BGBS 2023: BGBS-এর চাঁদের হাটে আদানি-হীরানন্দানির অনুপস্থিতি উসকে দিল জল্পনা!
এপ্রিল মাসের সেই দিনে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলার প্রশংসার সুর শোনা যায় গৌতম আদানির মুখে। একই সঙ্গে রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাবও দেন তিনি। ২০২৩-এ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হাসিমুখে অমিত মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে বসলেন আম্বানি।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ২০২২ সালের এপ্রিল মাস। নিউটাউন কনভেনশন সেন্টারে চাঁদের হাট। একের পর এক শিল্পপতির হাত ধরে বাংলায় আসছে বিনিয়োগের ঘোষণা। এর মাঝেই সবার নজর ছিল একজন শিল্পপতির দিকে। তাঁর ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে ছিল গোটা রাজ্যের মানুষ।
এপ্রিল মাসের সেই দিনে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলার প্রশংসার সুর শোনা যায় গৌতম আদানির মুখে। একই সঙ্গে রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাবও দেন তিনি।
২০২২ সালে প্রথমবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেনন আদানি গ্রুপ্র চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ২০ থেকে ২৫ হাজার চাকরি তৈরি কথা ঘোষণা করেন গৌতম আদানি। মঞ্চ থেকেই তিনি জানিয়ে দেন আদানি গ্রুপের সেরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগে।
গোখলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যে 'বাংলা আজ যা ভাবে গোটা দেশ তা কাল ভাবে'। তিনি বলেন যে বাংলার মানুষের আশা পূরণ করতে পারবেন তারা। গৌতম আদানি বলেন পশ্চিমবঙ্গে তারা স্টেট অফ আর্ট ডেটা সেন্টার, সমুদ্রের তলার কেবল, সেন্টার অফ এক্সেলেন্স, ডিজিটাল ইনোভেশন, ফুলফিলমেন্ট সেন্টার, গুদাম এবং লজিস্টিক পাথ সহ আদানি উইলমারের ফরচুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসবেন।
১ বছর পার, ফের এক বাণিজ্য সম্মেলন
কাট টু ২১ নভেম্বর ২০২৩। ফের নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টার। ফের চাঁদের হাট। উপস্থিত ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হাসিমুখে অমিত মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে বসলেন তিনি। ঘোষণা করলেন, 'আগামী ৩ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করব'। বললেন, 'বাংলার উন্নতিতে রিলায়েন্স পাশে থাকবে'।
আদানির ঘোষণার বিপরীতে এবার নজরে ছিল ছোট শিল্প। আদানির মুখে গোখলে থাকলে এবার আম্বানির মুখে ছিল রবি ঠাকুর। তিনি বলেন, 'সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এই সম্মেলনে উপস্থিত হতে পেরে গর্ব অনুভব করছি। এই ভূমি স্বামী বিবেকানন্দের, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। চার বছর আগে এখানে এসেছিলাম। এই চার বছর বাংলায় অনেক উন্নতি হয়েছে'।
চাঁদের গায়ে কালো দাগ! নেই আদানি-হীরানন্দানি
বিজিবিএস-এর মঞ্চেও চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মতোই লেগে রইল একটি দাগ। উপস্থিতির লম্বা তালিকার পাশেই অনুপস্থিতির তালিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এই তালিকায় যে নাম চোখে পড়ার মতো তা হল গতবারের মূল আকর্ষণ গৌতম আদানি এবং নিরঞ্জন হীরানন্দানি।
সাম্প্রতিক অতীতে এই দুই টাইকুনকে কেন্দ্র করে সমস্যায় জড়িয়েছেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
মহুয়া বনাম আদানি, মাঝে দেহাদরি-হীরানন্দানি
সম্প্রতি সংসদে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন মহুয়া মৈত্র। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার পাল্টা অভিযোগ তোলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষার জন্য তাঁর কাছ থেকে টাকা ও উপহার নিয়ে সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে মহুয়া প্রশ্ন তোলেন বলে দাবি করেন বিজেপি সাংসদ।
একইসঙ্গে লোকসভায় ওয়েসবাইটের লগ ইন ক্রেডেসিয়াল হীরানন্দানিকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মহুয়ার বিরুদ্ধে। এর পাশপাশি মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহদরি।
আরও পড়ুন: BGBS | Mamata Banerjee: 'যদি পারেন দেখুন, পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা না পেয়েও আমরা কতটা উন্নতি করেছি'
মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে সিবিআইকে চিঠিও লেখেন দেহদরি। পাল্টা দেহদরিকে আইনি নোটিস পাঠান মহুয়াও। সেখানে বলা হয় হুমকি দিয়ে তাঁকে মেসেজ করেছেন জয়। তাঁর সরকারি বাসভবনে বিনা অনুমতিতে ঢুকেছেন। তাঁর পোষ্য কুকুরটিকে নিয়ে গিয়েছেন।
এই চাপানউতোরের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়া মৈত্রের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবি প্রকাশ হওয়ার পরই মহুয়া প্রশ্ন তোলেন, ওই ছবিতে অন্যান্যদের ছবি ক্রপ করে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ ছবিতে অনন্তও ছিলেন।
অবশেষে
২০১৪ সাল থেকেই বিরোধীদের নিশানায় ব্যবসায়ীরা। বিরোধীরা বার বার অভিযোগ করেছেন যে মোদী সরকারের পিছনে টাকার থলি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আম্বানি এবং আদানি। এর মাঝেই শুরু হয় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের দড়ি টানাটানি। এর পরেও মাঝেই গত বছর বিজিবিএস-এ এসে লগ্নির ঘোষণায় ভাসিয়ে দেন আদানি, যাকে বিভিন্ন সময়ে মোদী ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছে বিরোধীরা।
তবে সাম্প্রতিক অতীতে মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে আদানির সমস্যা এবং এই বছরের বিজিবিএস-এ আম্বানির সেন্টার স্টেজ নেওয়া রাজনৈতিক মহলে তুলে দিয়েছে বহু প্রশ্ন। শুধু প্রশ্নই নয় পাশপাশি এখন বিরোধীদের স্ক্যানারে আদানির ঘোষিত লগ্নিও। কতটা হল বিনিয়োগ, কতজন পেল চাকরি এই নিয়েই এখন প্রশ্ন তুলতে শুরু করছে রাজনৈতিক মহল।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)