আপনার পোষ্যর গায়ে কি এমন পোকা রয়েছে? সাবধান...

‘টিক’ বা মাকড়ের কামড়ে আর্থারাইটিস, ঘাড়ের পেশির কাঠিন্যে বা ব্যাথা এমনকি মুখের পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে।

Updated By: May 17, 2018, 04:58 PM IST
আপনার পোষ্যর গায়ে কি এমন পোকা রয়েছে? সাবধান...

সুদীপ দে: বাড়িতে একটা পোষ্য থাকলে অবসর সময়টা বেশ ভালই কাটে। শুধু সময় কেন, মনরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক অবসাদ কাটাতেও পোষ্যরা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গ্রামাঞ্চলে অনেকের বাড়িতেই গোরু, ছাগল, হাস, মুরগি দেখা যায়। শহরাঞ্চলেও অনেকের বাড়িতেই কুকুর, বেড়াল পরম যত্নে লালিত-পালিত হচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে পোষ্য রয়েছে, তাঁদের জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত জরুরি।

একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখবেন, কুকুর, বেড়ালের গায়ে ছোট ছোট কালচে লাল রঙের এক ধরনের পোকা হয়। এগুলি কুকুর, গোরু, ছাগল, বেড়াল ইত্যাদির গায়ে পশমের ফাঁকে বাসা বেঁধে এদের শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে বেঁচে থাকে, বংশবিস্তার করে। চামড়ার সঙ্গে (অনেকটা আঁচিলের মতো) এঁটে থাকে বলেই বাংলায় এই পোকা বা কীট ‘এঁটুলি’ নামেই বিশেষ পরিচিত। ইংরেজিতে এই পোকাগুলিকে ‘টিক’ (Tick) বলে। শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে মাকড়। এটি মাকড়শার শ্রেণিভুক্ত একটি কীট। গ্রাম বাংলার কৃষিজীবী মানুষ এই মাকড়ের সঙ্গে ভালভাবেই পরিচিত। আর বাড়িতে পোষা কুকুর-বেড়ালের দৌলতে শহুরে বাসিন্দারাও অনেকেই এই মাকড়ের সাক্ষাত্ পেয়েছেন।

সম্প্রোতি, ‘অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট’-এ এই ‘টিক’ বা মাকড়কে নিয়ে একটি বিশেষ ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তাদের ফেসবুক পেজে। এই ভিডিওর মাধ্যমে সামনে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

১) ১৯৯০-এর শেষের দিক থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মাকড়ের কামড় থেকে ছড়ানো লাইম ডিজিজ (ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ জনিত রোগ)-এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২) এটি কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোনও সমস্যা না হলেও তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন, ত্বকের উপর ক্ষত স্থানটি লালচে হয়ে ফুলে ওঠা, বা গা-হাত-পা ব্যাথা, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি।

৩) এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এই মাকড়ের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।

৪) ‘টিক’ বা মাকড়ের কামড়ে আর্থারাইটিস, ঘাড়ের পেশির কাঠিন্যে বা ব্যাথা এমনকি মুখের পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে।

এ দেশে অবশ্য ‘টিক’ বা মাকড়ের কামড়ে আক্রান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুকুর, গোরু, ছাগল, বেড়ালের মতো লোমশ ঘরোয়া পষ্যরাই। স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগও হতে পারে মাকড়ের কামড়ে। তবে রোয়াঁযুক্ত ফসল যেমন, ঢেঁরস, ভুট্টার চাষের ক্ষেত্রেও এই মাকড়ের দাপটে বিস্তর ক্ষতি হয়।

কোন সময়ে এই ‘টিক’ বা মাকড়ের দাপট বৃদ্ধি পায়?

প্রাণী চিকিত্সক (veterinary doctor) পার্থ গুপ্ত জানান, মূলত বর্ষাকালেই এই মাকড়ের দাপট বৃদ্ধি পায়। এই সময় স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এটির দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে। বর্ষাকালেই কুকুর, বেড়ালের গায়ে এঁটুলি বা মাকড়ের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।

কী ভাবে এই ‘টিক’ বা মাকড়ের প্রকোপ থেকে পোষ্যকে বাঁচাবেন?

পার্থবাবু জানান, বাজারচলতি অনেক অষুধ (খাওয়ার) বা স্প্রে রয়েছে যেগুলির সাহায্যে কুকুর, বেড়ালের গায়ের এঁটুলি বা মাকড় সহজেই তাড়ানো সম্ভব। তবে ঘর অপরিষ্কার থাকলে বা ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে অংশে এই মাকড় বাসা বাঁধতে পারে। ফলে অষুধ বা স্প্রের থেকে ফল মিললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাহলে উপায়!

• বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। বছরে অন্তত দু’বার ‘পেস্ট কন্ট্রোল’ করানো উচিত।

• বাইরে থেকে এসে জামা-কাপড় ভাল করে ঝেড়ে তবে ঘরে ঢুকুন। সম্ভব হলে স্নান করে নিন।

• বাড়ির পোষ্যটিকে সপ্তাহে অন্তত একবার ভালভাবে স্নান করান। বেড়ালের ক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার ড্রাই শ্যাম্পু দিয়ে সারা শরীর ব্রাশ করে দিন।

• প্রতিদিন অন্তত একবার করে আপনার পোষ্যটিকে ভাল করে ব্রাশ করান।

এই নিয়মগুলি মেনে চললে নিজেকে এবং আপনার পোষ্যকে ‘টিক’ বা মাকড়ের হাত থেকে সারা বছর সহজেই বাঁচাতে পারবেন। তবে বর্ষার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। তা সত্ত্বেও মাকড়ের দাপট না কমে, সেক্ষেত্রে নীকটবর্তী প্রাণী চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

.