Sanatan Dinda: কলকাতার পুজো থেকে সরে গিয়ে বিস্ফোরক সনাতন দিন্দা!
Sanatan Dinda And Durga Puja: দুর্গাপুজোয় এখন চটুল মনোভাব চলে এসেছে, চটুল শিল্পের চর্চা। প্রতিযোগিতামূলক ব্যাপার। এখন আমাকে এমন একটা জায়গা বেছে নিতে হবে, যেখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দিয়ে আমার কাজকে বিচার করা হবে না!
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'আমার সঙ্গে (দুর্গাপুজোর আসরে) আর দেখা হবে না কারণ আমি আর দুর্গাপুজো করব না!' বলেছেন এ শহরের এমন এক ব্যক্তি যাঁকে ছাড়া গত ২৫ বছর ধরে কলকাতার দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ হয়ে থাকত। পুজোমণ্ডপে তাঁর শিল্প-সুষমা দেখবে বলে রীতিমতো মুখিয়ে থাকে বাঙালি। তিনি দুর্গাপুজো-খ্যাত সনাতন দিন্দা। সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, এ বছর আর দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন না তিনি!
আরও পড়ুন: Ration Dealers' Strike: ৭২ ঘণ্টা রেশন পাবেন না আপনি, কেন জানেন?
সদ্য হয়ে গেল চতুর্থ বেহালা আর্ট ফেস্ট। এটা স্ট্রিট-আর্ট ফেস্টিভ্যাল গোত্রের কলাশিল্পের এক আয়োজন, যার সঙ্গে সনাতন দিন্দা ওতপ্রোত। নিজের শিল্পভাবনা, নিজের কাজ নিয়ে সেখানে হাজির তিনি। এই আর্ট ফেস্টে মূলত থাকছে ইনস্টলেশন, সঙ্গে থাকছে পার্ফরম্যান্স আর্ট ও ফোটোগ্রাফিও। গোটা শিল্প-আয়োজনের থিম ছিল-- Unbound! মুক্ত। এই এগজিবিশনের আহ্বায়কও সনাতন দিন্দা।
মুক্ত শিল্পের এই আসরেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের সূত্রে সনাতনও নিজেকে মেলে ধরেছেন, নিজের ভাবনাকে মুক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: Governor CV Ananda Bose: ডিলিট মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা!রাজ্যপালকে নিশানা শুভেন্দুর
ঠিক কী বলেছেন তিনি?
সাম্প্রতিক দুর্গাপুজো নিয়ে বিরক্ত সনাতন জানান, দুর্গাপুজোয় এখন একটা চটুল মনোভাব চলে এসেছে, চটুল শিল্প চলে এসেছে। একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যাপার। মনে হচ্ছে, আমি আর ওই জায়গাটায় থাকতে পারব না। আমি ওই জায়গায় যেন ঠিক ফিট করছি না। ২৫ বছর তো দুর্গাপুজোর চর্চা করলাম। এ বছর থেকে আর আমি দুর্গাপুজো করব না।
সনাতন আরও জানান, যদি মনে হয় পুজো করব, তবে আমরা এই বেহালায় যেখানে পুজো করি, সেখানেই নিজেরা খিচুড়ি রান্না করব, ঢাকঢোল বাজাব। কিন্তু আমি ওই ভাবে আর কোনও পুজো করব না। মানে, ওই প্রতিযোগিতামূলক পুজো।
সনাতন প্রশ্ন করেন, কেন ওভাবে আর পুজো করব? আমি যখন আমার শিল্প দেখিয়ে এত মানুষকে জোগাড় করতে পেরেছি, যখন কোনও দেবদেবী ছাড়াই আমি আমার শিল্পের প্রতি মানুষকে টানতে পেরেছি, তখন আবার কেন একটা দুর্গাপুজো করতে যাব?
তাছাড়া, শিল্প তো সেকুলারিজমের কথা বলে আর দুর্গাপুজো তো সেকুলার নয়। ওখানে দশ হাতের এক মেয়ে রয়েছে। ওকে নিয়ে আমরা আর ভাবতে পারছি না। আজকে আশপাশে সারা ভারতে সারা পশ্চিমবঙ্গে পুজো হচ্ছে। কিন্তু সেখানে দুর্গার স্থানটা কোথায়? ওর ফিলোজফিটা কোথায়? দুর্গা থাকছে এক কোণে পড়ে, বাকিটায় শিল্প হচ্ছে। দুর্গার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। ওই শিল্প আমি আর করতে চাই না।
গত ২৫ বছর ধরে দুর্গাপুজো করছি। আমি টাকা কামাব বলে কখনও দুর্গাপুজো করিনি। অনেক পুজো কমিটি আমাকে অনেক টাকা দেয়নি। আর অনেক লাঞ্ছনা অপবাদও আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু এরকম একটা মঞ্চে আমি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। এখানে সাককেস-ফেলিওরের কোনও গল্প নেই।
এখন আমাকে এমন একটা জায়গা বেছে নিতে হবে, যেখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দিয়ে আমার কাজকে বিচার করা হবে না। এখানে মানুষ আসছে, শিল্প বুঝছে, আনন্দ পাচ্ছে। এটাই তো বড় কথা। এটার জন্যই তো রাস্তায় নেমেছিলাম, দুর্গাপুজো করতে গেছিলাম। কিন্তু সেখানে পারলাম না। ওখানে এখন আমার অস্তিত্বটা ঠিক কোথায়, সেটাই আমি বুঝতে পারিছি না। ফলে আমি বাধ্য হয়ে আবার এখানে (আমার নিজস্ব শিল্পচর্চায়) ফিরে আসছি।