Kolkata Corporation: কলকাতায় পার্কিঙে দুর্নীতি ঠেকাতে বড় বদল! জেনে নিন কী করবেন...
পয়লা এপ্রিল থেকে কলকাতা পুরসভা এলাকায় পার্কিং ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এই খাতে পুরসভার ট্রেজারি তখনই ভরে উঠবে, যখন শহরে বেআইনি পার্কিং সিন্ডিকেট বন্ধ করা যাবে। তাই নতুন পার্কিং ফি চালুর পরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে শহরের রাস্তায় নেমে বেআইনি পার্কিংয়ের সুলুক সন্ধান করলেন খোদ পুরসভার পার্কিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। পাশাপাশি গলদ আছে আদায়কারীদের তরফেও। প্রতিটি পার্কিং জোনের আদায় কর্মীদের অটোম্যাটিক স্ক্যান মেশিন দেওয়া হলেও রাসবিহারী এভেনিউয়ের একাধিক আদায়কারী এখনও হাতে লেখা স্লিপ গাড়ির গায়ে বসিয়ে মান্ধাতা আমলের কায়দাতেই ফি আদায় করছেন।
অয়ন ঘোষাল: কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডে দুই চাকা, চার চাকা এবং হেভি ভেহিকল মিলিয়ে লক্ষাধিক গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা আছে। পার্ক স্ট্রিট, নিউ মার্কেট বা হালে গড়ে ওঠা আলিপুর সম্পন্ন মিলিয়ে এই বিপুল সংখ্যক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। শহরের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এক পাশে টানা পার্কিং লাইন আছে। তাও এই শহরের ৩৮ শতাংশ রাস্তা বেআইনি ভাবে দখল করে চলছে পার্কিং সিন্ডিকেট।
পয়লা এপ্রিল থেকে কলকাতা পুরসভা এলাকায় পার্কিং ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এই খাতে পুরসভার ট্রেজারি তখনই ভরে উঠবে, যখন শহরে বেআইনি পার্কিং সিন্ডিকেট বন্ধ করা যাবে। তাই নতুন পার্কিং ফি চালুর পরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে শহরের রাস্তায় নেমে বেআইনি পার্কিংয়ের সুলুক সন্ধান করলেন খোদ পুরসভার পার্কিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।
রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক প্রথম দিনের অভিযান শুরু করলেন নিজের বিধানসভা এলাকা থেকেই। শুরুতেই ধরা পড়ল বেনিয়ম। মহানির্বান মঠের পাশে রয়েছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। সেখানকার গাড়ি প্রায় পুরো ফুটপাত গ্রাস করে নিয়েছে। চিকিৎসক এবং রোগীর পরিবার সেখানে রেখে দিয়েছে যার যার গাড়ি এবং পুরোটাই নিখরচায়। অথচ তার পাশেই, রাসবিহারী এভেনিউতে সেইসময় এই গাড়িগুলি পুরসভার চিহ্নিত পার্কিং জোনে রাখলে নতুন ফি কাঠামোয় গাড়ি পিছু কমপক্ষে দেড়শো থেকে তিনশো টাকা যেত পুরসভার ট্রেজারিতে।
আরও পড়ুন: Sambit Patra: কলকাতায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন, মমতা-রাহুলকে আক্রমণ বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রর
পাশাপাশি গলদ আছে আদায়কারীদের তরফেও। প্রতিটি পার্কিং জোনের আদায় কর্মীদের অটোম্যাটিক স্ক্যান মেশিন দেওয়া হলেও রাসবিহারী এভেনিউয়ের একাধিক আদায়কারী এখনও হাতে লেখা স্লিপ গাড়ির গায়ে বসিয়ে মান্ধাতা আমলের কায়দাতেই ফি আদায় করছেন।
ফলে পার্কিং খাতে দিনের শেষে স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ হিসেব পুরসভার কাছে না পৌছানোর সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। ধাপে ধাপে লাগাতার অভিযানে এই সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে বলে ঘোষনা করেছেন দেবাশিস কুমার। মানবিকতার খাতিরে প্রথম দিন অবশ্য কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: 'খোকাবাবুর ধরনা মঞ্চে মেরেকেটে ৫০-১০০ লোক', অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ দিলীপ ঘোষের
পুরসভা সূত্রের খবর, ৩৮ শতাংশ অবৈধ অথবা বেআইনি পার্কিংয়ের জাল ভাঙতে পারলে শুধু পার্কিং বিভাগের আয় থেকেই নাগরিকদের একাধিক উন্নততর পরিষেবার তহবিল তৈরি হতে পারে পুরসভায়। তাই এবার থেকে নিয়মিত এই অকস্মাত অভিযান চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র পারিষদ।
এর পাশাপাশি পার্কিং ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতি মুক্ত করতে পয়লা এপ্রিল থেকেই নগদে পার্কিং ফি নেওয়ার নিয়ম বন্ধ করেছে পুরসভা। চালু হয়েছে স্মার্ট পার্কিং।
কি এই স্মার্ট পার্কিং?
এই সমস্যার সমাধানে এবার বাধ্যতামূলকভাবে চালু হচ্ছে ‘ই-পস’ সিস্টেম। নগদ টাকায় আর বিল মেটানো যাবে না। সবটাই হবে ডিজিটালি।
গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন গাড়ির চালক। বিপরীত দিকে পার্কিং লটে থাকা এজেন্টের মেশিনেও এই অ্যাপ ডাউনলোড হয়ে থাকবে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে কিংবা তার আশেপাশে কোথায় পার্কিং লট ফাঁকা রয়েছে, তা অ্যাপের মাধ্যমেই দেখতে পারবেন চালক।
পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি রাখার সময় এজেন্টকে দিতে হবে ফোন নম্বর। ‘ই-পস’ মেশিনে সেই ফোন নম্বর দেওয়ার পর জেনারেট হবে পার্কিং স্লিপ। সেখানে কোন সময় গাড়ি ঢুকল, সেই তথ্য থাকবে।
গাড়ি বেরোনোর সময় ফের বিল তৈরি হবে। ‘ই-পস’ মেশিন থেকে বেরোবে স্লিপ। গোটা প্রক্রিয়া কলকাতা পুরসভার সার্ভারে ধরা পড়বে।
কোনও নগদ লেনদেন হবে না। স্লিপ তৈরি হওয়ার পর বারকোড স্ক্যান করে, ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে টাকা মেটাতে হবে। কিংবা মোবাইলে এসএমএস লিঙ্কের মাধ্যমে যে কোনও অনলাইন পেমেন্টস অ্যাপ মারফৎ টাকা মেটানো যাবে।
তবে, অ্যাপ থাকা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু অনলাইনে টাকা মেটানো বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে গাড়ির চালকের কাছে কোনও অনলাইন পেমেন্টস অ্যাপ না থাকলেও হবে। তিনি ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে টাকা মেটাবেন। বা স্মার্ট ফোন থাকলে মালিক কিংবা অন্য কারও নম্বর দেবেন। তার নম্বরে পেমেন্টের এসএমএএস লিঙ্ক যাবে।
ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড কিংবা কিউআরকোড স্ক্যান করে মেটাতে হবে পার্কিং ফি। কলকাতার রাস্তায় পার্কিং লটে এই ডিজিটাল ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করল কলকাতা পুরসভা।
শহরের রাস্তায় পুরসভা অনুমোদিত পার্কিং লটে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ নতুন নয়। পাশাপাশি, বেআইনি পার্কিং নিয়েও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর অভিযোগ।