#zeeclassic দ্য বিমল রায় ফেস্টিভ্যাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি

Updated By: Feb 14, 2016, 01:35 PM IST
#zeeclassic দ্য বিমল রায় ফেস্টিভ্যাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি

বিশ্ববরেন্য পরিচালক বিমল রায়ের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে Zee Classic এর শ্রদ্ধার্ঘ — দ্য বিমল রায় ফেস্টিভ্যাল। উপস্থাপনায় বোমান ইরানি। দেখুন পাঁচটি দুর্মূল্য রত্ন — ‘দো বিঘা জমিন’,     ‘দেবদাস’, ‘মধুমতি’, ‘সুজাতা’ ও ‘বন্দিনী’, পর পর পাঁচ সপ্তাহ ধরে। তাছাড়া রয়েছে বিমল রায়ের উপর একটি তথ্যচিত্র থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ। যাতে স্মৃতিচারণা করবেন ধর্মেন্দ্র, বৈজন্তিমালা, গুলজার ও আশুতোষ গোয়ারেকর। শোনাবেন বিমল রায়ের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। ফেস্টিভ্যাল-এর দ্বিতীয় ছবি শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত অমর কাহিনী 'দেবদাস'।   

দেবদাস

অমর কথাশিল্পী শ্রী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবদাস' সেলুলয়েডে প্রাণ পায় শ্রী বিমল রায়ের দক্ষ পরিচালন প্রয়াসে। পার্বতী ও দেবদাস --- দুই প্রতিবেশী ও বাল্যসাথী। ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত। তালসোনাপুর গ্রামের প্রতিটি গাছগাছালি, পশুপাখি এমনকি  ধুলিকণাও এই অনুরাগের মূক সাক্ষী। এই প্রণয়কে পবিত্র বিবাহের বন্ধনের মধ্য দিয়ে চিরস্থায়ী রূপ দিতে ধারণা চান পার্বতীর বৃদ্ধা ঠাকুমা। দেবদাসের মায়ের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করেন তিনি। কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাড়ায় দেবদাসের জমিদার পিতার পুরাতন ধ্যান ধারণা, মিথ্যা মর্যাদাবোধ ও ধনরাশির অহংকার। তার দ্বারা অপমানিত হয়ে ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ পার্বতীর পিতা প্রতিজ্ঞা করেন যে শীঘ্রই এই অপমানের প্রতিশোধ তিনি নেবেন, কন্যাকে দেবদাসেরও অপেক্ষা ধনী ও প্রতিষ্ঠিত গৃহের গৃহিনী করে। নিজের মানের নিকট দায়বদ্ধ পিতা অসমবয়েসী বৃদ্ধ মানিকপুরের জমিদার চৌধুরী বাবুকে জামাতা রূপে বরণ করবেন বলে মনস্থ করেন। এই সিধান্তে আলোড়িত হয় পার্বতীর মন। সে যে চিরকাল দেবদাসকেই স্বামীরূপে জেনে এসেছে। মানিকপুরের সম্বন্ধের কথা সম্যক জানার পরেও সে কুণ্ঠাহীন ভাষায় প্রিয়সখি মনোরমা কে জানায় যে সে দেবদাসকেই স্বামীরূপে পেতে চলেছে --- এতটাই দৃঢ় তার বিশ্বাস।

যৌবনের দ্বারে উপনিতা পার্বতী সমস্ত লাজ-লজ্জা ভুলে গভীর রাতে অভির্ভুতা হয় দেবদাস এর দ্বারে। নি:সংকোচে স্বীকৃতির দাবি জানায়। দেবদাস এর দ্বারা চিহৃত যে কোনো পথেরই পথচারিনী হতে অঙ্গীকারী হয়।

কিন্ত প্রণয়ের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় দেবদাসের ব্যবহারে। সংকল্পহীনতা ও দৃঢ়তার অভাবে দোলাচালে সে। পরিবারবিরুদ্ধ হতে সে অপারগ। শিক্ষার আলোকপ্রাপ্তি ও পরিণতমনস্কতার সাক্ষর রাখতে সে অক্ষম। পরিবারের কল্পিত অবমাননার কারণ হতে অনিচ্ছুক। স্বাভাভিকভাবেই, চারিত্রিকভাবে দৃঢ়মনস্ক ও অভিমানিনী পার্বতীও নিজের পরিবারের সন্মান রক্ষাকে অপরিহার্য মনে করে। প্রণয়ের মোহজ্বাল ছিন্ন করে জন্ম নেয় চিরসংগ্রামিনী নারী --- পুরুষ ও পরিবারের কল্যাণার্থে যে কখনো সখী, কখনো প্রিয়া, কখনো জায়া, কখনো জননী ও কখনো দুহিতা। শরৎচন্দ্রের লেখনীতে তৎকালীন শৃঙ্খলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে পার্বতীর চরিত্রের এই দ্যুতিময় ব্যঞ্জনা প্রতিটি নারীমনকে আজও করে গর্বিত। ফের প্রমানিত হয় সেই চিরসত্য --- নারী সর্বংসহা, চির কল্যাণময়ী।

দুর্বল, অক্ষম নিষ্ফলতা প্রতিফলিত হয় দেবদাস চরিত্রে। পার্বতীকে স্বীকার করতে ক্ষমতাহীন সে। ব্যর্থ পৌরুষের আস্ফালনে পার্বতীর কপালে এক চিরস্থায়ী ক্ষতচিহ্ন অঙ্কন করেই সে তৃপ্ত। ওই চিহ্নটি তার কাছে তার চিরদাবির প্রতীক।

নিরাশা ও অবক্ষয়ের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় দেবদাস। তার হতাশা সহানুভূতির ঢেউ তোলে চন্দ্রমুখীর মনে। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্না এই নারী আপ্রাণ চেষ্টা করে স্ব্খাত্সলিল নিমজ্জমান দেবদাসকে টেনে তোলার। সাহায্য, সেবা, সাহচর্য, ত্যাগ ও প্রত্যাশাহীন প্রেমের জ্যোতিতে সবাকার মানসপটে চিরগৌরবান্নিতা এই কলঙ্কিতা বারবণিতা।

জীবনযানের দুই প্রান্তে দুই সুদৃঢ় নোঙ্গর পেয়েও অসফল দেবদাস। সামাজিক এই দলিলে যেমন প্রতিবিম্বিত হয় শাশ্বত  প্রেমের মাধুর্য, ঠিক তেমনই তা তুলে ধরে দুর্বলচিত্ত পুরুষের গ্লানিকে --- জীবনতরণীকে সক্ষমভাবে পরিচালনা করতে সে অক্ষম --- সুযোগের অভাবে নয়, দৃঢ়মনস্কতার অভাবে। সব বন্ধন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চাওয়া পার্বতীকে সে অস্বীকার করে, নিস্বার্থ প্রেমে ঝংকৃত চন্দ্রমুখীকে সে ফিরিয়ে দেয়। তার ব্যর্থ জীবন উদ্ভাসিত হয়ে থাকে চন্দ্রমুখীর ত্যাগে ও পার্বতীর তিতিক্ষায়। এই দুই নারীর উদ্বেলিত ও দ্যর্থহীন প্রেমের দীপ্তিময় প্রকাশই শুধুমাত্র সার্থক করে তাকে।

 পরিবারের ভয়ে প্রিয়াকে অস্বীকার করে সে; সেই পরিবারকেই দ্বিধাহীনভাবে ত্যাগ করে; মৃত্যুতে প্রিয়াকে রেখে যায় অজস্র প্রশ্নের সন্মুখীন করে --- দেবদাসের  চরিত্রের এই দোটানা ও অবশম্ভাবী ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি কিছুক্ষেত্রে পাওয়া যায় আজকের যুবসমাজেও। তবে গৌরবের কথা এই যে প্রতিবাদ ও সংগ্রামের পরিচয়ও দিচ্ছে যুবমানস --- পরিণতি পাচ্ছে প্রেম। ত্যাগের সৌন্দর্য, প্রেমের মাধুর্য ও দৃঢ়তার প্রয়োজনীয়তায় তাই চিরকালীন, হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী হয়ে থাকবে 'দেবদাস'।

দেখতে ভুলবেন না। দ্য বিমল রায় ফেস্টিভাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি। সিরিজের দ্বিতীয় ছবি ‘দেবদাস’দেখান হল শনিবার, সন্ধে ৮ টায়, Zee Classic এ।      

-দেবযানী রায়

 

.