Dilip Ghosh: 'নেতার ট্যাকে পিস্তল; নেতার গাড়িতে বোম; তারপরেও হচ্ছে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’
তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে এই পারিবারিক পার্টি বংশ পরম্পরায় আছে সেখানেই দুর্নীতিতে যুক্ত। সরকারি সম্পত্তি না হলে দেশের কিংবা সাধারণ মানুষের লুট করা। যতগুলো রাজ্যে আছে, সেখানেই ডামাডোল! মন্ত্রীরা জেলে যাচ্ছে। দুর্নীতিটাই তাদের কাছে নীতি’।
অয়ন ঘোষাল: বুধবার সকালে প্রাতঃভ্রমণের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। সেই সময় রাজ্যের বিভিন্নি বিষয়ে সরকার এবং শাসকদলকে আক্রমণ করেন তিনি।
ভাঙ্গড়ে বোমাবাজি তৃণমূল নেতার গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বোমা
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে কারা বোমা ফাটাচ্ছে , কারা সাপ্লাই করছে বোঝাই যাচ্ছে। আমরা যখন অভিযোগ করি তৃণমূলের লোকেরাই বোমার কারখানা করছে; বোমা বিক্রি করছে; বোমা ফাটাচ্ছে। তখন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা আমাদের দিকে আঙ্গুল তোলে! এখন তো পরিষ্কার হয়ে গেল’।
তিনি আরও বলেন, ‘নেতার গাড়ির মধ্যে বোমা নিয়ে ঘুরছে। কিরকম আহাম্মক দেখুন! এটা যদি কোনও কারনে ফাটে গাড়িও তো উড়ে যাবে; মারা যাবে। এত বেপরোয়া হয়ে গেছে, যে জানে নেতার গাড়িতে পুলিস হাত দেবে না। নেতার ট্যাকে পিস্তল; নেতার গাড়িতে বোম; তারপরেও হচ্ছে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’।
পঞ্চায়েত নিয়ে বিজেপি আদালতের দ্বারস্থ হল কিন্তু সেই তো শূন্য হাতে ফিরতে হল?
তিনি বলেন, ‘বিজেপির জন্যই তো সেন্ট্রাল ফোর্সের কথা উঠল। লাঠিধারী পুলিশ চলবে না বলেছে। এটা শুধু বিজেপির নয়। সব বিরোধীদলেরই দাবি। সরকারি কর্মচারীরা এখনও দাবিতে অনড় আছেন যে কেন্দ্রীয় বাহিনী না হলে তারা নির্বাচন করবেন না। তাদের তাদের প্রাণের ঝুঁকি আছে। সেই কথা নিয়েই বিজেপি আদালতে গিয়েছে’।
রাজনীতি বড্ড বেশি আদালত নির্ভর হয়ে পড়ছে না?
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেয় না তখন মানুষ আদালতে যায়। সরকারের উপর মানুষের ভরসা চলে যায় তখন আদালতে যায়। বাংলায় কথায় কথায় আদালত কেন? একটা জনসভা করতে গেলেও পুলিস অনুমতি দেয় না। হাইকোর্টে যেতে হয়। কোনও দেশে শুনেছেন এরকম! এই সরকারের সেই ইচ্ছাও নেই যোগ্যতাও নেই আর মানুষেরও সরকারের উপর বিশ্বাস নেই। শুধু বিজেপি নয় বিরোধীরা নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরাও আদালতে যাচ্ছে ন্যায় পাওয়ার জন্য। সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথার ঠিক নেই; কখন কি বলেন, কখন কি করেন। এখন তো শুধু নেতাদের আর ভাইপোকে বাঁচাতেই তিনি ব্যস্ত! সরকার তো কিছুই করছে না। সরকারি কর্মচারীরা মাসের পর মাস ধরনা দেয়। পরীক্ষায় পাশ করার পরেও চাকরির দাবিতে ধরনা দিতে হয়; হাজারো লোক ধরনা দিচ্ছে। কোন রাজ্যে আছে? কোন সরকারে আছে? এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গে’।
গতবারের তুলনায় কী এবার বেশি মনোনয়ন করবে বিজেপি?
তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত বিজেপি এগিয়ে আছে। এবং সব জায়গায় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। প্রথম দুদিন তো প্রশাসন প্রস্তুতি ছিল না, মনোনয়ন নেওয়ার জন্য। সরকারি কোনও নোটিশ ছিল না; অভিজ্ঞতা নেই। ফর্ম দিতে পারছিল না। ডিসিআর কাটতে পারছিল না। এত স্লো কাজ করছেন সরকারি কর্মীরা, যে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি কালকে সারাদিন মেদিনীপুর ঘুরেছি। ৪২ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা চলে গেছে, ভাবুন সেই অবস্থায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন লোকেরা। মনোনয়ন জমা দিতে। অফিসের মধ্যে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসতে হচ্ছে। কি অব্যবস্থা! কয়েকজন ভিডিও ভালো ব্যবস্থা করেছেন। কি সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন যারা অভিজ্ঞ আর বেশিরভাগ যারা অনভিজ্ঞ এবং নতুন বিডিও সেখানে দেরি হচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেস তো শুরুই করতে পারেনি মনে হয়। আজ ও কাল তারা করবেন। তাদের জন্যই মনে হয় এক্সটেনশন করতে হবে’।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023: 'কোর্ট অর্ডার হাতে আসেনি', বললেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা
তৃনমূলের নেতারা কোথাও জল নিয়ে, কোথাও ওআরএস নিয়ে আপনাদের নমিনেশনে সহায়তা করছে,সৌজন্য দেখাচ্ছে। অভিষেক বলেছিলেন দাঁড়িয়ে থেকে বিরোধীদের নমিনেশন করাবেন, কোথাও কী তারই ফল পাচ্ছেন?
দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ আমাকেও দিয়েছে। কিন্তু নমিনেশন করতে পারছে না ওরা। হয়তো ওদের কাছে ক্যান্ডিডেট নেই। ওরা বলছে অন্য লোকের ক্যান্ডিডেট নেই! তৃণমূলেরই প্রার্থী আছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে আমার! প্রার্থী ঘোষনা এজন্যই করছে না যে, ঘোষনা হলেই মারামারি শুরু হয়ে যাবে’।
ঝালদায় বিজেপি বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতর নামে হুমকি পোস্টার মাওবাদীদের। তৃনমূলে ফিরুন না হলে ৭ দিনের মধ্যে গুলি করে মারব। কী বলবেন?
তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের এসব নাটক। মাঝেমধ্যে ওরা এসব করে পোস্টার ফেলে। আমরা জানি কারা এসব করছে। ওসব নিয়ে ঘাবড়াবার কোনও কারণ নেই’।
প্রধানমন্ত্রীর রেট চার্ট
তিনি জানিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পরিবার হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে রেট চার্ট কি? স্কুলের চাকরির জন্য রেট বাধা আছে। কোঅপারেটিভ চাকরির জন্য রেট বাধা আছে। পরিবহন বলুন, পুলিস বলুন সব জায়গায় রেট বাধা আছে। এর বাইরে চাকরি হয় না। তাই মানুষ চোখ বন্ধ করে টাকা দিয়ে দিয়েছে। এর আগে এসএসসি চেয়ারম্যান বলেছেন ৩৮ হাজার লোকের কাছ থেকে স্কুলের চাকরির জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। কুড়ি হাজার লোকও চাকরি পায়নি। ১৮ হাজার লোক চাকরি পেয়েছে। বুঝতেই পারছেন যিনি সরকারি চাকরির নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি একথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব খবর নিশ্চয়ই আছে; তদন্ত চলছে। সবাই জেনে গেছে! সেটাই উনি বলেছেন। এটা দুর্ভাগ্যের’।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023: 'আইনকে তো আর লঙ্ঘন করতে পারে না'! পঞ্চায়েত-রায়কে স্বাগত শুভেন্দুর
দেশজুড়ে ভাই ভাইপোদের গুরুত্ব
তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে এই পারিবারিক পার্টি বংশ পরম্পরায় আছে সেখানেই দুর্নীতিতে যুক্ত। সরকারি সম্পত্তি না হলে দেশের কিংবা সাধারণ মানুষের লুট করা। যতগুলো রাজ্যে আছে, সেখানেই ডামাডোল! মন্ত্রীরা জেলে যাচ্ছে। দুর্নীতিটাই তাদের কাছে নীতি’।
প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ভিনজেলার নেতাদের সামনে রাখছে তৃণমূল কংগ্রেস
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এখন দেখুন তৃণমূল কংগ্রেসের এখনও প্রার্থী তালিকাই তৈরি হলো না। তাদেরই আদালতে যাওয়া উচিত দুদিন মনোনয়ন বাড়ানোর জন্য। আমরা তো অর্ধেকের বেশি করে ফেলেছি। আজকালের মধ্যে বাকি শেষ হয়ে যাবে। সেজন্য তৃণমূলের ভেতরে নাম এলেই মারামারি। যারা ইতিমধ্যেই মনোনয়ন করেছে পার্টির লোকেরা বলছে ওরা তৃণমূলের লোক নয়। কারা করছে? কি করছে! বোঝাই যাচ্ছে না। আদৌ মনোনয়ন করবে কিনা পার্টি দেখা যাক! নমিনেশন না হলে যুদ্ধ কি করে হবে’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজেন্ট ছিলেন বিধানসভায়। টিকিটই পেলেন না পঞ্চায়েতে শেখ সুফিয়ান নন্দীগ্রামে
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘দেখুন সুফিয়ানকে কি করবে না করবে এটা ওদের পার্টির নিজস্ব ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই’।