এই পাঁচ কারণের জন্য অবশ্যই দেখুন ''প্রাক্তন''
এই প্রথম বাংলা ছবির ব্যবসা তিনদিনে এক কোটি! শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির ছবি প্রাক্তন-এর এটাই এখন জাজ্জ্বল্যমান বর্তমান। কেন প্রাক্তন দেখবেন, কারণ খুঁজছেন ফিল্ম-সমালোচক শর্মিলা মাইতি
১. যে কারণটা আকাশে, বাতাসে। প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণা জুটির প্রত্যাবর্তন। বাণিজ্যের ল্যাবরেটরিতে এখনও তাঁদের কেমিক্যাল রিয়্যাকশন যে যথেষ্টই, সেটার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। কাহিনিতে তাঁদের অভিনয়ের পরিসর যথেষ্টই। ১৪ বছর সময়টাকে একেবারে হাতের মুঠোয় রেখেছেন প্রসেনজিত্। যেদিন ভেসে গেছে চলে, সেই দিনই যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কেমন হয় দুটি মানুষের?
২. দ্বিতীয় নায়ক- কাহিনি। এ ছবির কাহিনি যে একেবারে আনকোরা নতুন, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। যাঁরা ইজাজত দেখেছেন, কিংবা জতুগৃহ, তাঁরা একটু স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হতেই পারেন। মোদ্দা কথা, সব বাঙালির অন্দরেই লুকিয়ে থাকে, ঘুমিয়ে থাকে এমন এক প্রাক্তন। যে কাছে এসে না দাঁড়ালেও মনের বাইশ গজে সবসময়ে প্রতিপক্ষ। কখনও অশ্রুধারায়, কখনও রাগ-রোষে। যেদিন ভেসে গেছে চলে, সেই দিনই যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কেমন হয় দুটি মানুষের? যে-সম্পর্কটা শুরু হয়, আর যেন জীবনে কোনওদিনও তোমার সঙ্গে দেখা না হয়, এই শব্দবন্ধ দিয়ে যে সম্পর্কটার শুরু। ট্রেন-জার্নিতে বাঙালি ফার্স্ট। নানা বয়সের, নানা রঙের মানুষ এক জায়গায়। আছে সদ্যবিবাহিত জুটি মানালি-বিশ্বনাথ, জীবনসায়াহ্নে পৌঁছনো সৌমিত্র-সাবিত্রী থেকে এক ঝাঁক গায়ক, সবারই মধ্যে প্রাক্তন শব্দটা ঘটমান বর্তমান।
৩. শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালক জুটি। বেলাশেষে-র পর দুর্দান্তভাবে প্রত্যাশা তৈরি করা। শীর্ষে পৌঁছনোর পর পায়ের জমি যাতে হড়কে না যায়, সেজন্য আটঘাট বেঁধে তৈরি হওয়া। বাংলা ছবির ইকনমিতে নতুন দিশা যোগ করা। বড় ব্যানার-নির্ভরতা কাটিয়ে উঠে একটা সফল দিগন্ত দেখানোর সাহস। সেই একই প্রোডিউসারের কাঁধে হাত রেখে। নজির গড়ার কারিগর এই দুজন, অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড।
৪. অপরাজিতা আঢ্য। যাকে এতদিন সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে তুলে রাখা হয়েছিল। বাস্তবের দাঁড়টা তাঁরই হাতে ছিল, ভালই বেয়েছেন তিনি। শুরুটায় বেশ চড়া দাগের, পরে সেই চড়া অভিনয়টাকেই দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। এতটাই যে, দর্শকও ট্রেনের সহযাত্রী হয়ে ভাবতে আরম্ভ করেন। সিনেমায় খুব কমই সুযোগ পেয়েছেন টেলিসিরিয়ালখ্যাত এই শক্তিশালী অভিনেত্রী। ক্লাইম্য়াক্সে তাঁর সংলাপে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে মাখনের মতো শ্লেষের ছুরি... কেউ মিস করলে, অনেকটাই মিস করবেন।
৫. কমেডি, গান ও অন্তক্ষরী। সঙ্গে এক দান লুডো। ভয়ানকভাবে বাঙালি এলিমেন্ট, এগুলো বাদ দিলে বাঙালি বিনোদন অচল। জীবনের রেলগাড়িতে এদের না হলে যে চলে না। প্রাক্তন-এ অন্তক্ষরীতে বাঙালি খুঁজে পাবেই তাদের অন্ত্যমিল, পুরনো প্রেম, বয়ে যাওয়া সময়। প্রত্যেক অভিনেতাই তার ভাগীদার, দাবিদার। বিশ্বনাথ ও মানালির অভিনয় এই রিলিফটা দেবেই। মনে রেশ থেকে যাবে অন্ত্যক্ষরীর।
৬. এডিটিং আরও তুখড় হতে পারত। বড় বেশি ঘোরাফেরা করে প্রসেনজিত্ ঋতুপর্ণার দাম্পত্য কলহের উপর। আরও টানটান হতে পারত শেষ দৃশ্য।