মস্তানি করবেন না, আমার থেকে বড় মস্তান কেউ নেই, শাসানি আমরি প্রধানের
‘মস্তানি করবেন না। আমার থেকে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।‘ না, কোনও গুন্ডা-মস্তান কিংবা পাড়ার রক গরম করা ছোকরার কথা নয়, নিজের দুধের সন্তানকে হারিয়ে যখন ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা, তখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ঠিক এই ভাষাতেই শাসালেন মুকুন্দপুর আমরির প্রধান জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘মস্তানি করবেন না। আমার থেকে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।‘ না, কোনও গুন্ডা-মস্তান কিংবা পাড়ার রক গরম করা ছোকরার কথা নয়, নিজের দুধের সন্তানকে হারিয়ে যখন ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা, তখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ঠিক এই ভাষাতেই শাসালেন মুকুন্দপুর আমরির প্রধান জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: চিকিত্সায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ কলকাতার ৩ নামি হাসপাতালের বিরুদ্ধে
রবিবার বাড়িতেই জ্বর এসেছিল দু'বছরের ঐত্রেয়ী দে-র। সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মা তাকে ভর্তি করান মুকুন্দপুর আমরিতে। অবস্থা খারাপ হতে থাকে শিশুর, শুরু হয় প্রবল শ্বাসকষ্ট। অভিযোগ, সেই অবস্থাতেও জোটেনি অক্সিজেন। বুধবার সকালে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই খিঁচুনি শুরু হয় ঐত্রেয়ীর। কিছুক্ষণের মধ্যে সব শেষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন শিশুর পরিজনরা। তখন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না শিশুটির মা। জলজ্যান্ত, ফুটফুটে একটি শিশুর এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছিলেন না কেউ। গলার কাছে দলা পাকানো কষ্ট, বুক ঠুকরে বেরিয়ে আসা কান্না, আমরিতে তখন শিশুর পরিজনদের ভিড়।
আরও পড়ুন: মোটরবাইককে বাঁচাতে গিয়ে উল্টে গেল বাস, মৃত ৮
শুধু তাঁরা কথা বলতে চেয়েছিলেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কেন সময়ে মেলেনি অক্সিজেন? তবে পয়সা খরচ করে কেন কেতাদুরস্ত দামি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো? এমনই হাজারো প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছিলেন তাঁরা। বোধ হয় সে সময় কিছুটা চিকিত্সকদের সহমর্মিতার প্রয়োজন ছিল সদ্য সন্তানহারাদের। কিন্তু তা হল না। বরং পুরোটা উল্টো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল তাঁদের। সন্তানহারা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে তখন মুকুন্দপুর আমরি-র প্রধান জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘মস্তানি করবেন না। আমার থেকে বড় মস্তানে এখানে কেউ নেই।‘
আরও পড়ুন: শীতের ব্যালকনিতেই বিবদমান স্বামী-স্ত্রীকে মেলালেন বিচারক!
এরপরই মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি ঐত্রেয়ীর পরিজনরা। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে আমরি। অভিযুক্তের গ্রেফতারের দাবিতে চলে বিক্ষোভ। ততক্ষণে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় জমেছে আরও। জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরে রয়েছেন ঐত্রেয়ীর আত্মীয়রা।
চাপের মুখে অবশ্য শেষমেশ ক্ষমা চান জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়। শুধু ক্ষমাই চান না, কান ধরে ভুল স্বীকার করেন তিনি। তাতে চিঁড়ে না ভিজলেও, কিছুটা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু এত কিছুর পর বাক্যি হারিয়েছেন ঐত্রেয়ীর মা। আমরি থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরতে পারলেন না তিনি, বরং চিকিত্সা ব্যাবস্থা সম্পর্কে নিদারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হল তাঁকে। বারেবারই ঝাপসা হয়ে গিয়েছে তাঁর চোখ। দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছে। ঐত্রেয়ী চলে গিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতার চিকিত্সা পরিষেবা নিয়ে।