'মা হতে চাই', হাইকোর্টের নির্দেশে বিয়ের ৯ বছর পর স্বামীর সঙ্গ পেতে চলেছেন শিক্ষিকা
একাধিক স্ত্রী বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন গার্গী রায়। প্রত্যেকেই তাঁকে জানান, স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : "পৃথিবীতে এমন কোনও মহিলা নেই, যিনি মা ডাক শুনতে চান না। বলাবাহুল্য সেই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্কুল শিক্ষা দফতরের বাধায় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।" ভরা এজলাসে দাঁড়িয়ে ঠিক এই কথাগুলি-ই বলেন মুর্শিদাবাদের শিক্ষিকা গার্গী রায়। মাদ্রাসা শিক্ষিকার মুখে একথা শোনার পর, মা হওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে মান্যতা দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ৯ বছর বাদে স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। হাইকোর্টের নির্দেশে কোচবিহারে হাইস্কুলে এবার শিক্ষকতা করার সুযোগ পেলেন গার্গী রায়। যারফলে কোচবিহারে স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে থাকার সুযোগ পেলেন গার্গীদেবী।
মুর্শিদাবাদ বেলডাঙ্গা মাদ্রাসা স্কুলে সহ শিক্ষিকা হিসেবে ২০০৩ সালে চাকরিতে যোগদান করেন গার্গী রায়। চাকরিতে যোগদানের ৭ বছর পর, ২০১১ সালে কোচবিহারের বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে গার্গীদেবীর বিয়ে হয়। সেই বছরই রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে বদলি চেয়ে আবেদন করেন গার্গী রায়। কোচবিহার থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ৬৫০ কিলোমিটার। তাই স্কুল করে বাড়ি ফেরা সম্ভব না। আবেদনে সেকথা উল্লেখ করেন গার্গীদেবী। কিন্তু না, আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনও বদলি হয়নি। এখন গার্গীদেবীর স্বামী আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনিও ছুটির অভাবে মুর্শিদাবাদে স্ত্রীর কাছে এসে থাকতে পারতেন না। আদালতকে গার্গীদেবী জানান, এই ভাবেই বিয়ের পর থেকে দীর্ঘ ৯ বছর কেটে যায়। সেই অর্থে স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে থাকার সুযোগ-ই পাননি তিনি। একসঙ্গে থাকাই হয়নি। বদলিকে কেন্দ্র করেই কার্যত শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। দুজনের সঙ্গে দুজনের যোগাযোগ একেবারেই প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গার্গীদেবী জানিয়েছেন, যাতে মা হতে পারেন, সেই বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে একাধিক স্ত্রী বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন তিনি। প্রত্যেকেই তাঁকে জানান, স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তারপরেও বেশ কয়েকবার স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে বদলির আবেদন জানান গার্গী দেবী। কিন্তু অভিযোগ, টানা ৫ বছর ধরে বদলি চেয়ে আবেদন করে গেলেও, স্কুল শিক্ষা দফতর কোনও সাড়া দেয়নি। বার বার আবেদন খারিজ খারিজ করে দেয় দফতর। এদিকে দিনের পর দিন এভাবে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও সন্তানহীনতার জেরে মানসিক অবসাদে পর্যন্ত চলে যান গার্গী দেবী।
অন্য কোনও রাস্তা খোলা না দেখে, নিরুপায় হয়ে ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মাদ্রাসা শিক্ষিকা গার্গী রায়। মামলার শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী আশিষ কুমার চৌধুরী আদালতে জানান, একজন মহিলার মা হতে না পারা কী যন্ত্রণা, তার অনুভব একমাত্র একজন মহিলা অনুভব করতে পারেন। স্বামী বর্তমান হওয়া সত্ত্বেও, বিয়ের ৯ বছরেও তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না। এখন আইন অনুযায়ী একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি কোনও স্কুলে টানা ৫ বছর চাকরি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তিনি স্পেশাল গ্রাউন্ডে বদলির আবেদন করতেই পারেন। একইসঙ্গে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে যদি কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা বদলির আবেদন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী স্কুল শিক্ষা দফতর সেই নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু গার্গীদেবীর ক্ষেত্রে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। কোনও পদক্ষেপ করেনি।
আরও পড়ুন, সিঁথিকাণ্ডে নয়া মোড়, নিখোঁজ থানায় পুলিসের 'মারধরের' একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আশুরা বিবি
এরপরই স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে সংসার করার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে গার্গী রায়ের বদলির নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। স্কুল শিক্ষা দফতরকে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ গার্গী রায়কে বদলি করার জন্য নির্দেশ দেন। বিচারপতির নির্দেশের পরই, তুফানগঞ্জের ইলা দেবী গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষকতার জন্য গার্গী রায়ের বদলির আবেদনে অনুমোদন দিল স্কুল শিক্ষা দফর। প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এখন থেকে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজের জেলাতেই পোস্টিং পাবেন। এই নিয়ম লাগু হবে যাঁরা বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও।