চলে গেলেন বিজন চৌধুরী
প্রয়াত হলেন চিত্রশিল্পী বিজন চৌধুরী। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় প্রথমে তাঁকে উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ৮২ বছর বয়সে সেখানেই থেমে গেল জীবনের রথ।
প্রয়াত হলেন চিত্রশিল্পী বিজন চৌধুরী। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় প্রথমে তাঁকে উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ৮২ বছর বয়সে সেখানেই থেমে গেল জীবনের রথ।
বিজন চৌধুরীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শিল্পী ও সংস্কৃতিমহল। যদিও শিল্পীর শেষ বিদায়লগ্নে দেখা গেল রাজনীতির আমরা-ওরার বিভাজন। দীর্ঘ কয়েক দশক চারুকলা পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন বিজন চৌধুরী। পরিবারের সদস্যরা তাই দেহ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন চারুকলা পর্ষদে। কিন্তু আদ্যন্ত বামপন্থী চিত্রশিল্পীর দেহ চারুকলা পর্ষদে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। ছবি আঁকায় বাঙালির শিল্প ভাবনা জগত্সভায় যাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার মধ্যে উজ্জল নাম বিজন চৌধুরী। সেই নক্ষত্র এবার নিভে গেল। শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মারা গেলেন বিজন চৌধুরী।
১৯৩১ সালে জন্মেছিলেন বিজন চৌধুরী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রং, তুলি, ক্যানভাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলেছিলেন নিজের মনকে। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট থেকে পড়াশোনা। ঢাকার গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন। দেশ-বিদেশ, সর্বত্র সমাদর পেয়েছে তাঁর ছবি। প্যারিসে মিনিয়েচার পেন্টিংয়ের প্রদর্শনী করেছেন। আবার কখনও ভারতীয় মিউজিক হয়ে উঠেছে তাঁর ছবি আঁকার বিষয়। সম্মানও পেয়েছেন অনেক। অবনীন্দ্র পুরস্কার, উইলিয়াম কেরি অ্যাওয়ার্ড। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান। কলকাতা বিমানবন্দর, যুবকেন্দ্র, পোর্ট কমিশনারের কার্যালয়, এই শহরের নানা জায়গায় তাঁর তৈরি ম্যুরাল এখনও শিল্পের গরিমার অভিজ্ঞান হয়ে আছে। আদ্যন্ত বামপন্থী বিজন চৌধুরী ছিলেন সোস্যাইটি অফ কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস্ অ্যান্ড ক্যালকাটা পেন্টার্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উনিশশো বাহাত্তর-তিয়াত্তরের অশান্ত সময়ে তাঁর বালির বাড়ির স্টুডিওতে হামলাও হয়। বিজন চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, তত্কালীন শাকদলের সমর্থকরাই ওই হামলা চালিয়েছিলেন। ঘটনার পরে কলকাতা চলে আসেন তিনি। স্টুডিওয় ভাঙচুরের প্রতিবাদে বীরের প্রত্যাবর্তন নামে ছবির একটা সিরিজ
এঁকেছিলেন। এমন প্রতিবাদী শিল্পীর মৃত্যুতেও থাবা বসাল রাজনীতির আমরা-ওরার বিভাজন। দীর্ঘ কয়েক দশক চারুকলা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন বিজন চৌধুরী। কয়েক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন সেখানে। তাই বাড়ির লোক চেয়েছিলেন, শেষবার সেখানে দেহ নিয়ে যেতে। কিন্তু সরকারের তরফে অনুমতি মেলেনি। এমনকি চারুকলা পর্ষদে দেহ রাখার জন্য শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথাও জানানো হয় পরিবারের তরফে। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর চারুকলা পর্ষদের তরফে কোনও শোকবার্তা বা ফুল পাঠানো হয়নি। ফলে শোকের আবহেও দুঃখজনকভাবে উঁকি দিল রাজনীতির মেরুকরণ। বাংলার খ্যাতকীর্তি চিত্রশিল্পী বিজন চৌধুরীর শেষ বিদায়ের বেলায় এই সরকারি উদাসীনতা কী কাম্য ছিল?