোষাল
আগামী সোমবার থেকে কলকাতা ও শহরতলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে চলেছে বেসরকারি বাস(Private Bus), মিনিবাস(Mini Bus), হলুদ ট্যাক্সি(Taxi), লাক্সারি ট্যাক্সিস ও অ্যাপ ক্যাবের(App Cab) সংখ্যা। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই সঙ্কট আরও গভীর হতে চলেছে। কারণ, হিসেবে উঠে আসছে নয়া মোটর ভেহিকলস বিধি(Motor Vehicle Act)। ৮ ফেব্রুয়ারি পরিবহণ দফতর তাদের মোটর ভেহিকলস অ্যাক্ট-এ নতুন একটি ধারা যোগ করেছে। সেই ধারা বৃহস্পতিবার থেকে গোটা রাজ্যের সঙ্গে কলকাতা ও লাগোয়া সবকটি মোটর ভেহিকলস অফিসেও লাগু হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে শহরের রাস্তায় নামা যেকোনও গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করাতে হলে, তার গ্যারেজ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এতে প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা নেই। কারণ সমস্ত গাড়ির ক্ষেত্রেই মালিকের বাড়ির বা গ্যারাজের ঠিকানা বা তার বৈধ কাগজ থাকে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছে ট্যাক্সি, বাস সহ সিংহভাগ বাণিজ্যিক গাড়ি। যার বেশিরভাগ দিনের শেষে গ্যারাজ হয় রাস্তার ধারে। অতীতে পারমিট করানোর সময় একবার ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। তারপর একাধিক মালিকানা হাতবদল বা অন্যান্য কারণে এই গাড়িগুলি এই মুহূর্তে ঠিকানাবিহীন।
এতদিন তা নিয়ে সমস্যা হয়নি। তবে এবার বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সমস্যা। পশ্চিমবঙ্গ মোটর ভেহিকলস অ্যাক্ট ১৯৮৯ অনুযায়ী গত ৩৩ বছর ধরে এভাবেই পারমিট ভিত্তিক কাগজপত্র দেখিয়ে এই বানিজ্যিক গাড়ি বা বাসগুলি ফিটনেস সার্টিফিকেট(CF) পেয়ে এসেছে। কিন্তু, নতুন সংশোধনীর পর কাল থেকে একের পর এক গাড়ির ফিটনেস রিনিউ আটকে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে-
ট্যাক্সি, ওলা, উবর, লাক্সারি ট্যাক্সি (দৈনিক গড় ফিটনেস রিনিউ)
বেলতলা ১০০
কসবা ২০০
বেহালা ১০০
আলিপুর ১৫০
সল্টলেক ২০০
অর্থাৎ, একেকটি দিন নষ্ট হওয়ার অর্থ অফিসিয়ালি দৈনিক গড়ে ৭৫০টি ইচ্ছুক গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে অপারগ।
বাস, মিনিবাস
বেলতলা ৩০
কসবা ৫০
বেহালা ২০
আলিপুর ১০
সল্টলেক ২০
অর্থাৎ, ইচ্ছুক ১৩০টি বাস মিনিবাস গতকাল থেকেই আর ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করাতে পারছে না।
আবার ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ না করে রাস্তায় গাড়ি নামালে ২৪ জানুয়ারি থেকে লাগু হওয়া নতুন ট্রাফিক জরিমানা আইনে ১০ হাজার টাকা ফাইন। অর্থাৎ, শাখের করাত। যেতেও কাটছে, আসতেও কাটছে। এই আতান্তরে দৈনিক ৭৫০টি করে গাড়ি ও ১৩০টি করে বাস নতুন করে রাস্তায় নামা বন্ধ হচ্ছে। এমনিতেই লকডাউন এবং নতুন জরিমানা আইনে শহরে যান সঙ্কট। এই সঙ্কট আগামি সোমবার থেকে ভোগাবে মানুষকে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে তা চরম পর্যায়ে যেতে চলেছে বলে মনে করছে বেসরকারি পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি। এনিয়ে পরিবহণ দফতরের প্রধান সচিবকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি গণ পরিবহণের যৌথ ফোরাম। এখনও উত্তর আসেনি।
পূর্ব রেল ঘোষনা করেছে, ধাপে ধাপে আগামি সপ্তাহের মধ্যেই তারা করোনা পূর্ববর্তী স্বাভাবিক টাইম টেবিলে ফিরতে চলেছে। কিন্তু ট্রেন থেকে নামার পর ট্যাক্সি, বাস পেতে গিয়ে নিত্যযাত্রীদের কালঘাম ছুটবে না তো?