আট বছরের ছোট্ট ঋজুকে খুন করেছেন বৌদি, গার্ডেনরিচের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়
খুনের কারণ জিজ্ঞাসা করতেই প্রিয়াঙ্কা পুলিসকে যা জানায়, তা আরও চাঞ্চল্যকর।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বাড়ির সবচেয়ে ছোটো সদস্য। প্রত্যেকের আদরের। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকের ‘নয়নের মণি’। আর সেটাই ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল বৌদির। ছোটো দেওরের প্রতি বাড়ির প্রত্যেকের অত্যাধিক ‘অ্যাটেনশন’ মেনে নিতে পারেননি বৌদি। তুলনায় কম ভালোবাসা হত তাঁর স্বামীকে। আর এই চিন্তা থেকেই খুন করেছেন ছোট্ট আট বছরের দেওরকে। পুলিসের কাছে গিয়ে গোটা ঘটনাটি স্বীকার করে নিলেন বৌদি। গার্ডেন রিচে থানায় আট বছরের শিশু ঋজু দাসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে নেমে স্তম্ভিত পুলিসও।
গত শনিবার গার্ডেনরিচ পাহাড়পুর রোডের বাসিন্দা চার বছরের ঋজু দাসের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বাড়ির বাথরুমে জলের ড্রামের মধ্যে ঋজুর নিথর দেহ খুঁজে পান তার মা। দেহটায় সেসময় আর কোনও স্পন্দন ছিল না। শরীরের বেশির ভাগটাই জলের ড্রামে ডুবে আছে।
আরও পড়ুন: বাড়িতে দরজায় টোকা দিতেই খুলে যায় দরজা, ফাঁকা বাড়িতে মেয়েকে যে অবস্থায় মা দেখলেন
প্রাথমিকভাবে পুলিস মনে করেছিল, খেলার ছলে জলের ড্রামে পড়েই মৃত্যু হয়েছে ঋজুর। কিন্তু মঙ্গলবার এই ঘটনা পুরোপুরি অন্য মোড় নেয়। মেটিয়াবুরুজ থানায় গিয়ে খুনের অভিযোগ স্বীকার করে নেন ঋজুর বৌদি প্রিয়াঙ্কা দাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঋজুর দাদা সুব্রত দাসও।
খুনের কারণ জিজ্ঞাসা করতেই প্রিয়াঙ্কা পুলিসকে যা জানায়, তা আরও চাঞ্চল্যকর। দাদা সুব্রতর সঙ্গে বয়সের অনেকটাই পার্থক্য ঋজুর। তাই ঋজুকে বাড়ির সকলেই খুব ভালোবাসত। সেকারণে প্রিয়াঙ্কার মনে হয়, তাঁর স্বামী সুব্রত তুলনায় ঋজুকেই বেশি ভালোবাসেন তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি। স্থানীয় ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করত ঋজু। সম্প্রতি ভবিষ্যত্ পড়াশোনার খরচ চালাতেই ঋজুর নামে তার বাবা একটি এলআইসি করেছিলেন। আর সেটাই প্রিয়াঙ্কার ঈর্ষাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আর সেই কারণেই মনে মনে ঋজুকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি।
গত শনিবার দুপুরে যখন বাড়ির সকলে ঘুমোচ্ছিলেন, তখনই ঋজুকে জলের ড্রামে ফেলে ওপর থেকে ঢাকনা দিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কা। দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর পর ড্রামের মুখ ফের সরিয়ে দেন। ঋজু মাঝেমধ্যেই ওই জলের ড্রামে নেমে স্নান করত। তাই বাড়ির সকলে যাতে এটা ভাবেন, স্নান করতে নেমেই দুর্ঘটনায় ঋজু মৃত্যু হয়েছে- তার জন্য এই ছক কষেছিলেন বৌদি প্রিয়াঙ্কা। আপাতত বৌদিকে গ্রেফতার করেছে মেটিয়াবুরুজ থানার পুলিস।
ঘটনায় বাকরুদ্ধ ঋজুর পরিবার। কীভাবে একজন মা তাঁর দুই ছেলের প্রতি ভিন্ন ব্যবহার করবেন, কেনইবা ঘরের লোক হয়ে মনের মধ্যে এই ধারণা পুষে রাখলেন প্রিয়াঙ্কা- এইসব সাত পাঁচ ভেবে কিছুই ঠাওর করতে পারছেন না ঋজুর মা। শুধু ছোট্ট ঋজুর ছবিটা বুকের মধ্যে এমন ভাবেই আঁকড়ে ধরে রয়েছেন, যেন পাঁজরভাঙা হৃদয়ে মোলম ‘পার্থিব’ ছবি।