সিনেমার বাহুবলী-কে তো চেনেন‚ বাস্তবের বাহুবলী কে ছিলেন জানেন?
ওয়েব ডেস্ক: বড় পর্দার 'বাহুবলী'কে তো সবাই চেনেন। তাঁর শারীরিক বল নিয়েও সন্দেহ নেই। কিন্তু পর্দার বাইরে বাস্তবেও এক বাহুবলী ছিলেন। দুজনের মধ্যে যদিও কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাস্তবের বাহুবলীও কিছু কম বিখ্যাত নন।
বাহুবলী কথার অর্থ হল‚ যে পুরুষের বাহু মহা বলবান। ইতিহাস বই বলছে‚ জৈন ধর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছেন বাহুবলী। তিনি ছিলেন প্রথম তীর্থঙ্কর আদিনাথ বা ঋষভনাথের ছোট ছেলে। বড় ছেলে ছিলেন ভাস্কর চক্রবর্তিন।
কর্নাটকের হাসান জেলার শ্রাবণ বেলগোলায় আছে গোমতেশ্বরের মূর্তি। ইনিই বাহুবলী। ৯৮১ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গা রাজবংশের আমলে তৈরি হয়েছিল এই মোনোলিথ।অর্থাৎ একটা পাথর কেটে সম্পূর্ণ মূর্তি নির্মাণ করা হয়। জৈনদের কাছে এই মূর্তি পুণ্যভূমি।
দিগম্বর সম্প্রদায়ের জৈন সন্ন্যাসীদের লেখা থেকে জানা যায় বাহুবলী সম্পর্কে | ঋষভনাথ ও সুনন্দার পুত্র বাহুবলি ছিলেন সুপণ্ডিত। চিকিৎসা‚ যুদ্ধবিদ্যা‚ রত্নবিদ্যা-সহ শাস্ত্রের একাধিক শাখায় পারদর্শী। তাঁর পুত্রের নাম সোমকীর্তি বা মহাবল।
ঋষভনাথ যখন সন্ন্যাস নিলেন তখন তাঁর শতপুত্রের মধ্যে সমগ্র রাজ্য ভাগ করে দিলেন। ভরত পেলেন অযোধ্যা এবং বাহুবলীর ভাগে পড়ল দক্ষিণের অস্মক রাজ্য।রাজা হয়ে ভরত দিগ্বিজয়ে বের হলেন। বিস্তৃত রাজ্য জয়ের পরে হাত বাড়ালেন বাহুবলীর রাজ্যের দিকেও। তাঁদের বাকি ৯৮ জন ভাই নিজেদের রাজ্য ভরতকে সমর্পণ করে জৈন সাধু হয়ে গেলেন। এদিকে মন্ত্রীরা দেখলেন এবার দুই ভাইয়ের মধ্যে সঙ্ঘাত অনিবার্য । তাঁরা বিচক্ষণতার সঙ্গে একটা পথ বের করলেন ।
রক্তপাত কম করতে মন্ত্রীরা বিধান দিলেন‚ ভরত ও বাহুবলীর মধ্যে তিন রকমের যুদ্ধ হতে হবে। চক্ষুযুদ্ধ‚ জলযুদ্ধ ও মল্লযুদ্ধ । যিনি জয়ী হবেন‚ তিনি রাজ্য পাবেন। সেই তিন সমরেই জয়ী হলেন বাহুবলী
কিন্তু যুদ্ধজয়ের পরে এক অবসাদ গ্রাস করল বাহুবলীকে। তিনি সংসারের প্রতি সব মোহ ও আসক্তি হারালেন। রাজ্য-সম্পদ সব দান করে দিলেন দাদা ভরতকে। এমনকী শেষে ছেড়ে ফেললেন নিজের বস্ত্রটুকুও। জৈন দিগম্বর সাধু হয়ে শুরু করলেন মোক্ষলাভের তপস্যা। কঠোর তপস্যায় লাভ করলেন সিদ্ধি। জৈনদের পরিভাষায় যাকে বলে কেবলজ্ঞান।
সুদীর্ঘ তপস্যা পথে বাহুবলী টানা এক বছর ধরে করেছিলেন কায়োৎসর্গ। এতই তীব্র ছিল মনঃসংযোগ‚ তাঁর দেহের নিম্নাঙ্গ আবৃত হয়েছিল লতাবিতানে। কিন্তু ভঙ্গ হয়নি ধ্যান।লতাগাছে আবৃত হয়ে‚ কীটপতঙ্গের দংশন সহ্য করে বাহুবলী রত থাকলেন তপস্যায়। জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে লাভ করলেন মোক্ষ। প্রসিদ্ধ হলেন গোমতেশ্বর নামে। দক্ষিণ ভারতের একাধিক জায়গায় তাঁর মোনোলিথ মূর্তি আছে।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যে প্রতিবাদী ধর্ম বিকশিত হয়েছিল তার মূল ধারাই ছিল ক্ষত্রিয় রাজন্যদের রাজধর্ম ঐশ্বর্য ত্যাগ করে বৈরাগ্যের পথের পথিক হওয়া। বাহুবলীও তার ব্যতিক্রম নন। রাজ পরিবারের সব সংস্পর্শ ত্যাগ করে নবজন্ম লাভ করলেন সিদ্ধপুরুষ রূপে। বাহুবলী থেকে হলেন গোমতেশ্বর।
আরও পড়ুন- ভালোবেসে আস্ত একটা রেল স্টেশনকে বিয়ে করে বসেছেন এই মহিলা!