ছড়া কাটা-কুটি খেলা
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ছড়া লেখার দায়ে গ্রেফতার। হাবড়া-কাণ্ড উস্কে দিয়েছে অম্বিকেশ মহাপাত্রর ঘটনার স্মৃতি। বিরোধী পক্ষকে বিঁধতে দেওয়াল লিখনে ব্যাঙ্গাত্মক ছড়ার চল এ রাজ্যে বহুদিনের পুরোনো। তার জন্য পুলিসের গ্রেফতারি, মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ছড়া লেখার দায়ে গ্রেফতার। হাবড়া-কাণ্ড উস্কে দিয়েছে অম্বিকেশ মহাপাত্রর ঘটনার স্মৃতি। বিরোধী পক্ষকে বিঁধতে দেওয়াল লিখনে ব্যাঙ্গাত্মক ছড়ার চল এ রাজ্যে বহুদিনের পুরোনো। তার জন্য পুলিসের গ্রেফতারি, মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
দক্ষিণ ভারতের মতো বড় বড় কাট আউট নয়। এক চিলতে দেওয়াল। সামান্য একটু রঙ আর খরচ করার মতো বুদ্ধি। ভোটের প্রচারে বিরোধী পক্ষকে বিঁধতে দেওয়ালে ছড়া লেখার
চলটা এ রাজ্যে বেশ পুরনো।
সালটা ১৯৬৯, যুক্তফ্রন্টের আমল। ভোটের আগে দেওয়ালে কংগ্রেসের ছড়া - যুক্তফ্রন্টে কী পেলাম, গুলি-বুলি-লাল সেলাম।
সালটা ১৯৮০। চিকমাগালুরে জিতে ফের ক্ষমতার মসনদে ইন্দিরা গান্ধী। সঞ্জয় গান্ধী তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ। বামফ্রন্ট লিখল, বড়লোকের বেটি লো, সাদা কালো চুল, বাপের কোটে গোঁজা ছিল লাল গোলাপ ফুল। সেই বেটির বেটা লো, পাতলা পাতলা চুল, দেশজুড়ে ফুটিয়ে দিল হলুদ সর্ষেফুল।
১৯৮৯। বফর্স কেলেঙ্কারির পর বামপন্থীদের ভোটের ছড়া তখন লোকের মুখে মুখে - গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।
তহেলকার স্টিং অপারেশনের জেরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে জর্জ ফার্নান্ডেজের ইস্তফার পর ছড়া কাটলেন বামেরা।
দেওয়ালে লেখা হল - নোটন নোটন মন্ত্রীগুলো ঝোটন বেঁধেছে, ওপারেতে জর্জ-জয়া ভেসে উঠেছে। কে দেখেছে?
কে দেখেছে? তহেলকা দেখেছে, তহেলকার হাতে ডট-কম ছিল ছুঁড়ে মেরেছে।
অতীতে ভোটের ছড়া লিখেছেন সলিল চৌধুরী, উতপল দত্তরা। সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে এখনও। ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচন। তৃণমূলের ছড়া -
যেখানে বুদ্ধ সেখানে যুদ্ধ। যেখানে বিমান সেখানে কামান। যেখানে জ্যোতি সেখানে ক্ষতি। বুদ্ধ-মোদী একই নাম, দেখিয়ে দিল নন্দীগ্রাম।
বামেদের দেওয়ালে - দিদিরা যখন ন্যানো তাড়ায় দাদারা যায় সাথে, বেকার যুবক ভোট দেবে না ফুলে কিংবা হাতে। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টকে ছড়ায়-ছবিতে তীব্র ব্যঙ্গে বিঁধল তৃণমূল। এ বারের লোকসভা নির্বাচনেও বঙ্গ রাজনীতির বড় অংশ জুড়ে দেওয়াল লিখন। ছড়া কাটছে শাসক-বিরোধী দু-পক্ষই।
শাসকের ছড়া - সূর্য কাঁদিয়া কহে, বিমান আমার ভাইরে, বুদ্ধকে বলে দিও, বামফ্রন্ট আর নাইরে।
বামেদের পাল্টা - যে বেকারের জ্বলছে পেট, ঘুষ না দিয়ে পায়নি টেট। সেই বেকার দিচ্ছে ডাক, তৃণমূল সরকার নিপাত যাক।
দেওয়ালে ছড়া লেখার দায়ে কেউ কোনওদিন গ্রেফতার হননি। ভোটাররাও এই রসসিক্ত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ পছন্দই করেন। এ বারের ভোটে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটল। হাবরার মছলন্দপুরে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ছড়া লেখার দায়ে তৃণমূলের অভিযোগে গ্রেফতার হতে হল দুই বাম কর্মী সমীর দাস ও অভিজিত হালদারকে। পরে, আদালতের নির্দেশে জামিন পান তাঁরা।
ই-মেলে মুখ্যমন্ত্রীর কার্টুন ফরওয়ার্ড করে গ্রেফতার হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর প্রতিবেশী। হাবরায় দুই বামকর্মীর গ্রেফতারে সেই ঘটনার ছায়া দেখছেন অনেকে।