ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতে বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান পেশ পুরসভার?
ডেঙ্গি মোকাবিলায় ২৫ দিনে ১২ লক্ষেরও বেশি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন পুরকর্মীরা। একই সময়সীমায় ওই ৮০০ পুরকর্মী পরিদর্শন করেছেন কয়েক হাজার স্কুল এবং নির্মীয়মাণ স্থল। অনন্ত এমনটাই দাবি করা হয়েছে কলকাতা পুরসভার একটি রিপোর্টে।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় ২৫ দিনে ১২ লক্ষেরও বেশি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন পুরকর্মীরা। একই সময়সীমায় ওই ৮০০ পুরকর্মী পরিদর্শন করেছেন কয়েক হাজার স্কুল এবং নির্মীয়মাণ স্থল। অনন্ত এমনটাই দাবি করা হয়েছে কলকাতা পুরসভার একটি রিপোর্টে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিসংখ্যান একেবারেই অবাস্তব। তাহলে প্রশ্ন উঠছে ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতেই কি এমন বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট পেশ করা হল?
ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে কাঠগড়ায় কলকাতা পুরসভা। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও পুরসভার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার ডেঙ্গি মোকাবিলা সংক্রান্ত যে রিপোর্ট পুরসভা দিয়েছে, তা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১২ অগাস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর, এই সময়সীমার মধ্যে ১২ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৩৯ টি বসতবাড়ি পরিদর্শনে গিয়েছেন পুরকর্মীরা। পরিদর্শন করা হয়েছে ৫ হাজার ৫২টি স্কুল এবং ৯ হাজার ৯৭৪ টি নির্মীয়মান স্থান। ১৮ লক্ষ ৯১৯ টি বাড়িতে মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছে বলে দাবি পরসভার। মশা যেখানে ডিম পাড়ে এমন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৯ টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ডেঙ্গির সতর্কতা সংক্রান্ত ৪ হাজার ৩৪৮ টি নোটিস জারি করেছে পুরসভা।
রিপোর্টের দাবি, কলকাতা পুরসভা ১৫ টি বরোর জন্য বরো প্রতি ১০ সদস্যের র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করেছে। তাঁদের সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত সাড়ে ৬০০ কর্মী নিয়োগ করা হয়। পরিসংখ্যান মানলে গত কয়েকদিন ধরে ৮০০ পুরকর্মী প্রায় যুদ্ধকালীন তত্পরতায় ডেঙ্গির মোকাবিলা করেছেন। ভেক্টর কন্ট্রোল অ্যাকটিভিজ সংক্রান্ত ওই দৈনিক রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে টেলিফোনে বিভিন্ন বরো অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে কি পুরকর্মীদের পক্ষে একদিনে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বাড়ি পরিদর্শন করা সম্ভব? বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মতে, দশ সদস্যের একটি দলের পক্ষে দিনে ১০০ টির বেশি বসতবাড়ি পরিদর্শন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে র্যাপিড অ্যাকশন টিমের পক্ষে দিনে ১৫ হাজার এবং রিপোর্টে উল্লেখ করা সময়সীমায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করা সম্ভব। রিপোর্টে যে পরিমাণ কাজের উল্লেখ রয়েছে, তা মোট ৮০০ কর্মীর পক্ষে যে ২৫ দিনে করা সম্ভব নয় তা বোঝাই যাচ্ছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে প্রায় অবাস্তব এই দাবি করছে পুরসভা? তবে কি ডেঙ্গি মোকাবিলায় এযাবত্ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এই বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যানের সাহায্য নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। বলা বাহুল্য ডেঙ্গি নিয়ে যে চাপানউতোর চলছে, তার মাঝে পুরসভার এই রিপোর্ট বিতর্ক আরও উস্কে দিল।