আধুনিক নারীর মুখ কাদম্বিনী আজ বিস্মৃতির পাতায়

Updated By: Oct 3, 2017, 09:16 PM IST
আধুনিক নারীর মুখ কাদম্বিনী আজ বিস্মৃতির পাতায়

নিজস্ব প্রতিবেদন: এ নারীর স্পর্ধা কম নয়! যে সমাজে পুরষই বরেণ্য। সাহিত্য থেকে বিজ্ঞান যেখানে তাঁদের অবারিত বিচরণ। সেই মহলে একজন নারী জায়গা করে নেবেন, তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু সমাজ কী কয়, তা নিয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর। এই নারী যেটা মনে করতেন, সেই পথেই হাঁটা দিতেন। রাস্তা চড়াই-উতরাই কি দুর্গম, তাঁর কাছে কখনও মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে, তিনি জানতেন, তাঁর এই চলার পথে একজন বন্ধু সবসময় সঙ্গ দেবেন। তিনি হলেন দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। আর এই মহীয়সী, দৃঢ়চেতা নারীর নাম কাদম্বিনী বসু। পরবর্তীকালে দ্বারকানাথের সঙ্গে বিয়ে হয়ে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিতি পান। ভারতের প্রথম গ্র্যাজুয়েট মহিলা কাদম্বিনী দেবীর আজ ৯৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯২৩ সালে এই দিনে ৬৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চন্দ্রমুখী বসুও হলেন ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক

১৮৮২ সালে দেশের প্রথম স্নাতক মহিলা হিসাবে দুই বঙ্গ নারীর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। একজন কাদম্বিনী বসু। আর একজন হলেন চন্দ্রমুখী বসু। শুধু ভারতেই নয়, ব্রিটিশ অধিকৃত সব দেশগুলির মধ্য প্রথম স্নাতক মহিলা তাঁরা। এ সম্মান সত্যি ঈর্ষণীয়! তাঁদের প্রতিভার কাছে তত্কালীন সমাজ মাথানত করলেও সাদরে গ্রহণ করতে পারেনি। সে সময় সমাজের দিকপাল ব্যক্তিদের সঙ্গে এক আসনে এই বঙ্গ নারীর স্থান হবে, তা হজম করতে সময় লেগেছিল। তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়ে প্রতি পদে পদে বিদ্রুপ, তামাসা চলত। কাদম্বিনী যখন ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন সমাজের অনেক ধীমানের কপালে ভাঁজ পড়েছিল। বঙ্গবাসী নামে সে সময়ের একটি জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক মহেশচন্দ্র পাল কাদম্বিনীকে নিয়ে 'অশ্লীল' কার্টুন ছাপান। সেই অলঙ্করণে দেখানো হয়েছিল স্বামী দ্বারকানাথকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছেন কাদম্বিনীদেবী। ডাক্তারি পড়ার পাশাপাশি কখনও সমাজ সংস্কারক হিসাবে তাঁকে দেখা গিয়েছে। কখনও বা তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে নারীদের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর এই সমস্ত পদক্ষেপে দ্বারকানাথের ছিল দরাজ সমর্থন। এটাই সমাজের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল।একজন শিক্ষিতা নারী তাঁর অঙ্গুলিহেলনে চালিত করবে পুরুষসমাজকে! কিন্তু কাদম্বিনীও ছাড়বার পাত্রী ছিলেন না। দ্বারকানাথও এ বিষয়ে ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। সম্পাদক মহেশচন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগে জানিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হন তাঁরা। মামলায়  পরাজয় তো হয়ই, উল্টে মহেশচন্দ্রকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয় আদালত।

কাদম্বিনীর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি করার অনুমতি পাওয়ার পর ওই সময় মহিলাদের একমাত্র হাসপাতাল ডাফরিনে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে মেম ডাক্তাররা অসহযোগিতা করতে থাকেন তাঁকে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যান কাদম্বিনী। শেষে কোনও উপায় না দেখে প্রাইভেটে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। বুঝতে পারেন, দেশি ডিগ্রিতে এই সমাজে ঠাঁই পাওয়া মুশকিল। কাদম্বিনী সিদ্ধান্ত নিলেন বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যাবেন। ১৮৯২ সালে গেলেন বিলেতে। পাঁচ ছেলেমেয়ে এবং স্বামীকে রেখে বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া নিয়েও তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়। সেখান থেকে এলআরসিসি, এলআরসিএস, ওজিএফসিএস উপাধিতে সম্মানিত হন কাদম্বিনী। এর পাশাপাশি ভারতের প্রথম মহিলা বিলেত ফেরত্ ডাক্তার হিসাবে আরও একটি ইতিহাস গড়ে ফেলেন তিনি। দেশে ফিরে সমাজ সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন। পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতি করেন। ১৮৯০ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে ইংরাজিতে বক্তৃতা দেন। বলা যেতে পারে, তিনিই ছিলেন কংগ্রেস অধিবেশনে প্রথম মহিলা বক্তা। যা এখন ইতিহাসের পাতাতেই বিস্মৃতি হয়ে গিয়েছে।  

আরও পড়ুন- দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়: সহজ অভিনয়ের জাদুকর

.